ঢাকা : বর্তমান বাংলাদেশে কিছুদিন পরপরই নিত্যপণ্যের দাম কোনো কারণ ছাড়াই বাড়ছে। প্রতি বছরই নিয়মিত বিরতিতে নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিকের চেয়ে বেশ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বিশেষভাবে পেঁয়াজের নাম করা যেতে পারে। আর বর্তমানে গোলআলুর কথা তো সর্বজনবিদিত। বিভিন্ন সময়ে এই বাড়তি দামের পেছনে একদল অসাধুচক্র কাজ করে থাকে, যারা সময়ে সময়ে নিজেদের অতি মুনাফালোভী চরিত্রটিকে প্রকট করে তোলে।
ভোক্তারা যা কখনোই আশা করেনি, তাই এখন হচ্ছে। আলুর কেজি ৫০ টাকা। আলু উৎপাদনকারী মূল কৃষক আলু বিক্রি করে সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৫ টাকা কেজি দরে। সরকারি হিসাবমতে, আলুর দাম ৩০ টাকা হওয়ার পরও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। বাজার মনিটরিংয়েও কোনো সুফল আসছে না। হঠাৎ আলুর দাম এভাবে বেড়ে যাওয়ার বিশেষ কোনো কারণ নেই বললেই চলে। তবুও কারণ খুঁজতে গেলে সামনে চলে আসে, সাধুরূপী কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেটকাণ্ড। প্রতিবারই নিত্যপণ্যের দামের পেছনে এই সিন্ডিকেটচক্রের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। তবুও এর কোনো পরিত্রাণ নেই। অথচ আলু এবং পেঁয়াজ কোনো বিলাসিতার খাদ্যদ্রব্য নয়। এসব আমাদের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় খাবার। আলু এবং পেঁয়াজ ছাড়া আমাদের নিত্যদিনের খাদ্যতালিকা চিন্তাও করা যায় না। এরপরও বারবার নিত্যপণ্যের দাম এভাবে বেড়ে যায়, আর সাধারণ ভোক্তারাই ভোগে।
পেঁয়াজ নিয়ে বিগত ২ বছরে বেশ কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা আমরা দেখেছি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানির শীর্ষ বাজার বাংলাদেশ। কিন্তু বারবারই আমরা লক্ষ করেছি, বিভিন্ন সময়ে ভারত তার রাষ্ট্রীয় প্রয়োজন কিংবা অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজ রপ্তানি সাময়িক বন্ধ রেখেছে। আর এই সাময়িক বন্ধের সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পেঁয়াজ গুদামে মজুত রেখে কৃত্রিম সংকটের সৃষ্টি করে চলেছে। এতে করে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ৩ থেকে ৪ দিনের মাথায় পেঁয়াজের কেজি ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় উন্নীত হয়ে যায়। সাধারণ ভোক্তাদের নিরুপায় হয়ে এই চড়া দামে পেঁয়াজ কিনতে হয়েছিল, যেন পেঁয়াজের হাহাকার চলছে! অথচ কিছু তালাবদ্ধ গোডাউনে তখনো বস্তায় বস্তায় পেঁয়াজ ছিল। সেই গোডাউন মালিকরা কেউ সাধারণ ভোক্তাদের কথা একবার মনেও করেনি। অবশ্য তাদের ভাবনায় সাধারণ মানুষ, সে তো রোদেলা আকাশে তারা খোঁজার মতো ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। ঠিক এর কয়েকদিন পরই, পেঁয়াজের এই অচলাবস্থা চলাকালীন সময়েই, বেশ কিছু জেলা শহরে ঐ অসাধু ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ নদী-নালা খাল-বিলে থাকা মাছ ও অন্যান্য কীটপতঙ্গের খাবার বানিয়েছে। কারণ অতি গরমে গুদামজাত রাখার ফলে পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়েছে। এভাবে প্রায় কয়েক টন পেঁয়াজ পচে যাওয়ার ফলে ফেলে দিতে হয়েছে। এটা কী ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘন নয়!
পেঁয়াজকাণ্ড কিংবা নিত্যপণ্যের দাম কিছুদিন পরপরই অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়া, বাজার মনিটরিংয়ে সুফল না আসা, এসব ঘটনার পেছনে মূলত কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বা গোষ্ঠী রয়েছে যারা দেশ অচল করে দেওয়ার ইচ্ছাপোষণ করে থাকে। তাদের সেই ইচ্ছা থেকেই এ ধরনের কর্মকাণ্ড প্রতিনিয়তই ঘটছে, অথচ প্রতিবারই ধরা-ছোঁয়ার আড়ালে থেকে যাচ্ছে এসব দুশ্চরিত্র মুনাফাখোর ব্যবসায়ী। এরা কখনোই দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করতে পারে না, এরা দেশ ও জাতির চরম শত্রু।
আশা করি, প্রশাসন খুব দ্রুতই এই অসাধু ব্যবসায়ীদের/গোষ্ঠী চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এদের শাস্তি বিধান না করতে পারলে প্রকারান্তরে সরকারই জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা হারাবেন। উন্নত বিশ্বের পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আজ এটি বড় বেশি প্রয়োজন।
লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চট্টগ্রাম
*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।
আপনার মতামত লিখুন :