• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সড়ক দুর্ঘটনা থেকে মুক্তি চাই


মাহমুদা টুম্পা নভেম্বর ২৩, ২০২০, ১২:১৭ পিএম
সড়ক দুর্ঘটনা থেকে মুক্তি চাই

ঢাকা : সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের সৃষ্ট স্বাভাবিক জীবনযাপনের ক্ষেত্রে একটি জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভোরে সংবাদপত্র হাতে নিলেই চোখে পড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতদের মর্মান্তিক দুঃসংবাদ।  স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবার পরে বাংলাদেশের সড়কপথের যথেষ্ট উন্নতি সাধিত হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। বর্তমানে  বাংলাদেশে ১১ হাজার কিলোমিটার পাকা রাস্তা রয়েছে যার মধ্যে মাত্র ৪০% হাইওয়ে। এ দেশে মোটরযানের সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। রিকশা, ভ্যান, সাইকেল, মোটরগাড়ি, ঠেলাগাড়ি, অটোরিকশা ইত্যাদি অগণিত। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, উন্নত দেশের তুলনায় এগুলো প্রায় ৩০ গুণ বেশি। কেননা, দেশের বৃহত্তম শহরগুলোতে কর্মসংস্থানের উদ্দেশে বন্যার বেগে ছুটে আসা মানুষ আর যানবাহনের ভিড় যা উপলব্ধি করা যায় রাস্তাগুলোতে দীর্ঘ জ্যামের দিকে লক্ষ করলেই। উন্নত দেশের তুলনায় আমাদের দেশের সড়ক দুর্ঘটনার হার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি।

বিআরটিএর এক জরিপ মতে, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ছাড়াও বছরে দেড় হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এক হিসেবে দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছরে ৫ হাজারের বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় ১ হাজারের বেশি লোক প্রাণ হারায় এবং ১০ হাজারেরও বেশি লোক আহত হয়। ২০০০ থেকে ২০০৫-এ সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১৬,১৯৪ এবং আহতের সংখ্যা ১১,৭৫৭। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার যেসব চিত্র পাওয়া যায় সেগুলো সত্যিই ভয়াবহ দুঃখজনক। দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনা মুহূর্তের মধ্যে ছিনিয়ে নিচ্ছে মানুষের অমূল্য জীবন, ভেঙে দিচ্ছে অসংখ্য সাজানো সংসার। সরকারি হিসাবেই এ সংখ্যা বছরে প্রায় চারশ। ২০১৬ সালে দেশে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিল ৪ হাজার ১৪৪ জন। ২০১৭ সালে তা বেড়ে ৫ হাজার ৬৪৫ জন। আর ২০১৮ সালে ৫৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭২২১ জন নিহত হয়। প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে ২৩ হাজার ১৬৬ জন নিহত হয়। এই হিসাবে প্রতিদিন নিহতের সংখ্যা ৬৪ জন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর বাংলাদেশের জিডিপির ২ শতাংশ ক্ষতি হয়। ২ শতাংশ ক্ষতির হিসাবে এর পরিমাণ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। তবে এই ক্ষতি বাস্তবে আরো বেশি।

সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩ তম। ঢাকা বাংলাদেশের অন্যতম জনবহুল মেগাসিটি। প্রায় দেড় কোটি লোকের তুলনায় এখানে রাস্তা বা রাস্তার বাহন, যানবাহন কোনোটাই যথেষ্ট নয়। আর যেগুলো আছে সেগুলোর বেশিরভাগই জরাজীর্ণ ও সংকীর্ণ। ফলে দুর্ঘটনার সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। তুলনামূলকভাবে ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে দুর্ঘটনার হার কিছু কম। দূরপাল্লার বাস, ট্রাকই মূলত এক্ষেত্রে দুর্ঘটনার শিকার হয়। শতকরা ৮০ ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে চালকের কারণে। বেপরোয়া ও গতিসীমার অধিক দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো, ওভারটেক, অবৈধ যানবাহন, দায়িত্বজ্ঞান ও পেশাগত জ্ঞানের অভাব, ট্রাফিক আইন না মানা, যাত্রী ও নিজের নিরাপত্তার প্রতি উদাসীন, পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নেওয়া, সচেতনতা ও নিরাপত্তাবোধের অভাব, সর্বোপরি শিক্ষার অভাবের কারণে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।

যাত্রীসেবার মানোন্নয়ন, সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস ও পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রথমেই নজর দেওয়া প্রয়োজন গাড়ি চালকদের প্রতি। দক্ষ, সচেতন, দায়িত্ববান ও পেশাদার চালক তৈরির জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কার্যকর উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনা থাকা দরকার। সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করার ব্যাপারে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। এছাড়া সড়ক ও মহাসড়কের নির্মাণের ত্রুটি ও দুর্বল সড়ক ব্যবস্থাপনাও সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। যাত্রী ও পথচারীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও বিধিবিধান প্রতিপালনে সচেতন হতে হবে। নাগরিকদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা মানার সংস্কৃতির চর্চা করতে হবে। সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের যথাযথ আইন প্রয়োগে সহায়তা প্রদান করলে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করা সম্ভব। প্রশাসন, পুলিশ, বিআরটিসি, সিটি করপোরেশন, সড়ক ও জনপথ, মালিক, চালক ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে দুর্ঘটনা হ্রাসে এখনি কাজ করতে হবে। তবে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে সড়ক আইনের যথাযথ ও কঠোর বাস্তবায়নও জরুরি। যা অনেকাংশেই দেখা যায় না।

এক্ষেত্রে অনির্ধারিত স্থানে গাড়ি পার্কিং বন্ধ; লাইসেন্স প্রদানের পূর্বে চালকের দক্ষতা ও যোগ্যতা যাচাই এবং লাইসেন্সবিহীন চালকের দণ্ড; সড়ক দুর্ঘটনায় দোষীদের দ্রুত শাস্তি প্রদান; বিআরটির কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশে ভুয়া লাইসেন্স প্রদান বন্ধ এবং দোষীদের দণ্ড প্রদান; পুলিশ ও বিআরটির কাজের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা; রাস্তায় পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করা এবং ফুটপাত হকারদের দখল মুক্ত করে পথচারী চলাচলের উপযোগী করে তোলাসহ ট্রাফিক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও উন্নয়ন ঘটানো অপরিহার্য। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উল্লিখিত বিষয়গুলোর প্রতি নজর দিলেই সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে হ্রাস পাবে বলে মনে করছি।

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!