• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৯/১১ মার্কিনিরা কি বুঝতে পারছে যে সাম্রাজ্যের খেলা শেষ?


আন্তর্জাতিক ডেস্ক সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১, ০২:৪৯ পিএম
৯/১১ মার্কিনিরা কি বুঝতে পারছে যে সাম্রাজ্যের খেলা শেষ?

ঢাকা : ১১ সেপ্টেম্বর ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে যাওয়া ঘটনার জের এখনো দুনিয়া বয়ে বেড়াচ্ছে। ‘বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ঘটনার পর থেকেই ৯/১১ এর ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্র ষড়যন্ত্র বলে মনে করতে থাকে।

সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেকেই বলতে থাকে, ঘটনাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিপ স্টেট’-এর লোকজন ঘটিয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, জেট ফুয়েলের মাধ্যমে স্টিলের বিম গলিয়ে ফেলা সম্ভব নয়; যার ফলশ্রুতিতে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ১শ’ তলা দুটি ভবন ধসে পড়ে বলা হয়েছিল। এরপর রয়েছে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের কিছু দূরে অবস্থিত ৪৭ তলা ‘৭ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার’-এর ধসে পড়া। ১’শ তলা ভবনগুলো ধসে পড়ার কয়েক ঘণ্টা পর এই ভবনটি ধসে পড়ে। ‘বিবিসি’র তৎকালীন প্রতিনিধি জেইন স্ট্যানলি টেলিভিশনে লাইভ রিপোর্টে বলেন যে, ‘৭ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার’ ধসে পড়েছে। অথচ রিপোর্টারের পেছনে তখনো পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছিল যে, ভবনটি দাঁড়িয়ে আছে।

এ ছাড়াও পেন্টাগন ভবনে বিমান আঘাত হেনেছে বলা হয়; সেখানে তৈরি হওয়া ছোট্ট ফুটো দিয়ে একটি বিমানের পক্ষে যাওয়া সম্ভব ছিল না। অনেকেই সন্দেহ করেছে যে, সেখানে বিমানের স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল। এ ছাড়াও আরও অনেক যুক্তিতর্কের অবতারণা হয় সেদিনের ঘটনাকে ঘিরে। ‘বিবিসি’ তাদের প্রতিবেদনে মার্কিন সরকার এবং রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর বিভিন্ন প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে; যেগুলো এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয় বলে দাবি করা হয়; কিন্তু বাস্তবতা হলো, এখনো মার্কিন জনগণের একটা অংশ রাষ্ট্র এবং মিডিয়ার এই ব্যাখ্যাগুলোকে মেনে নিচ্ছে না। ‘৯/১১ ট্রুথ’ মুভমেন্ট নামে একটি আন্দোলন এখনো সেই ঘটনাগুলোর ব্যাপারে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে পোস্ট দিচ্ছে এবং সত্যিকারের ঘটনা জনগণকে জানাবার জন্য দাবি করছে।

‘ইউএসএ টুডে’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ৯/১১এর ঘটনা পশ্চিমা দুনিয়াকে এক লক্ষ্যে টেনে এনেছিল। কিন্তু এখন কোনোকিছুই তাদেরকে এক রাখতে পারছে না। যে ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সকল দলই একমত তা হলো, যুক্তরাষ্ট্র এখন গুরুত্বপূর্ণ আদর্শের ব্যাপারে পুরোপুরি বিভক্ত। বিশ বছর কেন, দশ বছর আগেও ক্যাপিটল হিলে হামলা চিন্তার বাইরে ছিল। আর এখন মার্কিন এটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ড বলছেন যে, শ্বেতাঙ্গ উগ্রবাদীরা যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্যে সবচাইতে বড় হুমকি। সামাজিক এবং রাজনৈতিক মেরুকরণ এখন ইতিহাসে সবচাইতে মারাত্মক পর্যায়ে রয়েছে। ‘বিবিসি’র উত্তর আমেরিকা সম্পাদক জন সোপেল এক লেখায় বলছেন যে, ৯/১১এর বিশ বছর পূর্তিতে ‘ইউনাইটেড স্টেটস’ এখন ‘ডিজইউনাইটেড স্টেটস’ হয়ে গেছে।

প্রেসিডেন্ট বুশ যুদ্ধ আরম্ভ করলেও পরবর্তী সকল প্রেসিডেন্টই চেয়েছিলেন মার্কিন সেনাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আনতে। তথাকথিত ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’ পশ্চিমা বিশ্বের মাঝে একাত্মতা তৈরি হবার যে আশা জেগেছিল, তা এখন জাতীয়তাবাদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। ওবামা এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সময় থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ‘বিশ্বের পুলিশম্যান’ থাকার ভূমিকা ছেড়ে দিতে চাইছিল।

‘বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’ বলছে যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটেন তার বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রণকে ধরে রাখতে চেষ্টা করেছিল; যেন ভূরাজনৈতিক পরিবর্তন খুব বেশি কিছু একটা ছিল না। ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৭০-এর মাঝে তারা বিশ্বব্যাপী মোট ৩৪টি সামরিক মিশন চালিয়েছিল। একটা বৈশ্বিক শক্তির পক্ষে তার শক্তির অবক্ষয় মেনে নেওয়া কঠিন। যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সরে এসে চীনের দিকে মনোনিবেশ করেছে। কিন্তু চীন তো সোভিয়েত ইউনিয়ন নয়। চীনারা একটি জাতীয়তাবাদী বড় অর্থনৈতিক শক্তি; যারা মার্কিনিদের নিজস্ব উঠানেই বিনিয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকে কমাচ্ছে।  

‘অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস’ বলছে যে, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ফলে রাশিয়া এবং চীন যেমন প্রভাব বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছে, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুরাও বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করছে। ‘বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’ বলছে যে, দুই দশক আগে যুক্তরাষ্ট্র ঠান্ডা যুদ্ধে জয়ের কারণে নেতৃত্বশীল অবস্থানে ছিল। কিন্তু এখন যুক্তরাষ্ট্র অনেকগুলো বড় শক্তির মাঝে একটি। অর্থনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র চীনের সাথে প্রতিযোগিতায় হিমশিম খাচ্ছে; আর ভূরাজনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র এখন একটি অনির্ভরযোগ্য সুপারপাওয়ার। হয়তো ব্রিটিশদের মতোই মার্কিনিরাও বুঝতে পারছে যে, সাম্রাজ্যের খেলা শেষ!

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!