• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ুদূষণ ঠেকাতে ব্যবস্থা নিন


দিলীপ কুমার আগরওয়ালা নভেম্বর ২৬, ২০২০, ০১:২৯ পিএম
বায়ুদূষণ ঠেকাতে ব্যবস্থা নিন

ঢাকা : বায়ু মানুষের জীবন ধারণের সবচেয়ে অপরিহার্য উপাদান। বায়ুর বিশুদ্ধতা না থাকলে তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। বায়ুদূষণের মধ্যে বসবাস করলে মানুষের তাৎক্ষণিক মৃত্যু হয় না, এটা ঠিক। কিন্তু মানুষ দ্রুতই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। বাতাসে যেসব ক্ষতিকর ধূলিকণা ও রাসায়নিক পদার্থ মিশে থাকে তা খালি চোখে দেখা যায় না। কিন্তু এসব ধূলিকণা ও রাসায়নিক পদার্থের কারণে মানুষের ফুসফুস আক্রান্ত হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, রাজধানী ঢাকার বাতাস এখন জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার গতকাল রোববার থেকে টানা ছয় দিন ঢাকার বায়ুর মান আরো খারাপ হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। তাদের তথ্যমতে, গত শনিবার ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা ছিল ১২৮ ইউএস একিউআই (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স); রোববার যা হতে পারে ১৫১ ইউএস একিউআই, সোমবার ১৫৭ ইউএস একিউআই, মঙ্গলবার ও বুধবার ১৬১ ইউএস একিউআই, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার থাকতে পারে ১৬২ ইউএস একিউআই। আইকিউ এয়ার ১৫০ ইউএস একিউআই পর্যন্ত বায়ুদূষণকে নির্দিষ্ট গ্রুপের জন্য অস্বাস্থ্যকর বলছে, কিন্তু ১৫০ ইউএস একিউআই হলে তা পুরোপুরি অস্বাস্থ্যকর হিসেবে চিহ্নিত করে তারা। বায়ুর এই ধরনের মান থাকলে যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। বৃদ্ধ, শিশু, শ্বাস-প্রশ্বাসের রোগে ভোগা ব্যক্তিসহ সবাইকে বাড়ির বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে চিন্তাভাবনার পরামর্শ দিয়েছে আইকিউ এয়ার।

ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা বারবারই সতর্ক করেছে। দূষণ ঠেকাতে যেসব আইন আছে, সেগুলো না মানার কারণে ঢাকার দূষণ দৃশ্যমান হচ্ছে। নীতিমালার তোয়াক্কা না করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে চলছে সড়ক খনন। নগরীর অলিগলি খোঁড়াখুঁড়ির সময় কোনো ধরনের নিয়ম অনুসরণ করা হচ্ছে না। উন্মুক্ত স্থানে বালু, মাটি, পাথরসহ অন্যান্য নির্মাণপণ্য খোলা রাস্তায় ফেলে রাখায় সৃষ্টি হচ্ছে বায়ুদূষণ। রাজধানীতে নেওয়া মেগাপ্রকল্পগুলোর আওতায় সড়কে কাটাকাটি চলছেই।

স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। স্বাস্থ্য সুস্থ না থাকলে বাড়ি-গাড়ি, কোনো শান-সৈকত উপভোগ করা যায় না। মানুষের জীবন মানেই যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে লড়াই করতে হলে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার বিকল্প নেই। আমরা যারা ঢাকা শহরে বসবাস করছি তাদের জন্য সুস্থ থাকাটা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে। দিন দিন ধুলোর শহর হয়ে উঠছে রাজধানী। ঢাকার বাতাস এখন বিষাক্ত। রাস্তায় বেরোলেই ধুলার মুখোমুখি হতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে।

আমরা ভেজাল খাদ্য খাই। এমন কোনো একটি খাদ্য, পণ্য নেই যাতে ভেজালের অস্তিত্ব নেই। বেশিদিন ধরে পচন ঠেকাতে খাদ্যপণ্যে এমন সব রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো হচ্ছে যা খেলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়া খুব স্বাভাবিক। গাড়ির কালো ধোঁয়ায় আমরা প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছি। প্রকাশ্যে ধূমপান দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও সর্বত্র প্রকাশ্যে ধূমপান চলছে। এতে অধূমপায়ীরাও ধূমপানের ক্ষতির শিকার হচ্ছে। এর সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে ধুলাদূষণ। কোথাও বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়ারও উপায় নেই।

কিন্তু কোনো কিছুতেই যেন রোধ করা যাচ্ছে না নগরীর ধুলাদূষণ। ফলে এর বিরূপ প্রভাব দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে। বায়ুদূষণের কারণে শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি অ্যাজমা, সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, শ্বাসকষ্টজনিত রোগ), এলপিডি (লিম্ফোপ্রোলিফারেটিভ ডিজিজ) ইত্যাদি রোগও দেখা দিচ্ছে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) তথ্য অনুসারে, রাজধানীর বায়ুদূষণের ৫০ ভাগ হয় ইটভাটা থেকে, ৩০ ভাগ হয় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও সিটি করপোরেশনের বর্জ্য থেকে। ১০ ভাগ দূষণ হয় গাড়ির জ্বালানি থেকে। শিল্প কারখানার বর্জ্য থেকে ১০ ভাগ। এই দূষণ কমাতে জরুরি ভিত্তিতে খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধের পাশাপাশি রাস্তাগুলোতে প্রতিদিন পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

বায়ুদূষণের কারণে ঢাকা শহরে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরির পাশাপাশি স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস বিঘ্নিত হচ্ছে। দেখা দিচ্ছে নানা শারীরিক জটিলতা। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

লেখক : সহসভাপতি, এফবিসিসিআই; সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!