• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘জড়’ ভাবনায় খটকা লেগেছে মনে


এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার পিপিএম অক্টোবর ২৩, ২০২০, ০৫:২৭ পিএম
‘জড়’ ভাবনায় খটকা লেগেছে মনে

ঢাকা : ছোটবেলায় শিক্ষাগ্রহণ পদ্ধতিতে আমরা জেনেছি যার প্রাণ আছে তা হলো জীব আর যার প্রাণ নেই তা হলো জড়। সেমতে জীবকুলের উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়েরই প্রাণ আছে আমরা জানি। প্রাণ অস্তিত্বসম্পন্ন উদ্ভিদ এবং প্রাণিকুল তার প্রাণসত্তা হারালেই সে জড় বস্তুতে পরিণত হয়। অর্থাৎ তার বেড়ে উঠা কিংবা চলার মতো নিজস্ব শক্তি আর থাকে না। যেমন গাছের কিংবা একটি সবুজ পাতার ছোট থেকে বড় হবার ক্ষমতা আছে, আকার আয়তনে বাড়ার সক্ষমতা আছে বলেই আমরা খালি চোখে তার বাড়ার প্রক্রিয়াটি অনুধাবন করতে না পারলেও ছোট থেকে বড় হওয়ার বিষয়টি কিংবা চিকন থেকে চওড়া হওয়ার বিষয়টি কিন্তু স্পষ্ট দেখতে পাই। সে কারণে গাছের কিংবা সবুজ পাতার প্রাণ আছে আমরা বিশ্বাস করি। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা যা কিছুই থাকুক না কেন আমাদের বিশ্বাস মূলত এখানেই।

কিন্তু যখন গাছটি কেটে ফেলা হচ্ছে, নিথর দেহটি কেবল পড়ে আছে কিংবা একটি ঝরাপাতা ডোগা থেকে যখন মাটিতে আছড়ে পড়ে থাকে তাকে আমরা জড় বলছি। কারণ তখন গাছ কিংবা পাতার আর প্রাণশক্তি থাকছে না। নিজে নিজের খাদ্য উৎপাদন করতে পারে না কিংবা ছোট থেকে আর বড় হওয়ার মতো কোনো প্রাণশক্তি থাকছে না বলে তখন তারা জড় পদার্থই হয়ে থাকছে। নড়াচড়া না করলেও শৈবাল পাথর ছোট থেকে বড় আকার ধারণ করছে এবং তারও প্রাণ আছে বলে আমরা জানি। জড় পদার্থের গতিশক্তি নাই বলে আরোপিত শক্তিমূলে তার স্থানান্তর বা ঘূর্ণায়মান করা যায়। যেমন কলকব্জার চাকা ঘুরতে তেল, গ্যাস পুরিয়ে কিংবা বৈদ্যুতিক শক্তি দ্বারা বহিঃশক্তির প্রয়োগ করে সেটাকে ঘোরানো হয়।

প্রাণিকুলের প্রাণ আছে বলেই তো তাদের প্রাণী বলা। এরাও গতিশক্তির ফলে স্থান ত্যাগ করে অন্য স্থানে যায়, খাদ্য সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে, বড় হয় ইত্যাদি। যেসব বৈশিষ্ট্য মিলে প্রাণী তার অস্তিত্ব জানান দেয় তা হলো—প্রাণ আছে, স্থান পরিবর্তন করতে পারে, নিজে স্বাধীন চলতে পারে, বাধাপ্রাপ্ত হলে থামতে পারে, গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে, প্রজনন ক্রিয়া দ্বারা বংশ বিস্তার করতে পারে ইত্যাদি। তবে সব প্রাণে সব বৈশিষ্ট্য থাকবে তা কিন্তু নয়। যেমন ধরুন করোনা জীবাণুর প্রাণ আছে বলে প্রাণী, কিন্তু একা চলতে পারে না, নিজে থেকে স্থান পরিবর্তন করতে পারে না অর্থাৎ নিজে চলার শক্তি না রেখেও সে প্রাণী। অথচ পড়ে আছে জড় বস্তুর মতো কিন্তু জড় নয় ‘জীব’। কাজেই দেখতে জড় মনে হলেও তা জড় নাও হতে পারে।

তেমনি করে পৃথিবী গ্রহ আরেকটি গ্রহের জন্ম দিচ্ছে না ঠিকই, কিংবা রেচন ক্রিয়ায় কী গ্রহণ করে, কীবা-ই প্রডাক্ট হিসেবে বর্জন করে কিংবা আদৌ এমন কিছু করছে কিনা আমরা জানি না। কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে শিলাস্তরের বৃদ্ধি ঘটে, এমনকী অগ্ন্যুৎপাতের ফলে দৃশ্যমান কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যায়— এমনই শত পরিবর্তন পৃথিবী গ্রহে ঘটতে দেখা যায়, তা আবার প্রাকৃতিক নিয়মে। আবার  প্রাণ থেকেও হিজড়া এবং মানুষের মধ্যে কেউ কেউ বায়োলোজিকেল কারণে রি-প্রডাকশন করতে পারছে না। এতদসত্ত্বেও সে কিন্তু ঠিকই জীব বা প্রাণী এমন কী কোনো অর্থেই ‘জড়’ নয়। পৃথিবী গ্রহ আলোচনায় আহ্নিকগতি, বার্ষিকগতি ও সৌরগতি ইত্যাদির অস্তিত্ব রয়েছে। অর্থাৎ পৃথিবীর নিজস্ব গতিশক্তি আছে তাই সে চলতে পারে আর সেই সঙ্গে বাইরে থেকে আরোপিত সৌরশক্তি, বিদ্যুৎশক্তি ইত্যাদি নানাবিধ শক্তি কিংবা শক্তির আধারও তার রয়েছে। পুরো পৃথিবীকেই বৃহৎ চৌম্বকীয় শক্তির ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

কাজেই পৃথিবীর ঘূর্ণন ক্ষেত্রে যদি নিজস্ব সোর্স থেকে প্রাপ্ত শক্তিবলেই ঘুরে থাকে তাহলে পৃথিবীকে কোন্্ যুক্তিতে জড় পদার্থ বলছি? কারণ পৃথিবীটা কাটা বৃক্ষ কিংবা ডগা থেকে ছিটকেপড়া কোনো গাছের পাতার মতো অভিজ্ঞতা লাভ করেনি এখনো। পৃথিবী তার নিজ অক্ষে ঘুরেই চলছে অবিরাম। যদি কক্ষচ্যুত হয়ে ঝরেপড়া পাতার মতো খসে পড়তো, কোথাও নিথর দেহ নিয়ে পড়ে থাকত তাহলে জড় বলতে দ্বিধা লাগত না। কিন্তু পৃথিবী গ্রহ সৃষ্টিকাল থেকে এখনো অব্দি ঘুরছে সূর্যকে কেন্দ্র করেই।

যদি আরোপিত সৌর আলোর দ্বারা এই চলমান প্রক্রিয়া কার্যকর থাকতো তাহলে বাস্তবে রাতের অস্তিত্ব মানাটা খুব কঠিন হয়ে যেত। কেননা সূর্যালোক প্রাপ্ত হয়ে সার্বক্ষণিক এটি দিনের অস্তিত্ব প্রকাশ করার কথা। কখনো বৃষ্টি নামলে কিংবা রাত হলে সেখানে সৌর আলোর অস্তিত্ব থাকে না বা খুব বেশি মাত্রায় কমে যাওয়ার ফলে ওই অংশ চলমান অংশ থেকে অর্থাৎ যে অংশে সূর্যালোক পাচ্ছে সে অংশ থেকে পৃথক হবার কথা। মোদ্দাকথা একাংশ স্থবির আর আরেক অংশ গতিশীল থাকলে সঙ্গত কারণেই তা গতির অংশ স্থিতির অংশ থেকে পৃথক হয়ে যেত। কিংবা জড় অংশকে নিয়ে  কক্ষপথে চলতে থাকলেও চলার গতি অস্বাভাবিকভাবে কমে যেত। কিন্তু বিজ্ঞান তো বলছে একটি নির্দিষ্ট সময় বা খুব ন্যূনতম পার্থক্যে পৃথিবীর গতি অব্যাহত রয়েছে। কাজেই মনে খটকা লাগার কারণ হলো যদি পৃথিবী নিজ শক্তিবলে চলমান থাকে তাকে কোন্ যুক্তিতে জড়পদার্থ বলছি? কী সেই অকাট্য যুক্তি, তর্ক ও প্রমাণ দ্বারা পৃথিবীকে প্রকৃতপক্ষে পুরোপুরিভাবে আমরা এ শ্রেণিভুক্ত করে রেখেছি তা জানার ইচ্ছা থেকেই এ প্রসঙ্গের অবতারণা করা হলো। আশাকরি, পাঠক এবার সেই জ্ঞানের সীমায় হাঁটবেন, জানবেন সৃষ্টিলোকের অপার রহস্য, স্রষ্টার বিস্ময়াবিভূত বিশ্বলোক।

লেখক : পুলিশ সুপার, গীতিকবি ও কণ্ঠশিল্পী

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!