• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ডেঙ্গু প্রতিরোধে চাই জনসচেতনতা


মোহম্মদ শাহিন অক্টোবর ২৪, ২০২০, ০৪:০০ পিএম
ডেঙ্গু প্রতিরোধে চাই জনসচেতনতা

 

ঢাকা : ২০১৯ সালে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াভহ ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা করেছে বাংলাদেশ। গোটা দেশে প্রায় মহামারীতে রূপ নিয়েছিল। গত বছর সরকারি হিসাবমতে, ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ এবং মৃত্যুর সংখ্যা ১২১ জন, আর বেসরকারি হিসাবে ৩শ’র অধিক। জনমনে এ আক্রান্ত ও মৃত্যু দাগ কেটে দিয়েছে, সৃষ্টি করেছে নতুন ভীতিকর পরিস্থিত। বর্তমানে দেশ নভেল করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত। আসন্ন শীতে করোনার দ্বিতীয় ওয়েবও আসতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এ মহামারীর মধ্যেই ডেঙ্গুর প্রকোপ যে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে; বলতে গেলে করোনার কারণে তা ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত যে, করোনার এই মৌসুমেও রাজধানীতে প্রতিদিনই কেউ না কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। প্রতিদিন গড়ে ২ জন মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন এই ভাইরাসে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গু ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৯৯। এরপর ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত শিথিল অবস্থা বিরাজমান ছিল। কিন্তু জুন থেকে ফের ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়তে শুরু করেছে। আইইডিসিআর-এর তথ্যমতে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৫১০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। কন্ট্রোল রুম তথ্য বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৭ জন এবং ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৪৬ জন। এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবর শেষে তা দ্বিগুণ হতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

করোনাভাইরাসে জনগণ শঙ্কিত হওয়ায় ডেঙ্গু ভাইরাস তেমন একটা গুরুত্ব পাচ্ছে না। তা ছাড়া করোনা ও ডেঙ্গুর প্রধান উপসর্গ মূলত জ্বর। সে জন্য ডেঙ্গু  হলেও অনেকে করোনা মনে করে চিকিৎসা নিচ্ছেন। জ্বর হলেই করোনা মনে করে অনেক চিকিৎসকই দেখছেন না রোগীদের। হাসপাতালে না গিয়ে ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়েও চলাফেরা করছেন অনেকে। ফলে ডেঙ্গু আক্রান্তের সঠিক চিত্রও জানতে পারছে না আইইডিসিআর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর বিস্তার যে সময়টায় হয়, তার বড় একটি অংশ আমরা অতিক্রম করে এসেছি, কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা ঝুঁকিমুক্ত। তারা আরো বলছেন, করোনার মাঝেই ব্রাজিলে ডেঙ্গুর প্রকোপ খুব দ্রুত বাড়তে শুরু করেছিল, কিন্তু তা খুব একটা বিস্তার লাভ করতে পারেনি। সব মিলিয়ে তারা আশা করছেন যে, যদিও গতবারের মতো এবার ডেঙ্গু বিস্তারের ভয় নেই, কিন্তু ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আমাদের যথেষ্ট সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তারা।

ডেঙ্গু রোগের মূল হোতা ছোট্ট একটি মশা। এর নাম এডিস মশা। এই মশাই তাদের শরীরে বহন করে বেড়ায় ডেঙ্গু রোগের জীবাণু। এই জীবাণুর নাম ডেঙ্গু ভাইরাস। সাধারণত সারা বছরই এর প্রাদুর্ভাব থাকে, কিন্তু বর্ষাকালে এর প্রাদুর্ভাব বেশি ঘটে থাকে। কিছুদিন পূর্বেই সারা দেশে বিশেষ করে ঢাকা শহরে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। এ বৃষ্টির ধরনও ভালো নয়। যার ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির আশঙ্কা থেকেই যায় বলেও মন্তব্য করছেন বেশকিছু বিশেষজ্ঞরা। তবে আমরা যদি একটু সচেতন হই, তাহলেই এই আশঙ্কা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাব বলে আশা করা যায়।

মশার বংশবিস্তারে বিশেষ করে এডিস মশা যাতে বিস্তার লাভ করতে না পারে সেজন্য ইতোমধ্যে অবশ্য সিটি করপোরেশন বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমরা প্রত্যাশা করি দ্রুততম সময়ের মধ্যে উদ্যোগসমূহ সম্পন্ন করতে। প্রতিটি এলাকার স্থানীয় সরকার কর্তৃক সে এলাকার পাবলিক স্পেসগুলো ও মশা বংশবিস্তারের হট স্পটগুলো চিহ্নিত করে পরিষ্কার রাখতে হবে এবং মশার লার্ভা ও বড় মশা নিধনে নিয়মিত স্প্রে করতে হবে। একই সঙ্গে জনসচেতনতার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কীটপতঙ্গ বিশেষজ্ঞ ভি নাগপালের মতে, ১৯টি জায়গায় ডেঙ্গুর বাহক বংশবিস্তার করে থাকে। এগুলো হলো— পুরোনো টায়ার, লন্ড্রি ট্যাংক, ঢাকনাবিহীন চৌবাচ্চা, ড্রাম বা ব্যারেল, অন্যান্য জলাধার, পোষা প্রাণীর পাত্র, নির্মাণাধীন ভবনের ব্লক, ফেলে রাখা বোতল, পুরোনো জুতা, ফুলের টব, পরিত্যক্ত খেলনা, ছাদে অঙ্কুরোদগম উদ্ভিদ, বাগান পরিচর্যার জিনিসপত্র, ইটের গর্ত, অপরিচ্ছন্ন সুইমিংপুল। মশার বংশবিস্তারে এই স্থানগুলো যদি আমরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে পারি, তবেই ডেঙ্গু থেকে অনেকটাই রক্ষা পাব।

আমরা কিন্তু চাইলেই একটু সচেতন হয়ে প্রাণঘাতী এই মশার কামড় থেকে নিজেদের তথা সমাজকে রক্ষা করতে পারি। আসুন, মশা বংশবিস্তারে ওই স্থানগুলো আমরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখি এবং অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করি মশার আবাসস্থল ধ্বংস করতে। এতে করে আমি, আপনি এবং আমরা সকলেই এই প্রাণঘাতী ভাইরাস থেকে নিস্তার পাব এবং ডেঙ্গু আক্রান্তের হারও প্রতিরোধে সক্ষম হব।

লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!