• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দৈনন্দিন জীবনে মোবাইল আর্থিক সেবা


নিউজ ডেস্ক মে ১১, ২০২১, ০২:৫৪ পিএম
দৈনন্দিন জীবনে মোবাইল আর্থিক সেবা

ঢাকা : সময়ের সঙ্গে বদলে যাওয়া আমাদের জীবনে নতুন নতুন অনেক কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটছে। এক সময়ে যা ছিল কল্পনারও বাইরে এখন তা আমাদের হাতের নাগালের মধ্যে চলে আসছে। আমাদের যাপিত জীবন ক্রমেই প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে ওঠায় অনেক কিছুই সহজসাধ্য হয়ে উঠেছে। কম সময়ে দ্রুত ঝক্কি-ঝামেলামুক্ত হয়ে প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সারতে পারছি। আমাদের ডিজিটাল লাইফ স্টাইলে প্রতিদিনই যোগ হচ্ছে নতুন নতুন অনেক বিষয়। মোবাইল ব্যাংকিং তেমনি একটি নতুন অধ্যায়, যা যুক্ত হয়েছে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনযাপনে। এটা বাংলাদেশে চালু হয়েছে কিছুদিন আগে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে  ব্যাংকিং সেবা দিতে শুরু করেছে অনেক ব্যাংক। মোবাইলের মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তি তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের স্থিতি মানে ব্যালেন্স, লেনদেনের অর্থাৎ অর্থ জমাকরণ ও উত্তোলন সম্পর্কিত তথ্য পেয়ে থাকেন। এর মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবার আওতার বাইরে থাকা বিরাট জনগোষ্ঠী সাশ্রয়ীভাবে ব্যাংকিং সেবা গ্রহণের সুযোগ পেয়ে চলেছেন। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এমনিতে কথা বলা আর এসএমএস আদান প্রদানে সবাই অভ্যস্ত হলেও ব্যাংকিং কার্যক্রমে মোবাইলের ব্যবহার আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। এখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ব্যাংকিং ও আর্থিক সেবার নানা কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে টাকা জমাদান ও উত্তোলন, পণ্য বা সেবাক্রয়ের (গ্যাস, বিদ্যুৎ, টেলিফোন বিল) মূল্য পরিশোধ, বেতন/ভাতা বিতরণ, ফরেন রেমিট্যান্স অর্থাৎ প্রবাসীদের উপার্জিত অর্থ প্রেরণ, সরকারি বেতন/ভাতা ইত্যাদি মাঠ পর্যায়ে পাঠানো, এটিএম থেকে টাকা তোলা ইত্যাদি। এখন মোবাইল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া সম্ভব।

ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আধুনিক ও ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর করতে ইতোমধ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এ ধরনের পদক্ষেপগুলোর মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিং অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। এ সেবার মাধ্যমে যদি দেশের শতকরা ৫০ ভাগ মোবাইল ফোন গ্রাহককে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা যায় তাহলে আমাদের সবার জীবনযাপনে গতির সঞ্চার হবে আরো অনেক বেশি। ব্যাংকে যাওয়া-আসার ঝক্কিঝামেলা থেকে বেঁচে যাবেন বেশিরভাগ গ্রাহক। ঘরে বসে কিংবা নিজের অফিসে বসেই ব্যাংকিং কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করতে পারবেন। বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর ক্ষেত্রে অধিকাংশ ব্যাংকই জোর তৎপরতা শুরু করেছে। ব্যাংকের গ্রাহকদের মধ্যে বেশ সাড়া জাগিয়েছে এসএমএস ব্যাংকিং। এ সুবিধা পেতে হলে সংশ্লিষ্ট শাখার গ্রাহক হতে হবে এবং অ্যাকাউন্ট হোল্ডার মানে হিসাবধারীকে এসএমএস ব্যাংকিংয়ের রেজিস্টার্ড সদস্য হতে হবে। এসএমএসের মাধ্যমে অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্স লেনদেনের সংক্ষিপ্ত বিবরণী, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার মেয়াদি ও সঞ্চয়ী হিসাবে মুনাফার হার ইত্যাদি জানা সম্ভব।

মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রকৃত অনলাইন ব্যাংকিং সেবা প্রদান করা হচ্ছে। সারাদেশের যে কোনো জায়গায় যে কোনো সময়ে ব্যাংকিং সেবা প্রদান সহজতর হয়ে উঠেছে। এটা তুলনামূলকভাবে বেশ সুবিধাজনক, সহজলভ্য ও নিরাপদও বটে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে পরিচালিত সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রাহক নিবন্ধন, নগদ টাকা জমাদান, নগদ টাকা তোলা, যা ব্যাংক মনোনীত এজেন্টরা তাদের নিজস্ব মোবাইল থেকে লেনদেন পরিচালনা করবেন। এ ধরনের ব্যাংকিং সেবা বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। অন্যদিকে মার্চেন্ট পরিচালিত সেবার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কেনাকাটার বিল পরিশোধ। গ্রাহকদের নিজের মাধ্যমে পরিচালিত সেবার মধ্যে রয়েছে ইউটিলিটিলি বিল পরিশোধ (বিদ্যুৎ, গ্যাস, ওয়াসার বিল), মোবাইল ফোনে তাৎক্ষণিক ব্যালেন্স রিচার্জ, ব্যালেন্স জানা, অ্যাকাউন্টের বিবরণী জানা এবং পিন পরিবর্তন। নিবন্ধিত গ্রাহকরা তাদের মোবাইল থেকে এসব লেনদেন পরিচালনা করবেন। এছাড়াও বৃহৎ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, শিল্প কারখানা, প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের বেতন/ভাতা বিতরণ, সরকারি ভাতা বিতরণ (বয়স্ক/বিধবা/মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ইত্যাদি) এবং বিদেশে কর্মরত প্রবাসীদের পাঠানো টাকা তাদের পরিবারের লোকজনদের প্রদানের কাজও আজকাল মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রমের আতওায় চলে আসায় হয়রানি, দীর্ঘসময় ক্ষেপণ ইত্যাদি অনেকাংশে দূর হয়েছে। ব্যাংক কর্তৃক মনোনীত যে কোনো এজেন্ট পয়েন্টে মোবাইল অ্যাকাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করা যাচ্ছে। বিভিন্ন মোবাইল ফোনে অপারেটর কোম্পানি ইতোমধ্যে দেশজুড়ে এজেন্ট মনোনয়ন দিয়েছেন। যারা ব্যাংকের এজেন্ট সনদ এবং মোবাইল ব্যাংকিং ব্যানার প্রদর্শন করতে পারবে তারাই ব্যাংকের গ্রাহক রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। যে কোনো মোবাইল অপারেটরের মোবাইল ব্যবহারকারী নির্দিষ্ট কোম্পানির মনোনীত এজেন্ট পয়েন্টে তার মোবাইল রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন।  ব্যবহারকারীদের মোবাইল ফোন নম্বরটিই হচ্ছে তার মোবাইল অ্যাকাউন্ট নম্বর। মোবাইল অ্যাকাউন্টের যাবতীয় গোপনীয়তা রক্ষার বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে। মোবাইল অ্যাকাউন্ট গ্রাহকরা এজেন্টের কাজ থেকে টাকা জমা দেওয়া এবং তোলার সুবিধা লাভ করছেন । অ্যাকাউন্ট খোলার সাথে সাথে টাকা জমা দেওয়া যাচ্ছে ।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা প্রথমবারের মতো ১০ কোটি ছাড়িয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদিত মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলোর নিবন্ধিত গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ৫ লাখ। যদিও এসব অ্যাকাউন্টের মধ্যে সচল রয়েছে ৩ কোটি ২৪ লাখ। কোনো অ্যাকাউন্টে টানা তিন মাস লেনদেন না হলে তা সচল হিসেবে বিবেচিত হয় না। এমএফএস সেবা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের জানুয়ারিভিত্তিক প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম-নীতি মেনে বর্তমানে ১৫টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। জানুয়ারিতে সারাদেশে এসব প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট সংখ্যা ১০ লাখ ৪৫ হাজার। মূলত কোনো অনিয়মে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেলে বা দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকলে এজেন্টের অনুমোদন বাতিল হয়ে যায়। বিকাশ, রকেটসহ বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের বাইরে ডাক বিভাগের ‘নগদ’ নিজেদের মতো করে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মোট ৫৭ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এতে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা। আগের মাস ডিসেম্বরে দৈনিক গড়ে এক হাজার ৮২৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়। জানুয়ারিতে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে লেনদেনের মাধ্যমে প্রবাসীদের পাঠানো ১৮৯ কোটি টাকা সুবিধাভোগীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ক্যাশ-ইন হয়েছে ১৭ হাজার ২১২ কোটি টাকা। ক্যাশ-আইটের পরিমাণ ১৫ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। দুই হাজার ১৯০ কোটি টাকার বেতন দেওয়া হয়েছে। ইউটিলিটি বিল পরিশোধ হয়েছে ৮০৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশের এগিয়ে চলা অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে মোবাইল আর্থিক সেবা।

মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) এখন দেশের মোট জনসংখ্যার বড় একটি অংশের প্রতি মুহূর্তের আর্থিক প্রয়োজনে অপরিহার্য ব্যাপার হয়ে উঠেছে। হাতে থাকা মোবাইল ফোনটি এখন দৈনন্দিন নানা প্রয়োজনে মানুষের নগদ টাকার চাহিদা মেটাচ্ছে। বর্তমানে দেশের জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের তথা এমএফএস সেবার গ্রাহক। সর্বশেষ, গত জানুয়ারি ২০২১-এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানেই এই আর্থিক সেবার গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১৪ কোটি। তবে সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা পাঁচ কোটির কাছাকাছি। ১২ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের দেশে এ সংখ্যা কোনোভাবেই কম বলার উপায় নেই। ব্যাংকে না গিয়ে দৈনন্দিন ছোট ছোট নানা প্রয়োজনে মানুষ এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আশ্রয় নিচ্ছেন। ছোটখাটো লেনদেনে ব্যবহার হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং, যেমন— ইউটিলিটি বিল, বেতনভাতা, কেনাকাটা, সরকারি বাতা, পেনশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে। বর্তমানে খুব সহজেই ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা আনানেয়া সম্ভব হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে। আবার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব থেকেও ব্যাংকে টাকা জমা করা যাচ্ছে। ক্রেডিট কার্ড কিংবা ব্যাংক ঋণের কিস্তির টাকাও জমা দেওয়া যাচ্ছে এর মাধ্যমে। এভাবেই শহর, বন্দর এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামের সব শ্রেণি পেশার মানুষের কাছে থাকা মোবাইল ফোনটি যেন নিজের জন্য একটি ব্যাংক হয়ে উঠছে।

২০১১ সালের মার্চে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আর্থিক সেবার বিস্ময়কর এবং দ্রুত বিকাশ ঘটেছে গত একদশক সময়ে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসা। ঘরে ঘরে এখন এর ব্যাপক ব্যবহার চলছে বেসরকারি খাতের ডাচবাংলা ব্যাংক এ সেবা প্রথম চালু করে। পরবর্তীকালে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস চালু করে বিকাশ। পরবর্তী সময়ে আরো অনেক ব্যাংক মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবার আলাদা আলাদা প্রকল্প চালু করলেও তেমন সুবিধা করতে পারেনি। বর্তমানে দেশের ১৫টি ব্যাংক মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদান করছে। বিকাশ, রকেট, নগদ, ইউক্যাশ প্রভৃতি মিলিয়ে দেশে এখন বোমাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা গ্রহণকারী গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪ কোটিতে। বর্তমানে মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা লক্ষ করা যাচ্ছে। তুলনামূলক বেশি সুযোগসুবিধা প্রদান এবং অপেক্ষাকৃত কম মাশুলে আর্থিক সেবা প্রদানে কে কার চেয়ে বেশি এগিয়ে থাকতে পারে তার প্রতিযোগিতা এক্ষেত্রে চমৎকার গতির সঞ্চার করেছে সন্দেহ নেই। অতীতে ব্যাংকের কিংবা ডাকঘরের মানি অর্ডারের মাধ্যমে আত্মীয় পরিবার-পরিজন কিংবা ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে আর্থিক স্থানান্তরে দীর্ঘ সময় লাগতো। যথাসময়ে টাকা প্রাপ্তির কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। অনেক ক্ষেত্রে অসৎ ব্যাংক কর্মকর্তা ও ডাকঘরের কর্মচারীদের দৌরাত্ম্যে অসহায় বোধ করতেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু এখন মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস ব্যাপকভাবে চালু হওয়ায় অতীতের যত দুর্ভোগ, কষ্ট, যন্ত্রণার অবসান হয়েছে।

বর্তমান করোনাকালীন সংকটময় সময়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবহার আরো বেশি বেড়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যাংকে গিয়ে আর্থিক সেবা গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না সবার পক্ষে। এই দুঃসময়ে ভিড়বাট্টা এড়িয়ে অনেকেই আজকাল মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রয়োজন সারছেন। একজন শিল্প কারখানার মালিকের জন্য যেমন সুবিধা করে দিয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং, তেমনিভাবে কারখানার সাধারণ শ্রমিকের জন্যও আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে। এখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাস শেষে বেতনভাতার টাকা চলে যাচ্ছে শ্রমিকদের মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে। সাধারণ রিকশাচালক, কাজের বুয়া, দিনমজুর সপ্তাহ শেষে উপার্জিত যে টাকা গ্রামে থাকা পরিবারের কাছে অনেক ঝুঁকি নিয়ে পাঠাতো সেই ঝুঁকির দিন এখন আর নেই। কারণ, এখন মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে দিনে দিনেই টাকা দূর গ্রামের বাড়িতে পরিবার পরিজনের কাছে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ইতিবাচক ব্র্যান্ডিংয়ে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার দ্রুত বিকাশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে সন্দেহ নেই। এক্ষেত্রে গ্রাহক সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে গণ্য করা হচ্ছে বর্তমানে। মোবাইল ব্যাংকিং আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতিতে অনন্য গতির সঞ্চার করেছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স গ্রামের পরিবার পরিজনের কাছে সরাসরি পৌঁছে দিতে মোবাইল ব্যাংকিং কর্যকর ভূমিকা রাখছে। সিম রেজিস্ট্রেশন হওয়ায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাও বেড়েছে। নগদ টাকা নিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার ক্ষেত্রে যে শঙ্কা, ভয়, অনিশ্চয়তা নিরাপত্তাহীনতা ছিল তা পুরোদমে দূর করেছে মোবাইল ব্যাংকিং।

আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির বিকাশ এবং এর সুষম ব্যবহার আমাদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে করেছে ত্বরান্বিত। মোবাইল ব্যাংকিং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিচ্ছে— একথা বললে খুব বেশি বলা হবে না। আমাদের অর্থনীতিতে গত একদশকে অনেক সমৃদ্ধি ঘটেছে, উন্নয়নের নতুন নতুন দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হয়েছে। এসবের পেছনেও রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের উদ্ভাবনী সেবা। আমাদের দৃঢ় প্রত্যাশা, আগামী দিনগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দিক নির্দেশনা ও নিয়মনীতি মেনেই দেশে মোবাইল ব্যাংকিং আরো বিকশিত হবে এবং দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার ব্যাপারে এটি আরো জোরালো ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

লেখক : সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!