• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আনতে কমিটি গঠন


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ১৮, ২০২২, ১১:১০ এএম
রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আনতে কমিটি গঠন

ঢাকা : ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর পশ্চিমাদের নানা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থাকা রাশিয়া থেকে তেল কেনার উপায় খুঁজতে মঙ্গলবারই বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

একদিন বাদে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সঙ্কটের এই সময়ে তেল কিনতে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন-বিপিসিকে এই আলোচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

তিনি বুধবার (১৭ আগস্ট) বলেন, বিপিসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটি আলোচনা করছে।

গত মে মাসে রাশিয়া অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বিক্রির প্রস্তাব দিলে ওই তেল বাংলাদেশের রিফাইনারিতে পরিশোধনযোগ্য নয় বলে জানিয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল।

এরপর গত সপ্তাহে বাংলাদেশের কাছে পরিশোধিত তেল বিক্রির প্রস্তাব পাঠায় রাশিয়ার তেল উৎপাদন ও বিপণন কোম্পানি রজনেফ্ট। তাদের প্রস্তাব যাচাই করে দেখার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ।

বিপিসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা না প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উনারা (রাশিয়া) প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরা ঢাকায় আসতে বলেছি। উনারা আসলে আমরা বসব।

রজনেফ্ট’র প্রতিনিধিরা ঢাকায় আসতে চেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “রাশিয়া থেকে তেল আমদানির বিষয়ে অনেক বিষয় আসে। যেমন- কোন প্রক্রিয়ায় আসবে, জাহাজ ভাড়া কত পড়বে, কোন মুদ্রায়, কোন ব্যাংকের মাধ্যমে পেমেন্ট হবে, কতদিনের মধ্যে পেমেন্ট ক্লিয়ার করতে হবে- এ ধরনের অনেক বিষয় আছে।

উনারা আসলে আমরা বসে ঠিক করব। তারা বলেছেন, আসবে। যেটাই হোক, আমাদের উইন উইন সিচুয়েশন হতে হবে।.

যুদ্ধের পর বিশ্বজুড়ে জ্বালানির মূল্য বাড়তে থাকলে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কিনতে শুরু করে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ দুই ক্রেতা দেশ চীন ও ভারত। সৌদি আরবও রাশিয়া থেকে তেল কিনেছে বলে খবর বেরিয়েছে। ব্রেন্ট ক্রুডের সঙ্গে রাশিয়ার তেল অপেক্ষাকৃত সস্তায় পাওয়া যায়।

কিছু দিন আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, বড় দেশগুলো রাশিয়া থেকে তেল কিনতে সাহসী হলেও বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য তা সহজ নয়।

এর মধ্যেই রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কীভাবে আমদানি করা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার উপায় খুঁজে বের করতে মঙ্গলবার একনেক সভায় নির্দেশ দেন।

রাশিয়ার কাছ থেকে তেল আমদানি করা গেলে বিনিময় মুদ্রা কী হবে, সে বিষয়েও একটি সমাধান খুঁজে বের করতেও প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।

বাংলাদেশে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৬১ লাখ টনের বেশি জ্বালানি তেল আমদানি করে। এরমধ্যে তিন-চতুর্থাংশই পরিশোধিত তেল। অপরিশোধিত তেল কিনে দেশে এনে পরিশোধন করলে অর্থ বাঁচবে এজন্য অনেকদিন থেকেই দেশের দ্বিতীয় রিফাইনারি করার তাগাদা থাকলেও তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।

যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখতে তেল ও গ্যাস আমদানির কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ধাক্কা লেগেছে। বহুদিন পর ফিরে এসেছে লোডশেডিং।

দাম কম হলে কেন কিনব না : রাশিয়া থেকে কম দামে পরিশোধিত তেল পাওয়া গেলে তা কেনার পক্ষে জ্বালানি নীতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম তামিম।

তিনি  বলেন, খরচ কম পড়লে আমাদের অবশ্যই উচিৎ হবে পরিশোধিত তেল কেনা। আন্তর্জাতিক মূল্যের চেয়ে যদি দাম কম হয় এবং পরিবহন খরচ মিলিয়ে মোট মূল্য যদি কম আসে, আমাদের অবশ্যই এই তেল কেন কিনতে হবে।

বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক তামিম বলেন, পেমেন্ট, নিষেধাজ্ঞা এসব বিষয়ের বাইরে আমি জ্বালানি সংশ্লিষ্ট হিসেবে বলতে পারি, আমরা কেন ডিসকাউন্টেড প্রাইস গ্রহণ করব না। অবশ্যই আমাদের গ্রহণ করতে হবে।

রাশিয়ার তেল উত্তোলন ও বিপনন জায়ান্ট রজনেফ্ট মূলত পশ্চিম সাইবেরিয়া, সাকালিন, উত্তর ককেসাস এবং আর্কটিক অঞ্চল থেকে তেল উত্তোলন করে। ফোর্বসের হিসাবে, ২০২০ সালে কোম্পানিটির বার্ষিক মুনাফা ১২ বিলিয়ন এবং সম্পদ মূল্য ছিল ২১৯ বিলিয়ন ডলার।

ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসনের মধ্যে রাশিয়ান অন্যান্য বড় কোম্পানিগুলোর মতোই রজনেফ্টের উপরও পশ্চিমা বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

তবে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমাদের বিরোধের মধ্যে সেদেশ থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে কূটনৈতিক ‘সেনসিটিভিটি’ মাথায় রাখতে পরামর্শ দিচ্ছেন এক সময়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) কাজ করে আসা আহসান এইচ মনসুর।

রাশিয়ার সঙ্গে মুদ্রা বিনিময়ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশই সম্পন্ন হয় ডলারে। আর সেটি হয় সুইফট ব্যবস্থার মাধ্যমে।

ইউক্রেইন যুদ্ধ ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেনে সুইফটের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানিতে ডলারের বিকল্প মুদ্রায় পরিশোধ করতে হবে। এটি হতে পারে চীনের মুদ্রা ইউয়ান।

ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান মনসুর বলেন, রাশিয়ান মুদ্রা রুবল খুব একটা পাওয়া যাবে না। চীনের মুদ্রা ইউয়ান কিনে তা দিয়ে তেলের দাম পরিশোধ করা যেতে পারে।

তবে এক্ষেত্রে বিবেচনায় নিতে হবে ডিপ্লোম্যাটিক সেনসিটিভিটিকে (কূটনৈতিক সম্পর্কের স্পর্শকাতরতাকে)। কারণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে আমাদের রপ্তানির ৮০ শতাংশ বাজার। তাদের অসন্তুষ্টি নিয়ে কোনো কাজ করা যাবে না।

এই বিশ্লেষক বলেন, আন্তর্জাতিক কূটনীতির বিষয়টি ভাবতে হবে। তাদেরকে একটু বুঝিয়ে-শুনিয়ে…রাখতে হবে। মানুষ কষ্টে আছে…বিষয়টি জানিয়ে হয়ত রাজি করাতে পারলে আপত্তি করবে না তারা (যুক্তরাষ্ট্র)।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!