• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকার জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হবে কবে


ইয়াছিন ইসলাম জুন ৯, ২০২১, ১১:২৩ পিএম
ঢাকার জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হবে কবে

ঢাকা : পৃথিবীর বৃহত্তর বদ্বীপ হলো বাংলাদেশ আর এই বদ্বীপের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো বহু বৃষ্টিপাতের অঞ্চল ও পানিপ্রবাহের একটি বিশাল করিডোর বা বিশাল পানির পাত্র। বাংলাদেশ ভৌগোলিক প্রক্রিয়ায়ই নাতিশীতোষ্ণ এলাকায় অবস্থিত। এই এলাকায় বন্যা, বৃষ্টিপাত, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি সমস্যার মোকাবিলা করেই চলতে হয়। তবে এখানে বর্তমানে সামান্য বৃষ্টিই দেশের মানুষের জন্য দুর্যোগ হয়ে দেখা দেয়। এর প্রধান কারণ জলাবদ্ধতা।

বিগত কয়েক বছর যাবৎ দেখা যায়, সামান্য বৃষ্টিতেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতার জন্ম দিচ্ছে। এর ফলে নগরবাসীকে পোহাতে হয় সীমাহীন দুর্ভোগ। সমস্যায় পড়ে অফিস, স্কুল-কলেজ ও কর্মমুখী মানুষ। দেশের রাজধানীর এমন চিত্র হলে দেশের অন্যান্য শহরের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। ঢাকার এই জলাবদ্ধতা নতুন কোনো বিষয় নয়। প্রতি বছরই এই জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য বাজেটের পরিধি বাড়লেও বাড়েনি উন্নয়নের চিত্র। নগরবাসীর নাগরিক সুবিধা এখনো নিশ্চিত হয়নি। গত ১ জুন ৩ ঘণ্টার বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয় তীব্র জলাবদ্ধতা। হঠাৎ করে তীব্র জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে পড়ে নগরবাসী। শহরের অনেক নিচু এলাকা তলিয়ে যায়। অনেক বাসাবাড়ি এবং অফিসেও পানি ঢুকে পড়ে। কোথাও আবার এই বৃষ্টির পানি ছাড়াও জমে থাকে স্যুয়ারেজের নোংরা পানি। শহরের জলাবদ্ধতা না কমে বরং তা ক্রমেই বাড়ছে। বর্ষাকালে এই সমস্যা আরো গুরুতর হয়ে ওঠে।

ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ঢাকা ওয়াসার থেকে খালগুলোর সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ দেওয়া হয় ঢাকা দক্ষিণ এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে। সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের কাছে দায়িত্ব দিলেও এর আগে তা ঢাকা ওয়াসার কাছেই ছিল। সারা বছরই ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতি এবং পয়ঃনিষ্কাশনের কথা বললেও তার বাস্তবিক চিত্র দেখা যায় না। ২০০১ সাল থেকে ঢাকা ওয়াসা জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ২০০ কোটিরও বেশি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করে। প্রকল্পের আওতায় নগরীর ২৬৫ কিলোমিটার এলাকায় ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন স্থাপন, বক্সকালভার্ট, খালের পানি নিষ্কাশনসহ বিভিন্নভাবে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য কাজ শুরু হয়। পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্প তিন মেয়াদে বেড়ে ২০১০ সালে শেষ হয়। এতে এর নির্মাণ ব্যয় ১৪৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা থেকে বেড়ে ২০৩ কোটি ২৬ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। জলাবদ্ধতা নিরসনে এত বড় মেগাপ্রজেক্ট শেষ করেও পরিত্রাণ পাওয়া যায়নি জলাবদ্ধতা থেকে। পরে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে আরো ১৮০ কোটি টাকা সরকার থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয় ২০১০ সালে। তবে প্রতি বছর এমন বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হলেও কার্যকর কোনো সুবিধা পায়নি নগরবাসী।

গত ১ জুন ৩ ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরীর জলাবদ্ধতা দেখা দিলে ফের আলোচনায় আশে সরকারের এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মকাণ্ড নিয়ে। এ সময় জমে থাকা পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুজন মারা যায়। প্রতি বছরই আশ্বাস, নানা প্রকল্প আর কোটি কোটি টাকা খরচ করেও জলাবদ্ধতার কোনো সমাধান করতে পারছে না সরকার। সমন্বয়হীনতা এড়াতে ওয়াসা থেকে জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশনকে দিলেও, এবারো বর্ষা মৌসুমে জলে হাবুডুবু খেতে হবে নগরবাসীকে তা সাম্প্রতিক জলাবদ্ধতা প্রমাণ করে। কেননা দায়িত্ব পাওয়ার পরেও আশানুরূপ কোনো কর্মকান্ড সংঘটিত করতে পারেনি দুই সিটি করপোরেশনের কেউই।

এ বিষয়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বক্তব্য হচ্ছে—ওয়াসা থেকে খালগুলো বুঝে পেলেও তার নিষ্কাশন ব্যবস্থা এখনো পুরোপুরি সম্পাদন করা সম্ভব হয়নি। ফলে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য আরো সময়ের প্রয়োজন। তারা আরো বলেছে, আগামী ২ বছরের মধ্যে জলাবদ্ধতা একটি সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আশা যাবে। সাধারণত বৃষ্টির পানি ৩ ঘণ্টা কোথাও অবস্থান করলে সেটাকে জলাবদ্ধতা বলা হয়। তবে সিটি করপোরেশন এই সময়ের আগেই জল নিষ্কাশনে সক্ষম হয় এবং তাদের লক্ষ্য ১ ঘণ্টার মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। এ ছাড়া ঢাকা ওয়াসার থেকে পাওয়া ২৬টি খাল ৩৮৫ কিলোমিটার এলাকার বড় নালা এবং ৪টি পাম্প স্টেশনের রক্ষণাবেক্ষণসহ পূর্বে দুই সিটির ২২১১ কিলোমিটার নালার কাজ এই অল্প সময়ে সম্ভব নয় বলেও তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

নগরীর জলাবদ্ধতা নিয়ে বিগত সময় ধরেই আমরা শুধু আশার বাণীই শুনে আসছি। কার্যত এর বাস্তবচিত্র তেমন চোখে পড়ে না। কিন্তু শুধু প্রশাসনকে দুষলেও চলবে না, এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষেরও অনেক কিছু করণীয় রয়েছে। বাসার ময়লা-আবর্জনা দেখা যায় প্রায়ই পাশের ড্রেনে ফেলে রাখা হয়। এর ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে নাগরিকরা সচেতন নয়। আর একটি উন্নয়নশীল দেশের নাগরিকরা সচেতন না হলে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা সম্ভবও হয় না। এ ক্ষেত্রে নাগরিকদের এবং সিটি করপোরেশনের একযোগে কাজ করতে হবে।

নিজ এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ড্রেনে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে নগরবাসীকে। জলাবদ্ধতা সমস্যা নগরের বসবাসরত সবার। সুতরাং এর প্রতিকারও করতে হবে সবার সংঘবদ্ধ কাজের মাধ্যমে। সিটি করপোরেশনকে আরো উদ্যোগী হতে হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা চালাতে হবে। শুধু বাজেটে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য অর্থ বাড়ালেই হবে না, সঠিক তদারকির মাধ্যমে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতির শঙ্কা করলে বিচার বিভাগীয় জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে সংশ্লিষ্টদের। প্রতি বছর বর্ষা আসলেই তড়িঘড়ি করে কাজ শুরু না করে সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করার সংস্কৃতি চালু করতে হবে। যেসব খাল এখনো দখলদারদের আওতায় আছে তা দখলমুক্ত করে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

নগরীর জলাবদ্ধতা একটি জাতির উন্নতির অন্তরায়। দেশ উন্নত হচ্ছে, সঙ্গে দেশের অবকাঠামোগত সামগ্রিক উন্নয়নও জরুরি। ঢাকা দেশের প্রাণকেন্দ্র, তাই এখানে জলাবদ্ধতা কখনোই কাম্য নয়। শুধু আশ্বাস বা আশার বাণী নয়, নগরবাসী এখন কাজের মাধ্যমেই এর বহিঃপ্রকাশ দেখতে চায়।

লেখক : শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!