• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
পহেলা বৈশাখ

শুভ বাংলা নববর্ষ


দ্বীন ইসালাম আরিয়ান এপ্রিল ১৪, ২০২২, ০৩:২৯ পিএম
শুভ বাংলা নববর্ষ

ঢাকা : আজ পহেলা বৈশাখ। বাঙালির জীবনে আজ নতুন বছরের প্রথম দিন, নতুন বারতা। আজকের সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে সূচনা হলো বাংলা ১৪২৯ সালের। করোনা মহামারীর কারণে বৈশ্বিক দুর্যোগের সময় আমাদের জীবন ছিল অবরুদ্ধ। গত দু’বছর ঘরে বসেই দেশের মানুষ মোকাবেলা করেছে এই মহামারীর। তবে এখন পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে।

আজ পহেলা বৈশাখের বাংলা ঢোলের বাজনা বাজবে পথেঘাটে। প্রাণে প্রাণ মিলবে মাঠে-ময়দানে, আজ পহেলা বৈশাখের উৎসব হবে বাংলার ঘরে ঘরে। ১৪২৮-এর আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্নার হিসাব চুকিয়ে শুরু হবে নতুন এক পথচলা। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সার্বজনীন উৎসবে ঘরে ঘরে মেতে ওঠা বাঙালি গাইবে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’।

এক সময় নববর্ষ পালিত হতো আর্তব উৎসব বা ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে। তখন এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল কৃষির, কারণ কৃষিকাজ ছিল ঋতুনির্ভর। পরে কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য মোঘল সম্ট্রাট আকবরের সময়ে বাংলা সন গণনার শুরু হয়। হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌর সনের ওপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত হয় নতুন এই বাংলা সন। অতীতে বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। এটি পুরোপুরিই একটি অর্থনৈতিক ব্যাপার। গ্রামে-গঞ্জে-নগরে ব্যবসায়ীরা নববর্ষের প্রারম্ভে তাদের পুরানো হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করে হিসাবের নতুন খাতা খুলতেন।

এ উপলক্ষে তারা নতুন-পুরাতন খদ্দেরদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টি বিতরণ করতেন এবং নতুনভাবে তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগসূত্র স্থাপন করতেন। চিরাচরিত এ অনুষ্ঠানটি আজও পালিত হয়।

মূলত ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে।

পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে।

 এ সময় ঢাকায় নাগরিক পর্যায়ে ছায়ানটের উদ্যোগে সীমিত আকারে বর্ষবরণ শুরু হয়। মহান স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে এই উৎসব নাগরিক জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালির অসাম্প্রাদায়িক এবং গণতান্ত্রিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে থাকে।

কালক্রমে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান এখন শুধু আনন্দ-উল্লাসের উৎসব নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী ধারক-বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে।

১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। যা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।

গত দুই বছর করোনার কারণে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা সম্ভব হয়নি তবে এবছর মঙ্গল শোভাযাত্রার অনুষ্ঠানটি হচ্ছে।

বাঙালি সংস্কৃতি চেতনার অবিচ্ছেদ্য অংশ পহেলা বৈশাখে সবাইকে আমরা শুভেচ্ছা জানাই।

সাম্প্রদায়িকতা, অপশক্তিমুক্ত হোক বাঙালির জীবন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!