• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে ৬ কারনে আঘাত হানতে পারে করোনার তৃতীয় ঢেউ


নিউজ ডেস্ক সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২১, ০৬:৪২ পিএম
দেশে ৬ কারনে আঘাত হানতে পারে করোনার তৃতীয় ঢেউ

ঢাকা : করোনাভাইরাস হ্রাস পাওয়ার কারণে বর্তমানে দেশে সব কিছু খুলে দিয়েছে সরকার। খুলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। শিগগিরই খোলা হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও। 

এদিকে, দেশে সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ও মৃত্যু কমলেও আরেকটি ঢেউ আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। 

প্রতিবেদনে বাংলাদেশে তৃতীয় ঢেউ আঘাত হানার কারণ হিসেবে সম্ভাব্য কয়েকটি বিষয় চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বিশ্ব থেকে করোনাভাইরাস পুরোপুরি নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যাবে।

টিকা ও হার্ড ইমিউনিটি : করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকা দেওয়াকে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি বলে মনে করা হয়। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ মোট জনসংখ্যার বিপরীতে করোনা টিকা দেওয়ার হারে অনেক পিছিয়ে আছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক গোষ্ঠী, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রধানদের নিয়ে গঠিত কোভিড-১৯ টাস্কফোর্সের এক ওয়েবসাইটে এসব তথ্য দেওয়া হয়। এতে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ২.৬১ শতাংশ মানুষকে দুই ডোজ টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। অন্যদিকে জনসংখ্যার অনুপাতে এক ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে ৪.১৮ শতাংশ মানুষকে।

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এই হার একেবারেই যথেষ্ট নয় বলে জানান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ যদি টিকা সংগ্রহে তৎপরতা বাড়াতে না পারে এবং বয়স নির্বিশেষে মোট জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশকে টিকার আওতায় আনতে না পারে, তাহলে তৃতীয় ঢেউ বড় ধরনের ঝুঁকি নিয়ে আঘাত হানবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বেনজির আহমেদ।

লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে শিথিলতা : এদিকে গত মাস থেকে সংক্রমণ হার কমতে শুরু করায় লকডাউন তুলে দেওয়ার পাশাপাশি সব অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞায় কিছু শিথিলতা আনা হয়েছে। এই উদাসীনতা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ করোনাভাইরাসের আরেকটি ঢেউয়ের মুখোমুখি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

ভারত থেকে সংক্রমণের প্রভাব : ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের তিনটি দিকে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে। সেইসঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও চিকিৎসার কারণে দুই দেশে যাতায়াত থাকায়, ভারতে করোনা সংক্রমণের ওঠানামার সঙ্গে বাংলাদেশের সংক্রমণও অনেকটাই প্রভাবিত।

সম্প্রতি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপ ভারত থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হয়। কেননা এই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের আসার পর থেকে বাংলাদেশে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নেয়। এর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে সংক্রমণ ছিল শহরমুখী।

সম্প্রতি ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমে আসায় নিষেধাজ্ঞায় শিথিল করা হলেও গত কয়েকদিন আবার সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে অক্টোবরে আসছে দুর্গা পূজার মৌসুম। এই সময়ে মানুষের অবাধ চলাচলের কারণে দেশটিতে ফের করোনা লাগামহীনভাবে বাড়তে পারে। ফলে বাংলাদেশে তৃতীয় ঢেউ আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে বেনজির আহমেদ বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের ফরমাল, ইনফরমাল যাতায়াত রয়েছে। তাই ওই দেশে যদি করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ আঘাত হানে, সেটা আমাদের এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। তাই ভারতের সংক্রমণ পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে হবে।’

মিউটেশন : করোনাভাইরাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো- এটি টিকে থাকতে অন্যান্য ভাইরাসের মতো প্রতিনিয়ত নিজেকে পরিবর্তন বা মিউটেশন করতে থাকে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ মূলত ভাইরাসের মিউটেশনের কারণে হবে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বেনজির আহমেদ।

এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসের শতাধিক মিউটেশনের কথা জানতে পেরেছেন গবেষকরা। এর মধ্যে চারটি ভ্যারিয়েন্টকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো হলো- আলফা (প্রথম ধরা পড়ে যুক্তরাজ্যে), বেটা (দক্ষিণ আফ্রিকা), গামা (ব্রাজিল) এবং ডেল্টা (ভারত)।

চলতি বছরের এপ্রিলে কাপাকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে উল্লেখ করেছে ডব্লিউএইচও। ভারতের মহারাষ্ট্রে এই ভ্যারিয়েন্টটি শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া নতুন ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্টও বেশ শক্তিশালী রূপে এসেছে। তৃতীয় ঢেউয়ের পেছনে নতুন এই ভ্যারিয়েন্টগুলো বড় কারণ হতে পারে বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

বাংলাদেশের অন্তত এক কোটি মানুষ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন তারা প্রয়োজনে বা ছুটি কাটাতে বাংলাদেশে আসেন এবং বাংলাদেশেও অনেক বিদেশি নাগরিকের যাতায়াত রয়েছে। এই মানুষদের মাধ্যমে বিদেশ থেকে ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়তে পারে জানিয়েছেন বেনজির আহমেদ।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘যত বেশি সংক্রমণের সুযোগ দেওয়া হবে। তত বেশি ভ্যারিয়েন্টের সৃষ্টি হবে। তাই প্রতিরোধের কোনো বিকল্প নেই।’

সিদ্ধান্তে সমন্বয়হীনতা ও দুর্নীতি : বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বারবার সিদ্ধান্ত সংশোধন ও বদল করতে দেখা গেছে। একবার কঠোর লকডাউনের কথা বলে, কয়েকদিন পর থেকেই তা সীমিত আকারে শিথিল করা হয়েছে। ঢাকার বিমানবন্দরে আরটি পিসিআর ল্যাব বসানো নিয়ে জটিলতা সিদ্ধান্তহীনতার একটি উদাহরণ হতে পারে। 

এছাড়া টিকার ভুয়া রিপোর্ট, মাস্ক কেলেঙ্কারি, চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয় ও সংগ্রহে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগও করোনাভাইরাসের মোকাবিলার বিষয়টিকে হুমকির মুখে ফেলছে।

এ ধরনের দুর্নীতি ও বিভিন্ন কর্মসূচিতে দীর্ঘসূত্রিতা ও অদক্ষতা বাংলাদেশকে করোনাভাইরাসের পরবর্তী ঢেউয়ের দিকে ধাবিত করতে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বেনজির আহমেদ বলেন, ‘অনুপযুক্ত লোককে নেতৃত্বের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। … এ জন্য অনুমোদন পেতে, সমন্বয় ও বাস্তবায়নে সমস্যা হচ্ছে।’

চিকিৎসা : চলতি বছরের জুন-জুলাই মাসে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ার পর হাসপাতালগুলোয় রোগীর চাপ দেখা গিয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবারে শয্যা সংখ্যা, আইসিইউ, ভেন্টিলেটর বা অক্সিজেন সরবরাহ, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলাসহ অন্যান্য চিকিৎসা সুবিধা বাড়লেও বড় ধরনের ঢেউ সামাল দিতে তা এখনো যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এছাড়া জনসংখ্যার অনুপাতে হাসপাতালগুলোর ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। স্বাস্থ্য খাতে খালি পদগুলো পূরণে দীর্ঘসূত্রিতা দূর করার ওপর তারা জোর দেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!