• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অতি ইচ্ছার সংকট


নাজমুল হাসান ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২১, ০১:০১ পিএম
অতি ইচ্ছার সংকট

ঢাকা : মানুষ সমাজ গড়েছিল যৌথজীবনের চেতনায়, প্রত্যয়ে। আর মানুষের দ্বন্দ্ব ও শ্রেণিদ্বন্দ্বের মধ্য দিয়েই সমাজটা এগিয়েছে। বিবর্তনের স্তরগুলো অতিক্রম করে আজকের অবস্থানে এসেছে। সমাজটা কেমন চলছে? এমন প্রশ্নে ইদানীং বিবমিষার উদ্রেক হয়। হজম না হওয়ার অনুভবে মুখ বেঁকে আসে, কিংবা চোখ বুজে যায়। এ কেবল ব্যক্তি অনুভূতি নয়—বরং প্রতিটি মূল্যবোধসম্পন্ন সভ্য মানুষের জন্যই সত্য। কারণ আজকের সমাজে মানুষের পতনের ছবিটাই সব থেকে বেশি, যা আঘাত করে প্রতিনিয়ত। মানুষ ‘মানুষখেকো’ বনেছে, মানুষ মানুষকে মারছে, মানুষ পরাজিত হচ্ছে—এটি মানতে পারি না। ঘটনাগুলোর দ্বিবিধ প্রক্রিয়া রয়েছে—একদিকে ধর্মীয় আচার ও রাজনৈতিক দুরাচার নিয়ন্ত্রিত সামাজিক মনোজীবন মানুষের স্বাধীনতায় বাধা দিচ্ছে; অবদমন করছে, মানুষের মুক্তি চাইছে না। এই মানুষেরা সমাজে গরিষ্ঠ। আবার অপরপ্রান্তে কিছু মানুষকে প্রশ্রয় দিচ্ছে নচ্ছারবৃত্তিতে, যারা আদতে বিবেক, বোধসম্পন্ন মানুষ পদবাচ্যের বাইরে। গভীরতা নয়; জীবন, সমাজ, সংস্কৃতি এবং মানুষ—সবটাই তাদের কাছে জলের ব্যাপার। তাদের অপকর্মগুলো মান্যতা পেয়েছে। কারণ পুঁজি। তাদের হাতে টাকা রয়েছে। তা দিয়ে তারা ব্যবস্থার মোটা মাথা সমাজটাকে কিনে রেখেছে। একেবারে পায়ের তলায়। ফলে সমাজ তাদের অপকর্মগুলো দেখেও দেখছে না, মরতে চলা প্রবীণের তুল্য ঘাড় ফিরিয়ে চলছে।

ব্যাপারটার এখানেই রফা হয়ে গেলে কোনো প্রশ্ন ছিল না। কারণ সমাজ নিজের পুরোনো আড়টাকে আগলে রাখবে; রক্ষা করতে চাইবে—এটিই দীর্ঘদিন থেকে চলে এসেছে, মান্যতা পেয়েছে, এটি ওর ধর্ম। কিন্তু সমাজের এই বিষাক্ত অবস্থা সংস্কৃতিকেও স্পর্শ করছে, দূষিত করছে, প্রবহমানতায় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ফলে সংস্কৃতির যে ক্ষতিটা হচ্ছে; তা বিস্তীর্ণ এবং প্রতিষ্ঠিত কাঠামো পাচ্ছে। একজন প্রকৃত মানুষ গড়ে ওঠার সামাজিক প্রতিবেশটা আর থাকছে না। এই টকে যাওয়া অবস্থাটা কয়েক শতাব্দীতেও শোধন করা যাবে কি না সন্দেহ! আমাদের জানা রয়েছে, করপোরেট ব্যবস্থা মানুষের মধ্যে অন্তহীন চাহিদা তৈরি করেছে। ‘চাই’য়ের পেছনে মানুষকে এতটা ছোটাচ্ছে যে তার আর অন্য দিকে চাইবার সুযোগ নেই। মানুষ ভুগছে লোভে, অতি ইচ্ছার সংকটে; এই ইচ্ছাটা কেবল নিজেকে ঘিরে। ফলে সমাজের যে মৌলিক চেতনা অর্থাৎ যৌথ জীবন; প্রত্যয়টি এখানে আর টিকে থাকছে না। রবীন্দ্রনাথের ‘ইচ্ছাপূরণ’ গল্পটির সঙ্গে আমাদের পরিচয় রয়েছে— যেখানে বৃদ্ধ পিতা বালক হতে চেয়েছিল; আর বালক পুত্র হতে চেয়েছিল বৃদ্ধ। সমাজের মুখ চেয়ে নিজেদের দমিত বাসনা, ইচ্ছাগুলোকে চরিতার্থ করবে বলে। আদতে বালক কিংবা বৃদ্ধ হওয়া; দুটিই ছিল তাদের অতি ইচ্ছা। ইচ্ছাদেবীর পদক্ষেপে যার বাস্তবায়ন তাদের জীবনে বিপুল বিড়ম্বনা বয়ে এনেছিল। তাদের অতি ইচ্ছার সংকটে ফেলে দিয়েছিল। তারা পুনরায় ইচ্ছাদেবীর নিকটে হাতজোড় করে মানতে বাধ্য হয়েছিল—আমাদের পূর্বের অবস্থাটা ফিরিয়ে দাও, নইলে আর পারছি না! শত বছর পূর্বে অতি ইচ্ছা চরিতার্থের জন্য ইচ্ছাদেবীর প্রয়োজন হয়েছিল। এমনকি সে ইচ্ছা অপনোদন করে পূর্বের অবস্থায় ফিরতেও। আজ আর কল্পিত দেবীর প্রয়োজন নেই। কারণ আজ সে ইচ্ছা পূরণ করছে পুঁজি বা টাকা।

এখানে আশঙ্কার কথা হলো, পুঁজি দিয়ে মানুষ ইচ্ছাপূরণ করছে বা কিনছে বটে। কিন্তু কেনার পর যে চরিত্র পাচ্ছে; সেখান থেকে আর মানুষের চরিত্রে ফিরতে পারছে না। রবীন্দ্রনাথের ইচ্ছাদেবীর গুণ ছিল দুটি—দিতেও পারে আবার ফেরাতেও পারে। কিন্তু পুঁজির গুণপনা একটি। শুধু দিচ্ছে, বানাচ্ছে। ফেরাতে পারছে না। ফলে পুঁজির দৌলতে অতি ইচ্ছাপূরণ করতে গিয়ে মানুষের মধ্যে যে বিকার ঘটছে, সেখান থেকে মানুষ আর ফিরতে পারেছে না। এ কারণে তার এক প্রকার মৃত্যু ঘটছে। রবার্ট লুই স্টিভেনসনের সৃষ্ট বিখ্যাত সামাজিক ভদ্রলোক চরিত্র ড. জেকিলের অতি ইচ্ছা হয়েছিল তিনি দেহের আকার পরিবর্তন করে নিজের অবদমিত কামনা-বাসনাগুলো চরিতার্থ করবেন। অতি ইচ্ছাটা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তিনি নিজে গবেষণাগারে একটা বিশেষ দ্রবণ তৈরি করেছিলেন, যা পানের মাধ্যমে দেহের আকার পরিবর্তন করে মি. হাইড রূপ ও নাম ধারণ করতেন। এবং অতি ইচ্ছা, কুপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করে বেড়াতেন। তারপর পুনরায় আরেকটি দ্রবণ পান করে ড. জেকিলের রূপ ধারণ করতেন; পূর্বের জীবনে ফিরতেন। বহু ব্যবহারের ফলে জীর্ণ তার দ্বিতীয় দ্রবণটি একদিন কাজ করে না। মি. হাইড থেকে তিনি আর ড. জেকিলে রূপান্তরিত হতে পারেন না, তার কুচরিত্র মি. হাউড স্থায়ী রূপ পায়। ফলে সমাজের কলঙ্ক এবং অপরাধের হাত থেকে বাঁচতে হাইডরূপী ড. জেকিল আত্মহত্যা করেন। এটা প্রতীকী ব্যাপার মাত্র। পুঁজিটাও ড. জেকিলের তৈরি এই দ্রবণের মতো। অতি ইচ্ছা বা লোভকে চরিতার্থ করাতে করাতে মানুষকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যায় যে সে আর ফিরতে পারে না। অর্থাৎ প্রকৃত মানুষটা মরে যায়। সামাজিকতাটা, হূদয়টা, সভ্যতাটা, মানুষের ধর্মটা আর থাকে না। থাকে কেবল খোলসটা। যা প্রতিদিনের কাজ করে বেড়ায়, আর গুমরে গুমরে মরে। প্রাত্যহিক মৃত্যুই তার নিয়তি, ভবিতব্য। আজকের সমাজে এমন মানুষের অভাব নেই।

২.

সামান্য চিন্তাশক্তি নিয়ে তাকালেও পরিলক্ষিত হয়, অতি ইচ্ছার এই সংকটটা সমাজ ও মানুষের সমান্তরালে সাহিত্যের জগৎকেও গ্রাস করে ফেলছে। বেগ নিয়ে, ক্রমাগত। বাঙালির এই বৌদ্ধিক দৈন্যের কালেও দেখা যায়, বইমেলায় হাজার হাজার বই প্রকাশিত হয়। গভীরভাবে দেখলে মেলাটা তার আদি চরিত্র হারিয়েছে; আজ এটি এক প্রকার ব্যবসাই বটে। বাংলা একাডেমি থেকে আরম্ভ করে অন্য সকল প্রকাশনা; সকলে বাজারটা ধরে। এ কারণে, কটা ভালো বই প্রকাশিত হলো কিংবা কটা বই বিক্রি হলো—এ হিসেবটা আমাদের সামনে আসে না। আসে টাকার হিসেব যে এত কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ রমরমা ব্যবসার তেলেভাজা খবর। ফলে সাহিত্যের যে পণ্যায়ন, লবণের দরাদরি; তার একটি বড় উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই বইমেলা। এটাও সম্ভবপর হয়েছে পুঁজির রাজত্বের ফলেই কেবল টাকা কামানোার বাসনা থেকে। এত একটা দিক মাত্র; এর সমান্তরালে প্রতি বছর বইমেলাকে কেন্দ্র করে অলেখকদের অতি ইচ্ছার পারদটাও বৃদ্ধি পাচ্ছে পাল্লা দিয়ে। বইমেলাকে অনেকেই দেখার চেষ্টা করেন একটা সাংস্কৃতিক জাগরণ হিসেবে। লেখক, পাঠকের মিলনমেলা কিংবা চিন্তা বিনিময়ের ক্ষেত্র হিসেবে। সে দৃষ্টিতে ব্যাপারটি ঠিকই আছে। কিন্তু প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যাকে যখন সাহিত্যের সেই জাগরণের খাতায় ঢোকান, আহ্লাদে গদগদ হন যে এত বই প্রকাশিত হয়েছে! তখন দ্বিমত না হয়ে, প্রশ্নের পাথরে ধার না দিয়ে অবকাশ থাকে না। কারণ এটি প্রতিষ্ঠিত যে আজকের দিনে টাকা থাকলেই যে কেউ বই প্রকাশ করতে পারে। জাতিগত লজ্জার মাথা খেয়ে বলতে হয়, এর বাইরে লেখাটাও বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। এই দুটি ব্যাপারেও ক্রিয়াশীল রয়েছে অতি ইচ্ছা। সঙ্গে পুঁজির প্রকোপ। যা সংকট তৈরি করছে, স্থায়ী ক্ষতি করছে সাহিত্যের; ভবিষ্যৎ লেখকদের।

মানুষ, সমাজ, সাহিত্যের মাহাত্ম্য ঘোচানো ব্যতিরেকেও অতি ইচ্ছার আরো বহু নষ্টামির খবর রয়েছে। পদক নামের যে লাঠিগুলো বৌদ্ধিক কাঙালদের মধ্যে বিকোনো হয়, এবার তার প্রসঙ্গে আসা যাক। সম্প্রতি আমাদের দেশের পাঠহীন, তথাকথিত লেখকসমাজের মধ্যেই ‘রে রে রব’ উঠেছে যে পদক যাচ্ছে অলেখকদের হাতে। আদতে, পদকের সঠিক মান কোনোকালেই ছিল না। কারণ পদক মানুষ বা তার মর্যাদা নিরূপণের কোনো মাপকাঠি হতে পারে না। চালুর যুগ থেকেই প্রভুকে সন্তুষ্ট করলেই কেবল পদক জোটে। নইলে পদাঘাত। এটি একটি তর্কহীন, প্রতিষ্ঠিত ব্যাপার। তারপরও এই সম্মিলিত তারস্বর প্রমাণ করে যে পদক যাচ্ছে আমাদের তথাকথিত লেখকদের থেকেও নিম্নতরদের হাতে। অর্থাৎ তারা বিস্ময় মানছেন, বাকরুদ্ধ হচ্ছেন-এ কি হচ্ছে? এখানেও অতি ইচ্ছার সর্বগ্রাসী চরিত্রটা জয়ী হচ্ছে।

সমাজ, মানুষ, সাহিত্যের জগতে এই যে অতি ইচ্ছার সংকট, সেটি অপনোদনের উপায় কী? অনেকেই বলে থাকেন, কেউ কিছু করবে? এটা তো একটা বিশ্বাস। আর বিশ্বাস মাত্রই ভাঙে, ভাঙতে বাধ্য, টেকে না। মানুষের বিশ্বাসটা ভেঙে গেছে। ভাঙল কে? পুঁজি, ভাঙল অতি ইচ্ছা। আমরা পূর্বে বলেছি, এরা কেবল ভাঙতেই জানে, গড়তে জানে না। সুতরাং ব্যবস্থাটাই ভেঙে গেছে, নষ্ট হয়ে গেছে, কৃত্রিম হয়ে গেছে। তাহলে গড়া যাবে কী করে? এর সরল উত্তর হতে পারে, বিকশিত মানুষ প্রয়োজন। যে মানুষ স্বাধীন, মুক্ত; নিজেকে জানে, নিজের সীমাটা সম্পর্কে ধারণা রাখে এবং বৌদ্ধিক চর্চা দিয়ে সকল কিছুর মাত্রটা বোঝে। যার বিচার করার ক্ষমতা আছে। সমাজে, রাষ্ট্রে এই বিকশিত মানুষ গড়ে তুলতে হবে। রাষ্ট্র চায় নিয়ন্ত্রণ করতে; আর সমাজ আত্মরক্ষা করতে। বিকশিত মানুষ স্বভাবতই তাদের এই চরিত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। সুতরাং সমাজ ও রাষ্ট্র বিকশিত মানুষ তৈরির দায় নেবে; এমনটা চিন্তা করা বাতুলতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এই বিকশিত মানুষ গড়ার অন্যতম দায় বর্তায় আমাদের দেশের মাথাওয়ালাদের ওপরে। যাদের মস্তিষ্ক সচল, যারা চিন্তাটা করতে জানেন, বলার সাহস রাখেন তাদের ওপরে। এমন একটি কথিত ও দৃশ্যত শ্রেণি যে আমাদের দেশে নেই; তা নয়। তবে তারাও ঐ অতি ইচ্ছার সংকটে ভোগা প্রাণী। ফলে মাথার থেকে পেটটা বেড়েছে আগে। এদের সম্পর্কে ‘বুদ্ধিজীবী’ শব্দটি উচ্চারণ করতে স্বস্তি বোধ করি না, করতে চাইও না। অরুচি হয়। কারণ কল্কে পাওয়ার লোভী এই জনগোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠতা সব সময় ক্ষমতার সঙ্গে, সুযোগ-সুবিধার সঙ্গে, পদ এবং পদকের সঙ্গে।

প্রবীণরা বলেন, যে-কোনো জিনিস ধাতে না থাকলে হাতে থাকে না। এদের ক্ষেত্রেও ব্যাপরটি এমনই ঘটেছে। ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দিলে পরিলক্ষিত হয়, উনিশ শতকের কথিত নবজাগরণ যে মহাপুরুষ বুদ্ধিজীবী শ্রেণি তৈরি করেছিল; তারা ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহে ঔপনিবেশিক শক্তি ব্রিটিশদের স্বার্থ সংরক্ষণে সমূহ তৎপর ছিলেন। স্বদেশের স্বাধীনতার প্রশ্ন বিসর্জন দিয়ে। আবার বঙ্গভঙ্গ কিংবা দেশ বিভাগের তুল্য ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকগুলোতেও তাদের ভাবনা, দান কিংবা পথ দেখানো কোথায়? নেই। এ কারণে, স্বার্থমগ্ন রাজনীতিকদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারাগুলো সহজ হয়েছিল। মানুষের জীবন, অস্তিত্ব, ইতিহাস, সংস্কৃতি নিয়ে কেউ মাথা ঘামাতে চাননি। ফল ভারতবর্ষের বিপুল সংখ্যক মানুষ আজো ভুগে চলেছে। এর থেকেও প্রমাণ মেলে, আমাদের কথিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণি ভাঙা কোমরের, দুর্বলপ্রাণা, ভয়ে কাঠ হয়ে থাকেন সব সময়। এ কারণে নবারুণ ভট্টাচার্যের সংজ্ঞাটা বেশ মনে ধরে—‘কী নির্জীব, কী নির্জীব/ নির্ঘাৎ ওটা বুদ্ধি জীব।’ আদতে নির্জীবতা, সাড়াহীনতাই আমাদের বুদ্ধিজীবীদের সার্বিক চরিত্র, সামষ্টিক বৈশিষ্ট্য, ঐতিহ্য। বিশ্বাসঘাতক ক্ষমতা কিংবা শাসক পাড়া দেবার আগেই তারা নিজেদের গলা নিজেরাই টিপে বসে রয়েছেন। বুদ্ধিজীবীর দায় কী? এ সম্পর্কিত সব চিন্তা গুলে খাওয়ালেও আমাদের বুদ্ধিজীবীরা তা উপলব্ধি করতে পারবেন না। কারণ এই দায় উপলব্ধি করতে হলে বিবেকি হতে হয়। এটার অভাবই এদের সব থেকে বেশি।

স্বাধীনতার পর আমাদের দেশের এক বুদ্ধিজীবীর উপাধি ছিল ‘জাতির বিবেক’। একদা ‘মানবতন্ত্র’ প্রবন্ধ লিখেছিলেন। পরবর্তীকালে, টুপি মাথায় সিরাত মজলিসে গিয়ে আহমদ ছফাকে তাজ্জব করেছিলেন। এই বুদ্ধিজীবী নিজেই লিখেছেন, বঙ্গবন্ধু তাকে বিশ্বাস নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদে বসেছিলেন। এটা তো কেবল শুরু! এরপর আরো বড় সুযোগ এসেছিল। হয়েছিলেন আইয়ুব খানের বাংলাদেশি সংস্করণ জিয়াউর রহমানের উপদেষ্টা। ব্যাপারটি হালাল করতে মিনমিনিয়েছিলেন—‘যদি ভেতর থেকে দেশের জন্য কিছু করতে পারি!’ ভাবটা এমন যেন—ভেতরে না গেলে কিছুই করা যায় না। স্বৈরাচার এরশাদের উচ্ছিষ্টও নিশ্চয়ই চাখতেন। মৃত্যু বাঁচিয়ে দিয়েছে, বেঁচে গেছেন। এই হলো আমাদের বিবেক! সব দিকে কুড়োনো যাদের ধান্দা। তাহলে আশাটা রাখব কোথায়? অনেকেই বলবেন, আর আশা! অবস্থা তো সর্বাঙ্গে ব্যথা, ঔষধ দেব কোথা? কথাটি সত্য, মান্য এবং স্বীকার্য। এর উত্তরও একটা রয়েছে—শোধনটা সবখানে দরকার। সেটা আরম্ভ করতে হবে। এবং আরম্ভটা মানুষকে দিয়েই করতে হবে। নইলে এই অতি ইচ্ছার সংকট থেকে মানুষের মুক্তি নেই।

লেখক : কলামিস্ট

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!