• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ডিসিদের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের যে নির্দেশনা দিল সরকার


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২১, ২০২২, ১২:২৬ পিএম
ডিসিদের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের যে নির্দেশনা দিল সরকার

ঢাকা : সরকার ও প্রশাসনের শীর্ষপর্যায়ের নানা দিকনির্দেশনার মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) শেষ হলো তিন দিনের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন।

এবারের সম্মেলনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে মাঠ প্রশাসনকে আরও বেশি ভূমিকা রাখার আহ্বান জনানো হয়েছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে জনগণের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিতের আহ্বান এসেছে সরকারের শীর্ষমহল থেকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও অপপ্রচার রোধে ডিসিদের সজাগ থাকতে বলা হয়েছে।

সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধে তাদের চোখ-কান খোলা রেখে জেলার পুলিশ সুপারদের (এসপি) সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া কালোবাজারি ও মানবপাচারকারীদের দৌরাত্ম্য বন্ধে ডিসিদের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে কঠোর হতে বলেছে সরকার। সম্মেলনে অংশ নেওয়া কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

মাঠ প্রশাসনকে আরও সক্রিয় ও জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে সম্মেলনে ২৪টি নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কর্মকর্তাদের জনগণের খাদেম হিসেবে থাকতে বলেছেন তিনি। ডিসিরাও মাঠ প্রশাসনকে আরও সক্রিয় ও বেগবান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এবার সম্মেলনে ডিসিরা ২৬৪টি প্রস্তাব দিলেও এগুলোর বেশিরভাগেই সায় দেয়নি সরকার। যেসব প্রস্তাব বেশি জনগুরুত্বপূর্ণ সেগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়-বিভাগ।

একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রতিবছরই ডিসি সম্মেলনে সরকারের তরফ থেকে ডিসিদের প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দেওয়া হয়; কিন্তু শেষ পর্যন্ত অল্প প্রস্তাবই বাস্তবায়ন হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আয়োজনে প্রতিবছর ডিসি সম্মেলন হলেও করোনার কারণে গত দুবছর তা করা যায়নি।

গত মঙ্গলবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে হয় সম্মেলনটি। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ও স্পিকার ডিসিদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

সম্মেলনের সব অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। করোনা আক্রান্ত হওয়ায় এবার সম্মেলনে ৫ ডিসি ও দুই বিভাগীয় কমিশনার উপস্থিত হতে পারেননি। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারীও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।

প্রয়োজনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন : অপব্যবহার রোধে প্রয়োজনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের ইঙ্গিত দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) ডিসিদের সঙ্গে অধিবেশন শেষ করে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস অফিসের সঙ্গে দুবার আলোচনা করেছি। তাদের অবহিত করা হয়েছে আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত। তারা যেন শিগগির আমাদের তারিখ দেয়। লেজিসলেটিভ বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।

কমিটির কাজ কী জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, এই আইন প্রধানত সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য করা হয়েছে। বাকস্বাধীনতা বা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের জন্য করা হয়নি। সেটি যদি করা হতো, তা হলে এটি আইন হিসেবেই গণ্য হতো না। আমরা একটু আগে এই আইন করেছি, অনেক দেশেই করা হয়েছে এবং অনেক দেশ এই আইন করা আবশ্যক মনে করছে।

তিনি আরও বলেন, এই আইন যখন বাস্তবায়ন করা হয় সেখানে কিছু মিসইউজ ও কিছু অ্যাবিউস হয়েছে।

এগুলো যাতে না হয়, সারা পৃথিবীর যে বেস্ট প্র্যাকটিসেস, জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস অফিসের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বেস্ট প্র্যাকটিসগুলো নির্ণয় করে আমাদের দেশের জন্য কতটুকু প্রয়োজন, সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে সেটা আমরা হয়তো বিধি দিয়ে গ্রহণ করব। যদি প্রয়োজন হয় আইন কিছুটা সংশোধনও করা হবে। নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ আইন সংসদের চলমান অধিবেশনে পাস করার চেষ্টা করা হবে বলেও জানান আইনমন্ত্রী।

জুয়া খেলার অপরাধে সাজা বাড়াতে ডিসিরা যে প্রস্তাব দিয়েছেন তাতে সায় দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, জুয়া আইনের শাস্তি বাড়ানো যায় কিনা, জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে সেই পরামর্শ এসেছে। এই আইনটি ব্রিটিশ আমলের আইন। দেড়শ বছরের বেশি পুরনো আইনটি যুগোপযোগী করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

জনপ্রতিনিধিদের সম্মান করার আহ্বান : স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা সম্মান করেন না- এমন অভিযোগের বিষয়ে ডিসিদের আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন।

তিনি বলেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা বলেছেন, তাদের স্থানীয় প্রশাসন বা অন্য সরকারি অফিস সে ধরনের সম্মান দেয় না।

তারা যে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন, কিছু কমিটমেন্ট আছে, সেগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হয় না। এসব বিষয় নিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ হয় না, এটা দুঃখজনক। জনপ্রতিনিধিদের এই অভিযোগের বিষয়ে আরও সচেতন হতে ডিসিদের বলা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রবাসীদের পাসপোর্ট, জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে ভোগান্তির কথাও তুলে ধরা হয়েছে।

অপপ্রচার বন্ধে তৎপরতা বাড়াতে হবে : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার বন্ধে আরও তৎপর হতে ডিসিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, দেশে সাড়ে ৮ থেকে ৯ কোটির কাছাকাছি মানুষ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রচারের একটি বড় ক্ষেত্র এবং অপপ্রচার, গুজব রটানোরও একটি বড় ক্ষেত্র।

গত ৭-৮ বছরের পরিসংখ্যানে দেখতে পাই, দেশে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যেসব গুজব রটানো হয়েছে, অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে, স্থানীয়ভাবে বিশৃঙ্খলা থেকে সারাদেশে বিশৃঙ্খলা তৈরির অপচেষ্টা হয়েছে, প্রায় সবই এই মাধ্যমে করা হয়েছে।

ডিসিদের কাছে আমরা সে বিষয় তুলে ধরেছি, তারা যেন এ ব্যাপারে সবসময় তৎপর থাকেন এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

স্বাস্থ্যবিধি অমান্যে ব্যবস্থা : করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকায় স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে ডিসিদের নির্দেশনা দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তিনি বলেন, দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ যেভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে সরকার আতঙ্কিত না হলেও বিষয়টি আশঙ্কাজনক।

মন্ত্রী বলেন, আমরা ডিসিদের বলেছি, আপনারা গতবার যেভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করেছেন, এবারও সেটা করতে হবে। মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নামাজ আদায়ের আহ্বান জানিয়েছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান।

তিনি বলেন, মসজিদে নামাজ পড়ার বিষয়ে আগে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেটা এখনো বলবৎ।

তিনি আরও বলেন, ডিসিদের আমরা ধর্মীয় সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!