• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
গোসসা নিবারণী পার্ক

চার বছরেও শেষ হয়নি কাজ


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ১৯, ২০২১, ০৪:১১ পিএম
চার বছরেও শেষ হয়নি কাজ

ঢাকা : বাতিল হচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মালিকানাধীন ওসমানী উদ্যানের গোসসা নিবারণী পার্কের কার্যাদেশ। কয়েক দফা সময় ও খরচ বাড়িয়েও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির সামর্থ্যহীনতা ও অপারগতার কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ডিএসসিসি।

২০১৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর শুরু এই প্রকল্পটির ব্যয় ও তিন দফা সময় বাড়ানো হলেও পার্কের কাজের অর্ধেকই শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এদিকে সিটি করপোরেশনের দাবি, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বার বার তাগাদা দেওয়ার পরও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এরই মধ্যে কয়েক দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশানুরূপ অগ্রগতি না থাকায় কাজ বাতিল করা হচ্ছে। এখন দায়-দেনার হিসাবনিকাশ করা হচ্ছে। শিগগির কার্যাদেশ বাতিলের পত্র জারি করা হবে।

জানা যায়, নগরবাসীর অবসাদ ও একঘেয়েমি নিবারণের জন্য ওসমানী উদ্যানে ব্যতিক্রমধর্মী একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ডিএসসিসি। নানা মানসিক সমস্যায় জর্জরিত নাগরিকদের মন ভালো করে দেওয়ার লক্ষ্যে এই পার্কটি নির্মাণের পরিকল্পনা হয়। এর ভেতরে একটি লেকে সারা বছর পানি থাকবে।

আশপাশের এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা এমনভাবে করা হবে, যাতে বর্ষার সময় অতিরিক্ত পানি লেকে চলে আসে। সাউন্ড সিস্টেমে বাজবে হারানো দিনের গান। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এখানে এলে মানুষের রাগ থাকবে না, মন ভালো হয়ে যাবে।

এ ছাড়া পার্কে থাকবে স্বাধীনতা চত্বর, বসার জোন, জিম, শিশু কর্নার, এলইডি টিভি, ওয়াই-ফাই জোন, স্ট্রিট লাইট ও  ওয়াকওয়ে। আর টেবিল টেনিস, বিলিয়ার্ড বোর্ড, ক্রিকেট নেট প্র্যাকটিস সুবিধা পাবেন খেলাধুলায় আগ্রহীরা।

পার্কে ফুড কর্নার, নগর জাদুঘর, পাঠাগার, কার পার্কিং, এটিএম বুথ, ওষুধের দোকান, সিসি ক্যামেরা ইত্যাদি যুক্ত করা হবে। ডিএসসিসি বলছে, এখানে এলেই রাগ চলে যাবে, মন হবে উৎফুল্ল। তাই পার্কটির নাম দেওয়া হয় ‘গোসসা নিবারণী পার্ক’।

রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে ২৯ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত এই উদ্যানটির সংস্কার কাজে প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৫৮ কোটি টাকা। পরে দ্বিতীয় দফায় প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে ৮৯ কোটি টাকা করা হয়। এতে আরো কয়েকটি প্যাকেজ যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। পার্কটির সংস্কার কাজ করছে দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেড। এর মধ্যে বরাদ্দের ৪৫ শতাংশ বিল পরিশোধ করা হয়েছে।

ডিএসসিসি বলছে, এ ধরনের পার্ক বাংলাদেশে এটাই প্রথম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এরই মধ্যে পার্কটি সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। পার্কটি সংস্কারের আগে এটি মাদকসেবীদের আখড়া ও ভবঘুরে মানুষের আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত ছিল। এ কারণে খুব প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মানুষ এই পার্কে প্রবেশ করতেন না। সেই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দিতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছে ডিএসসিসি।

জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৭ জানুয়ারি এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।

সে সময় বলা হয়, পরবর্তী ৯ থেকে ১০ মাসের মধ্যেই এই পার্কের নির্মাণ করা শেষ করা হবে। এই সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকবার নকশায় পরিবর্তন আনা হয়। কিন্তু এরই মধ্যে কয়েক দফায় সময় বাড়ানোর পরেও পার্কের কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত চার বছরে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৬০ শতাংশ। বাকি ৪০ শতাংশ কাজ শেষ করতে হবে আগামী ৮ মাসে।

গত বছরের ১০ জুন সর্বশেষ পার্কটির নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেন ডিএসসিসির বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এ সময় তিনি কাজের অগ্রগতি দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি পার্কটিতে আশপাশের যানজট নিরসনের জন্য পার্কিং ব্যবস্থা রাখার নির্দেশনা দেন।

সরেজমিনে প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পার্কের চারদিকে টিন দিয়ে ঘেরাও। ভেতরে নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। যত্রতত্র পড়ে আছে নির্মাণসামগ্রী। কয়েকটি গাছ মারাও গেছে। নির্মাণাধীন দেয়ালের ভেতরে পানি প্রবেশ করে এডিস মশার কারখানায় পরিণত হয়েছে। পার্কের নিরাপত্তার দায়িত্বেও কাউকে দেখা যায়নি।

এদিকে চার বছরেও পার্কের কাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা। তারা বলছেন, সিটি করপোরেশন নাগরিকদের বোকা বানিয়ে দিন পার করে দিতে চায়। নয় মাসে শেষ হওয়ার কথা সেখানে চার বছরেও শেষ না হওয়ায় কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

এই পার্কের নকশা তৈরি ও নির্মাণ কাজে শুরু থেকে যুক্ত ছিল স্থপতি রফিক আজমের প্রতিষ্ঠান ‘সাতত’। তিনিও পার্কের কাজের অগ্রগতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের বিষয়ে আরো অনেক আগেই আমি তাগাদা দিয়েছি। কাজ আরো দ্রুত করা উচিত।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, এমনিতেই রাজধানীতে উন্মুক্ত খেলার মাঠের অভাব। উন্নয়নের নামে একটি পার্ককে বছরের পর বছর ফেলে রাখা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কেন নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি সেজন্য তাকে শাস্তির মুখোমুখি করা উচিত। এরপর দ্রুত পার্কের নির্মাণ কাজ শেষ করে খুলে দেওয়া উচিত।

ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর সার্কেল) মুন্সি মো. আবুল হাসেমজানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশের শর্ত অনুযায়ী কাজ শেষ করতে পারেনি। এখন কার্যাদেশটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কী পরিমাণ কাজ শেষ হয়েছে বা তারা কত টাকা পাওনা রয়েছে সেসব বিষয়ে হিসাব চলছে। হিসাব চূড়ান্ত হলে কার্যাদেশ বাতিল করে চিঠি ইস্যু করা হবে। এর পর নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী জুন পর্যন্ত সময় রয়েছে। এর মধ্যে পার্কের বাকি কাজ শেষ করার চেষ্টা করব। এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!