• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বৈধতার ঘোষণা ইতিবাচক


ড. আবু জাফর সিদ্দিকী নভেম্বর ২২, ২০২০, ০৪:০৫ পিএম
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বৈধতার ঘোষণা ইতিবাচক

ঢাকা : করোনাভাইরাস-পরবর্তী মালয়েশিয়া বিদেশি কর্মী নিয়োগে বড় ধরনের পরিবর্তনের পাশাপাশি অবৈধ প্রবেশ ঠেকাতে কঠোর নিরাপত্তাবলয় তৈরি করবে। অভিবাসী নিয়ন্ত্রণে কোভিড-১৯-পরবর্তী অভিবাসননীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ আরো কয়েকটি দেশে বৈধ-অবৈধ অভিবাসীদের সচেতনতার অভাবে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদেশিদের প্রবেশে রক্ষণশীল নীতি গ্রহণ করছে দেশটি। মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে অবস্থানরত অভিবাসীদের সম্প্রতি শর্তসাপেক্ষে বৈধ হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে দেশটি। রিকেলিব্রেশন  প্রোগ্রামের আওতায় বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশের নাগরিকরা চারটি খাতে এ সুযোগ নিতে পারবে। নির্মাণ, উৎপাদন, বৃক্ষরোপণ ও কৃষি সেক্টরে বৈধতার এ সুযোগ পাওয়া যাবে শুধু নিয়োগকর্তার মাধ্যমে। বৈধতার পাশাপাশি এ প্রোগ্রামের আওতায় দেশে ফিরে আসার সুযোগ নিতে পারবে অবৈধভাবে অবস্থানরত প্রবাসীরা। যেসব অবৈধ অভিবাসী বৈধতার সুযোগ গ্রহণ না করে নিজ দেশে ফেরত যেতে চায়, তারা চাইলে ফেরত যেতে পারবে। মালয়েশিয়া সরকার কোনো এজেন্ট বা ভেন্ডর নিয়োগ করেনি, কোম্পানি ছাড়া অন্য কারো মাধ্যমে বৈধ হওয়া যাবে না।

সংশ্লিষ্টদের ধারণা, বিভিন্ন দেশের ২০ থেকে ৩০ লাখ অবৈধ অভিবাসী মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছে। এর মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা দেড় থেকে ২ লাখ। করোনায় টানা লকডাউনে মালয়েশিয়া থেকে ছুটিতে বাংলাদেশে এসে আটকা পড়ে অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বা শেষ হওয়ার পথে। কিন্তু দেশটির সরকারের অনুমতিপত্র না পাওয়ায় তারা ফিরে যেতে পারছে না। কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবে মালয়েশিয়ার পর্যটন খাতসহ বিভিন্নভাবে অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করোনার মধ্যে মালয়েশিয়ান সরকারের নিপীড়নমূলক আচরণের বিষয়েও অভিযোগ ওঠে। এ প্রেক্ষাপটে অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার সুযোগ ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে অভিহিত করা যায়।

এদিকে বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ মহামারীর বিস্তার এবং অন্যান্য কারণে বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ফিরে আসা অব্যাহত আছে। গত সাড়ে সাত মাসে সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, দুবাইসহ ২৮টি দেশ থেকে পৌনে তিন লাখ শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে কাজ না থাকা, চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া, প্রতারিত হওয়া এবং ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়া বা আকামা (কাজের অনুমতি) না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে তাদের দেশে ফিরে আসতে হয়েছে। এদের বেশির ভাগই প্রায় নিঃস্ব অবস্থায় ফিরেছে বলেও গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

সরকারি হিসাবে, গত ১ এপ্রিল থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত মোট দুই লাখ ৭২ হাজার ১৮৫ জনেরও বেশি প্রবাসী কর্মী স্বদেশে ফেরত এসেছে। তাদের মধ্যে ২ লাখ ৪১ হাজার ১৫২ জন পুরুষ এবং ৩১ হাজার ৩৩ জন নারী। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, করোনা মহামারীর কারণে বেশিরভাগ দেশ ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করায় বিপুলসংখ্যক অভিবাসী শ্রমিক চাকরি হারিয়ে নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে। এছাড়া চুক্তি বা চাকরির  মেয়াদ  শেষ হওয়া, ছুটিতে আসা কিংবা অনিয়মিত হয়ে পড়া শ্রমিকরাও তাদের অন্তর্ভুক্ত। যারা কাজ হারিয়ে বেকার ও নিঃস্ব অবস্থায় ফিরেছে তাদের নিয়েই মূলত ভাবতে হবে। যাদের চাকরি ছিল কিন্তু দেশে ফিরে আটকে পড়েছে, তারা ফিরে গিয়ে আবার চাকরিতে যোগ দিতে পারবে কি না সেটিও উদ্বেগের কারণ। সৌদি ফেরত শ্রমিকদের ফিরে যাওয়া নিয়ে সম্প্রতি নানা ঘটনার জন্ম দিয়েছে এবং তার খুব একটা সুষ্ঠু সমাধান হয়নি।

জানা যায়, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আগেই এটি ছড়িয়ে পড়েছিল সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইতালিসহ নানা দেশে। ওই দেশগুলোতে বছরের শুরুর দিকেই লকডাউন শুরু হওয়ায় বেকায়দায় পড়ে যান প্রবাসী শ্রমিকরা। বিশেষ করে যারা ‘অবৈধ’ভাবে ছিল তাদের জোর করে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আবার বৈধ শ্রমিকদের অনেককে কোম্পানি থেকেই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

এসব বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা, যাতে শ্রমিকদের দেশে ফেরা কমিয়ে আনা যায়। এ বিষয়ে বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোকে সক্রিয় করতে হবে। কেবল রাষ্ট্রীয় সম্পর্কের মধ্যে তৎপরতা সীমিত না রেখে অর্থনৈতিক এবং কর্মসংস্থানের বিষয়েও কূটনীতিকদের সমান গুরুত্ব দেওয়া দরকার। সরকার এরই মধ্যে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি করে দিয়েছে যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর শ্রমিকরা যাতে তাদের কাজের জায়গায় ফিরে গিয়ে কাজে যোগ দিতে পারে, সেই বিষয়ে কাজ করছে। এ ছাড়া শ্রমিকদের বাংলাদেশে ফেরত না পাঠিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশেই বিকল্প কর্মসংস্থানে যুক্ত করার অনুরোধ জানিয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর যৌথ স্বাক্ষরে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে অভিবাসী গ্রহণকারী দেশগুলোর কাছে। কিন্তু চিঠি পাঠালেই দায়িত্ব শেষ হয় না। এর  পেছনে জোরালো লবিং করার প্রয়োজন আছে এবং  সেটি করতে পারেন সংশ্লিষ্ট দেশের বাংলাদেশ মিশনের কূটনীতিকরা।

লেখক : গবেষক, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, চাইল্ড কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, উত্তরা, ঢাকা

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!