• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

পদোন্নতি-পদায়নে তদবিরই ভরসা


শামসুল ইসলাম মে ২৬, ২০২২, ০৫:৫১ পিএম
পদোন্নতি-পদায়নে তদবিরই ভরসা

ঢাকা: জনপ্রশাসনে সরকারের বিভিন্ন পদ গুলোতে পদোন্নতি ও লোভনীয় পদগুলোতে পদায়নের ক্ষেত্রে যোগ্য কর্মকর্তাদের বঞ্চিত করার অভিযোগ উঠছে। বিগত কয়েক বছর ধরে অব্যহতভাবে তদবিরেই ভরসা রাখছেন সরকারের কর্মকর্তারা। তারা নিদেজের পদোন্নতি এবং পদায়নে উর্দ্ধতন কর্মকর্তা এবং প্রভাবশালী সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের নিকট ধর্ণা দিচ্ছেন। 

সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরাও বিধি লঙ্ঘন করে তাদের পক্ষে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ও সচিবের নিকট আধাসরকারি পত্র দিচ্ছেন। কর্মচারীদের পক্ষে তদবির আইনত নিষিদ্ধ হলেও মানছেন না তারা। আর এসব তদবিরের আধা সরকারি পত্রগুলো উপস্থাপন করতে হিমশিম খাচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মচারীরা। এভাবে নিয়ম না মেনে তদবিরের ওপর চলছে পুরো প্রশাসন।

সরকারি টাকায় দুই দেশে শিক্ষাসফর শেষে ফিরে পরদিনই অবসরে গেছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিডি) সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। অবসরের আগমুহূর্তে তার এই শিক্ষাসফর সরকারের কী কাজে আসবে, তা নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এরপর সেই সচিবকে দুই বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে পত্র দিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।

আধাসরকারি পত্রে তার পরিচয় উল্লেখ করে মন্ত্রী লিখেছেন, তিনি সরকারি চাকুরির পূর্ণ সময়ে মাঠ প্রশাসনে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করার মাধ্যমে অনেক দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনের সচিব এবং স্থানীয় সরকার বিভাগে সিনিয়র সচিব হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন।তাই আমি মনে করি এরকম কর্মকর্তার সেবা আরও বেশিদিন যদি দেশ পায় তাহলে উন্নয়ন তরান্বিত হতো। 

অন্যদিকে তিনিও যেহেতু আরও বেশিদিন কাজ করতে আগ্রহী, তাই তাকে আরও ২ বছর সরকারের প্রয়োজনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করছি।

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ চান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। দুই বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে আধাসরকারি পত্র দিয়েছেন তিনি।

পত্রে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. আতাউর রহমানের পরিচয় উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোতে যোগদানের পর হতে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সুনামের সাথে পালন করে আসছেন। আগামি ২৯ জুলাই তিনি পিআরএলএ যাবেন। প্রতিষ্ঠানটির চলমান কার্যক্রমসমূহ অব্যাহত রাখার স্বার্থে তার চাকুরীকাল বর্ধিত করা আবশ্যক।

এমতাবস্থায় তার চাকুরী আগামি দুই বছরের জন্য বর্ধিত করার বিষয়ে আপনার ব্যক্তিগত সহযোগীতা কামনা করছি।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমানকে সচিব/গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য পত্র দিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে দেওয়া পত্রে তিনি লিখেছেন, হাবিবুর রহমান রেলপথ মন্ত্রণালয়ে যোগদানের পর থেকেই রেলপথকে জনবান্ধব, সাশ্রয়ী, আরামদায়ক, নিরাপদ ও আধুনিক গণপরিবহণ ব্যবস্থায় রুপান্তর করার জন্য রেলপথ খাতের উন্নয়নে সরকারের গৃহীত কর্মসূচী বাস্তবায়নে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব তিনি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে আসছেন। তিনি নিয়মিতভাবে যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন কিন্তু অদ্যবধি সচিব/গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি পাননি। আগামি ১৫ জুন তিনি অবসর উত্তর ছুটিতে গমন করবেন। এর পূর্বে হলেও তার সচিব/গ্রেড-১ পদে পদোন্নতির বিষয়টি বিবেচনাযোগ্য। এমতাবস্থায় তাকে পদোন্নতির জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন রেলমন্ত্রী।

ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স এ পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) পদটি লোভনীয়। এই পদে পদায়নের জন্য সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীন ফায়ার সার্ভিসের ১১ মডার্ণ প্রকল্পের পরিচালক শহীদ আতাহার হোসেনের জন্য আধাসরকারি পত্র দিয়েছেন জামালপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মির্জা আজম।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে লেখা আধাসরকারি পত্রে তিনি লিখেছেন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) পদটি শুন্য হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত থাকায় অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মো. শহীদ আতাহার হোসেনকে ঐ পদে পদায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর সুপারিশ করছি। উল্লেখ তিনি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের একজন নিবেদিত কর্মকর্তা।

১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী কোনো সরকারি কর্মচারী তার চাকরি-সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে প্রভাব খাটাতে পারেন না। সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা, ১৯৭৯-এর ৩০ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোন সরকারি কর্মচারী তাহার চাকরি-সংক্রান্ত কোন দাবির সমর্থনে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে সরকার বা কোন সরকারি কর্মচারীর ওপর রাজনৈতিক বা অন্য কোনো বহিঃপ্রভাব খাটাইতে বা খাটাইবার চেষ্টা করিতে পারিবেন না।’ 

একই আইনে তদবির করার জন্য সংসদ সদস্যদের কাছে যাওয়ার ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। আইনটির ২০ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোন সরকারি কর্মচারী কোন ব্যাপারে তাহার পক্ষে হস্তক্ষেপ করার জন্য সংসদ সদস্য বা অন্য কোন বেসরকারি ব্যক্তিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অনুরোধ জানাইতে পারিবেন না।’

১৯৫৮ সালের ২৭ ফেব্রেুয়ারি জারি করা এক স্মারকেও কোনো সরকারি কর্মচারী তার চাকরিসংক্রান্ত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য কোনো মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যের কাছে তদবির করতে পারবেন না বলে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার এ বিষয়ে বলেন, সরকারি কর্মচারীদের পক্ষে কোনো মন্ত্রী বা এমপি তদবির করতে পারেন না। সরকারি বিধিতে তদবির নিষিদ্ধ করা আছে। এরপরও যারা করেন, তারা গুরুতর অন্যায় করেন। আইন ও সুশাসন না থাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!