• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গণমাধ্যমের মূল সংকট কোথায়?


নিয়ন মতিয়ুল মে ১৬, ২০২২, ০১:০৭ পিএম
গণমাধ্যমের মূল সংকট কোথায়?

ঢাকা : ‘চরম এক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আমাদের গণমাধ্যম (সংবাদমাধ্যম)’...এমন বক্তব্য চারপাশে হরদম শুনতে পাচ্ছেন আপনি। কিন্তু কখনও কি ভেবেছেন- কী সেই সংকট? কীভাবেই বা তার শুরু? হয়তো মনে মনে ভেবেছেন, উত্তরও খুঁজেছেন। তবে কূলকিনারা করতে পারেননি। তাহলে চলুন এবার জেনে নিই, এ ব্যাপারে দেশের বরেণ্য সম্পাদকেরা কী বলছেন-

এক.

‘দেশবরেণ্য’ এক সম্পাদক বলেছেন, ‘সাংবাদিক নেতাদের দুইজনের বক্তব্য ভিন্ন। এই ভিন্ন বক্তব্যের মধ্যেই গণমাধ্যমের মূল সংকট লুকিয়ে আছে’।

বক্তব্যের বিশ্লেষণ করলে কী দাঁড়ায়? ১. ‘দুই নেতা দুই ধরনের বক্তব্য দিতে পারবেন না। ২. নেতারা যদি ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলে বিশ্বাসীও হন, তাহলেও দুইজনের বক্তব্য এক হতে হবে।

সিদ্ধান্ত: দুই নেতার বক্তব্য এক হলেই সংকট দূর হবে।

দুই.

মেধাবী এক গণমাধ্যম উদ্যোক্তা বলেছেন, সত্তর আশির দশকে মেধা, দক্ষতা আর সাহসিকতার সমন্বয়ে যে সাংবাদিক নেতৃত্ব গড়ে উঠেছিল, এখন তা নেই। ফলে চ্যালেঞ্জটা অনেক বেশি বেড়ে যাচ্ছে।

বক্তব্যের বিশ্লেষণ: ১. সত্তর-আশির দশকেই ভালো সাংবাদিকতা হয়েছে। তখন সাংবাদিক নেতারা মেধাবী ও দক্ষ ছিলেন। ২. এখন যারা সাংবাদিকতা করছেন, তারা মেধাবী নন। ৩. দক্ষ-মেধাবী সাংবাদিকের অভাবেই চ্যালেঞ্জটা বেশি।

সিদ্ধান্ত: সংকট দূর করতে মেধাবী সাংবাদিক প্রয়োজন।

তিন.

প্রখ্যাত এক সম্পাদক বলেছেন, ‘সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের পাশে নাগরিক সমাজ না দাঁড়ালে দেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা রক্ষা করা সম্ভব নয়। আবার স্বাধীন সাংবাদিকতা ছাড়া গণতন্ত্র কোনোভাবেই বিকশিত হওয়া সম্ভব নয়’।

বক্তব্যের বিশ্লেষণ: ১. নাগরিক সমাজ ছাড়া গণতন্ত্র বিকশিত হয় না। ২. নাগরিক সমাজ ছাড়া গণমাধ্যমও অচল। ৩. গণতন্ত্রের জন্য গণমাধ্যমের চেয়ে বেশি জরুরি নাগরিক সমাজ।

সিদ্ধান্ত: নাগরিক সমাজ পাশে থাকলেই গণমাধ্যমের সংকট দূর হবে।

চার.

সাংবাদিক নেতাদের ভিন্ন বক্তব্য নিয়ে প্রশ্নকারী বরেণ্য সেই সম্পাদকের দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল- কোন নাগরিক সমাজ সাংবাদিকদের পক্ষে থাকবে? এই নাগরিক সমাজও তো স্পষ্টভাবে রাজনৈতিক বিভাজনে বিভাজিত।

বক্তব্যের বিশ্লেষণ: ১. রাজনৈতিকভাবে বিভাজিত নাগরিক সমাজের বক্তব্য বিপরীতমুখী। ২. বিভাজিতরা সাংবাদিকদের পক্ষে থাকে না। ৩. সাংবাদিক নেতা আর নাগরিক সমাজের মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন থাকা একেবারেই ঠিক নয়।

সিদ্ধান্ত: সাংবাদিক নেতা আর নাগরিক সমাজের বক্তব্য এক হলেই গণমাধ্যমের সংকট কেটে যাবে।

পাঁচ.

আরেক বরেণ্য সাহসী সম্পাদক বলেছেন, সাংবাদিকরা ভয়ের সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে ‘সেলফ সেন্সরড’ হয়ে যাচ্ছেন। এতে শেষ বিচারে দেশ-জাতিরই ক্ষতি হচ্ছে।

বক্তব্যের বিশ্লেষণ: ১. সাংবাদিকতা ঘিরে ভয়ের সংস্কৃতি গড়ে উঠছে। সাংবাদিকরা এখন ভীত সন্ত্রস্ত্র। ২. তাদের সেলফ সেন্সরশিপে দেশ-জাতির ক্ষতি। ৩. যারা সাংবাদিকদের ভয়ের মধ্যে রেখেছে তারাই জাতির শত্রু।

সিদ্ধান্ত: সাংবাদিকদের ভয় দূর হলেই গণমাধ্যমের সংকট কেটে যাবে।

ছয়.
গণমাধ্যমের বরেণ্য এক উদ্যোক্তা বলেছেন, সাংবাদিকদের সমৃদ্ধ জীবনমান নিশ্চিত করা না হলে গণমাধ্যমের বিকাশ আর শক্তিশালী অবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এজন্য পত্রিকার আয় বাড়াতে হবে। তবে পত্রিকার নিজস্ব আয়ে সেটা সম্ভব নয়। সরকার ও মালিক পক্ষের সহযোগিতা প্রয়োজন।

বক্তব্যের বিশ্লেষণ: ১. গণমাধ্যমকে শক্তিশালী করতে সাংবাদিকদের জীবনমান সমৃদ্ধ হতে হবে। ২. সমৃদ্ধ জীবনমান নির্ভর করছে পত্রিকার আয় বাড়ার ওপর। ৩. পত্রিকার নিজের আয়ের সঙ্গে যোগ করতে হবে সরকার আর মালিকপক্ষের আয়।

সিদ্ধান্ত: সরকার আর মালিক পক্ষই আসল ত্রাণকর্তা। তাদের বদান্যতাতেই দূর হতে পারে গণমাধ্যমের বিদ্যমান সংকট।

সাত.

আরেক গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব বলেছেন, সংবাদপত্রগুলো নিজের আয়ের ওপর না দাঁড়ালে শুধু অন্য প্রতিষ্ঠানের সিএসআর (করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি) কার্যক্রম হিসেবে টিকিয়ে রাখা যাবে না।

বক্তব্যের বিশ্লেষণ: ১. নিজের আয়েই চলতে হবে পত্রিকাগুলোকে। ২. করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা গৌন। ৩. নিজের আয়ের ওপর না দাঁড়ালে পরগাছা হতে হয়। যার নিজস্ব কোনো স্বাধীনতা থাকে না।

সিদ্ধান্ত: সংবাদপত্রগুলো নিজের আয়ের ওপর দাঁড়ালেই সংকট কেটে যাবে।

সার্বিক মন্তব্য

দুই নেতার বক্তব্য এক হতে গেলে রাজনীতি পরিহার করতে হবে। মেধাবী সাংবাদিক আর নাগরিক সমাজকে পেতে হলে দালালি সাংবাদিকতা ছাড়তে হবে। সাংবাদিকদের ভীতি কাটাতে মন্ত্রী বা রাজনীতিকদের নয়, নিজেদেরই তারকা ভাবতে হবে। এসব কি সম্ভব? যারা বয়ান দিয়েছেন তারা কি পারবেন?

বিরূপ মন্তব্য

শেষ বিচারে কিন্তু সরকার আর মালিক পক্ষই আসল ত্রাণকর্তা। তাদের বদান্যতা পেতে হলে অবশ্যই তোষামোদ জিইয়ে রাখতেই হবে। কারণ, সরকার আর মালিকপক্ষের সহায়তা ছাড়া সংবাদপত্রগুলো নিজের আয়ের ওপর দাঁড়াতে পারবে না কখনই।

শেষ প্রশ্ন: তাহলে গণমাধ্যমের সংকট কি কাটবে বলে মনে হচ্ছে আপনার?

# ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস: ডিজিটাল নজরদারিতে সাংবাদিকতা’ শিরোনামে গত ১৫ মে সম্পাদক পরিষদ’ আয়োজিত আলোচনা সভা থেকে বক্তব্যগুলো সংগ্রহ করা।

(গণমাধ্যম ভাবনা: ১৬ মে, ২০২২, এলিফেন্ট রোড, ঢাকা)

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!