• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লিখে কী হয়?


নিয়ন মতিয়ুল মে ১৮, ২০২২, ১২:০৭ পিএম
লিখে কী হয়?

ঢাকা : রাজধানীতে সাংবাদিক বা সংবাদকর্মীর সংখ্যা কত? সংগঠনগুলোর সদস্য সংখ্যা থেকে অনুমান করা যায় দশ হাজারের কম অথবা বেশি। ঢাকার বাইরে কত? প্রতি জেলায় ১৫০-২০০ ধরলে ১০ হাজারের বেশি। সব মিলিয়ে দেশে ২০-২৫ হাজারের কম বা বেশি সাংবাদিক কর্মরত। এর মধ্যে যারা প্রতিবেদন তৈরি করেন তাদের সংখ্যা ১০ হাজারের মতো হবে।

এখন যদি ধরে নিই একজন প্রতিবেদক দিনে অন্তত একটি করে সংবাদ লেখেন। তাহলে প্রতিদিন ১০ হাজার সংবাদ তৈরি ও প্রকাশিত হয়। যেসব সংবাদের মধ্যে চলমান ঘটনা ছাড়া অন্তত ৫ হাজার বিশেষ প্রতিবেদন হওয়ার কথা। যেখানে রাজনীতি, অর্থনীতি, সরকারি, বেসরকারিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা মহলের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দিক নির্দেশনা থাকবে। এক একটা খাতের এক বা একাধিক প্রতিবেদনও থাকতে পারে।

এখন আসুন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরিসংখ্যান মেলানোর চেষ্টা করি। হিসাব মতে, দেশে বাংলা ইংরেজি মিলে প্রায় দেড় হাজার দৈনিক পত্রিকা, তিন ডজন টিভি, অর্ধডজন রেডিও আর দশ হাজারের বেশি অনলাইন নিউজপোর্টাল রয়েছে। এর মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ২০-২৫টি পত্রিকায় দিনে ১০০-৩০০টি ‘মৌলিক’ সংবাদ প্রকাশ হয়। একইভাবে শীর্ষস্থানীয় ১০-১৫টি নিউজপোর্টালে দিনে ২০০-৩৫০টি পর্যন্ত ‘নিজস্ব’ সংবাদ প্রকাশিত হয়।

আর ২০-৩০টি পোর্টাল ধারদেনা করে হলেও দিনে ১০০-১৫০টি সংবাদ প্রকাশ করে। বাকিসব নিউজ পোর্টালে অনুলিপি বা ছায়ানির্ভর ৫-১০টি করে ধরলেও দিনে অর্ধলক্ষ সংবাদ প্রকাশিত হয়। ঢাকার বাইরেসহ টিভি আর রেডিও হিসাবে ধরলে দেশের মোট সংবাদকক্ষ থেকে দিনে অন্তত ২০ হাজার তরতাজা সংবাদ প্রকাশিত হয়।

প্রতিদিন ২০ হাজার করে ধরলে মাসে ৬ লাখের মতো সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিপুল পরিমাণ এই খবরের বন্যায় তো সব অন্যায় ভেসে যাওয়ার কথা। দুষ্টু শ্রেণির প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আমলা, লোভী জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক, হিংস্র সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, যৌন হয়রানিকারীদের তো ‘খবর’ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা কি হচ্ছে?

মাঠে গিয়ে যখন কোনো সংবাদকর্মী বুকের ছাতি ফুলিয়ে বলেন, ‘বেশি বাড়াবাড়া করবেন না মিয়া! জানেন আমি কে? একদম ‘খবর’ করে দেব...! তখন এরকম খরবকরা ডায়ালগে আর কেউ আর ভয় পান না। বরং উল্টো বলেন, ‘যান মিয়া, আপনার যা খুশি লেখেন। আমার চুলও ছিঁড়তে পারবেন না’।

আজ থেকে দুই দশক আগেও এক একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে সত্যিই খবর হয়ে যেত। আর এখন দু’একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ছাড়া বাকিগুলোর কোনো ‘ধার’ই নেই, একেবারেই ‘ভোঁতা’। এমন কি টকশোতে তারকাখ্যাতি পাওয়া দেশের পাওয়ারফুল অনেক সম্পাদকের পত্রিকাতেই ভোঁতা অস্ত্রের বেশি ঝনঝনানি। আর গণমাধ্যমে খবরের ‘ধার’ যত কমছে, সাংবাদিকদের ‘হাঁটুভাঙা’ স্বভাব ততই বাড়ছে।

(গণমাধ্যম ভাবনা: ১৮ মে, ২০২২। এলিফেন্ট রোড, ঢাকা)

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!