• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

কর্মচারীদের নতুন জোটের আত্মপ্রকাশ, ৭ দফা দাবি (ভিডিও)


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ২২, ২০২২, ০১:৪০ পিএম
কর্মচারীদের নতুন জোটের আত্মপ্রকাশ, ৭ দফা দাবি (ভিডিও)

ঢাকা : প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বৃহত্তর স্বার্থে সরকারি কর্মচারীদের দাবি আদায়ের দুই জোট ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ’ এবং ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি বাস্তবায়ন কমিটি’-এর সমন্বয়ে ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবী বাস্তবায়ন ঐক্য ফোরাম’ নামে নতুন জোট আত্মপ্রকাশ করেছে।

রোববার (২২ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন এ জোটের আত্মপ্রকাশ  হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য ফোরামের মুখ্য সমন্বয়ক মো. ওয়ারেছ আলী লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের বৈষম্য ও অসংগতির চিত্র তুলে ধরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. হেদায়েত হোসেন।

আগামী ৩ জুন শুক্রবার সকালে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সারা দেশ থেকে আগত কর্মচারীদের উপস্থিতিতে মহাসমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের মাঝে বিরাজমান পদবী বৈষম্য দূরীকরণ, বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, বৈষম্যমুক্ত নবম জাতীয় বেতনস্কেল ঘোষণাসহ ১১-২০তম গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদেরকে ৫০% মহার্ঘ্য ভাতা প্রদানের দাবি জানানো হয়।

লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. হেদায়েত বলেন, প্রজাতন্ত্রের সিনিয়র সচিব থেকে শুরু করে ২০তম গ্রেডে কর্মরত সবাই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বৈষম্য নিরসনের দিকটি বিবেচনায় নিয়ে শত শত স্কেলকে বিলুপ্ত করে ১০টি গ্রেডের একটি সুষম বেতন কাঠামো উপহার দেন। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর স্বৈরাচারী সরকার ১৯৭৭ সালের বেতন স্কেলে প্রচলিত ১০টি গ্রেডের পরিবর্তে ২০টি গ্রেডে বেতন স্কেল বাস্তবায়ন করে। এর মাধ্যমে কর্মচারীদের মাঝে বৈষম্যের সূত্রপাত করা হয়।

তিনি বলেন, ১৯৭৭ সালে ২০টি গ্রেডে বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করে যে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয় তা পরের প্রতিটি বেতন স্কেলেই অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৫ সালের সচিবালয়ের সঙ্গে সচিবালয়ের বাইরের কর্মচারীদের মধ্যে পদবি বৈষম্য সৃষ্টি করে এ বৈষম্যকে আরেক দফা বৃদ্ধি করা হয়। এরপর থেকেই বৈষম্য আর অবহেলাকে ঘিরে কর্মচারীদের ন্যায্য আন্দোলন চলতে থাকলেও তার অবসান হয়নি। বরং বিভিন্ন কৌশলে এ বৈষম্যকে আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দিন বদলের কর্মসূচি সফলের লক্ষ্যে রূপকল্প ২০২০-২১ বাস্তবায়নে ব্যাপক জনমত নিয়ে দেশ গড়ার যাত্রা শুরু করলে আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম যে বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত দিয়ে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের সব বৈষম্যের অবসান হবে। কিন্তু আমাদের দেখা সে স্বপ্ন, এখনো স্বপ্নই রয়ে গেল।

৭ দফা দাবি

১. জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত ১৯৭৩ সনের জাতীয় বেতন স্কেলের অনুরূপ ১০ (দশ) ধাপ বিশিষ্ট বেতন স্কেল নির্ধারণ-পূর্বক ৬ সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের ব্যয় বিবেচনায় সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা করতে হবে এবং এ উপলক্ষ্যে নৰ্ম জাতীয় পে-কমিশন গঠন করতে হবে। নবম পে-স্কেল
ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত অন্তবর্তীকালীন সময়ের জন্য ১১-২০তম গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদেরকে ৫০% মহার্ঘ্য ভাতা
প্রদান করতে হবে, শতভাগ পেনশন প্রদান, স্বেচ্ছায় অবসরে চাকরির বয়সসীমা ২০ বছর নির্ধারণ এবং
আনুতোষিক প্রতি ১ টাকায় তিনশত টাকা নির্ধারণ করতে হবে এবং পে-কমিশনে কর্মচারীর প্রতিনিধি রাখতে হবে।

২. সচিবালয়ের ন্যায় সচিবালয়ের বাইরে সকল দপ্তর/অধিদপ্তরে কর্মরত কর্মচারীদের পদবী ও গ্রেড পরিবর্তনসহ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জন্য এক ও অভিন্ন নিয়োগ বিধি প্রণয়ন এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদেরকে প্রথম শ্রেণী ও সহকারী শিক্ষকদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণী কর্মকর্তার পদমর্যাদা ও শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি প্রদান করতে হবে।

৩. ব্লক পদ প্রথা প্রত্যাহার, পদোন্নতিযোগ্য পদ শূণ্য না থাকলেও নির্ধারিত সময়ের পর উচ্চতর পদের বেতন স্কেল প্রদান, ঝুঁকিপূর্ণ কর্মে নিয়োজিত কর্মচারীদেরকে যৌক্তিকভাবে ঝুঁকিভাতা প্রদান করতে হবে এবং আউট সোর্সিং নিয়োগ প্রথা বিলুপ্ত করতে হবে।

৪. ১১-২০তম গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের ক্ষেত্রে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির হার ৫% এর পরিবর্তে ২০% এ উন্নীত করেতে হবে। টাইম স্কেল-সিলেকশন গ্রেড, টেকনিক্যাল কর্মচারীদের জন্য দুটি বিশেষ ইনক্রিমেন্ট পুনর্বহাল। এলাকা ভেদে ৭০% হতে ১০০% হারে বাড়িভাড়া ভাতা, সামঞ্জস্যপূর্ণ চিকিৎসা ভাতা, টিফিন ভাতা, যাতায়াত ভাতা প্রদান করতে হবে।

৫. ১১-২০তম গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদেরকে বিনাসুদে ২৫-৩০ লক্ষ টাকা গৃহঋণ সুবিধা ও গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বিল বাবদ প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা প্রদান করতে হবে।

৬. উন্নয়ন খাত থেকে রাজস্বখাতে স্থানান্তরিত কর্মচারীদের চাকরি শুরু থেকে গণনা, অযাচিত ২০% হারে পেনশন কর্তনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ১১-২০তম গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের জন্য সকল নিয়োগে ৩০% পোষ্য কোটা সংরক্ষণ করতে হবে। অফিসার্স ক্লাব, বিএমএ, কেআইবি, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মতো চাকরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের জন্য রাজধানীতে একটি কর্মচারী কমপ্লেক্স নির্মাণ করতে হবে।

৭. সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা ৩৫ ও অবসরের বয়সসীমা ৬২ বছর এবং অধঃস্তন
আদালতে কর্মচারীদের বিচার বিভাগীয় কর্মচারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রজাতন্ত্রের বৃহৎ ১৪টি সংগঠন যথা- বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশন, ১১-২০ গ্রেডের সরকারি চাকরিজীবিদের সম্মিলিত অধিকার আদায় ফোরাম, বাংলাদেশ ১৬-২০ গ্রেড সরকারি কর্মচারী সমিতি (সাবেক ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতি), বাংলাদেশ সরকারি গাড়ীচালক সমিতি, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (তোতা-গাজী), বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাসেম-শাহীন), বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজ (আনিস-রবিউল), বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজ (শাহীনুর-আল আমিন), বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদ, বাংলাদেশ তৃতীয় শ্রেণী সরকারি কর্মচারী সমিতি, বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ডাক কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল শ্রমিক কর্মচারী সংগঠন এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী উন্নয়ন পরিষদের নেতৃবৃন্দসহ বিপুল সংখ্যক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

সোনালীনিউজ/এনএন

Wordbridge School
Link copied!