• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোটরসাইকেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হোক


সালাহ উদ্দিন মাহমুদ জুলাই ৭, ২০২২, ০১:০২ পিএম
মোটরসাইকেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হোক

ঢাকা : একা বা দুজন দ্রুত কোথাও যেতে চাইলে দুই চাকার মোটরসাইকেল প্রথম পছন্দ। যাদের ব্যক্তিগত চার চাকার গাড়ি আছে, তাদের কথা বলছি না। এ ছাড়া রাইড শেয়ারিংয়ে মোটরসাইকেলের চাহিদাই বেশি। জরুরি কাজে রাজধানীর ভেতরে দ্রুত যাতায়াতের ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে। রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থাকার চেয়ে একটু বেশি টাকা খরচ হলেও বাইকে যেতে আগ্রহবোধ করেন সবাই। এমনকি ইদানীং ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলের সংখ্যাও বেড়েছে। সহজ ও ঝামেলামুক্ত গন্তব্যে পৌঁছাতে এর জুড়ি নেই। যখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে মোটরসাইকেল; ঠিক তখন একটি নিষেধাজ্ঞা সমগ্র বাইকপ্রেমীর বুকে যেন কুঠারাঘাত করেছে। এর পেছনে অবশ্য নিয়ন্ত্রণহীন চালকের অদূরদর্শিতাও দায়ী। তবে তার জন্য সুষ্ঠু ও সহজ-গ্রহণযোগ্য সমাধান কাম্য।

গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, পদ্মা সেতুর ওপর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই তরুণ নিহত হন। তাই ঈদুল আজহার আগে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চালুর কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। গত ৩ জুন মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। তিনি আরও জানান, পদ্মা সেতুতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্যামেরা বসবে, স্পিড গানও বসানো হচ্ছে। এগুলো বসলে তারপর সুবিধা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ঈদের আগে চালু হতে পারে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঈদের আগে চালু হওয়া খুব ডিফিকাল্ট, আমার মনে হচ্ছে। ঈদের আগে মনে হয় না।’

এ ছাড়াও এক জেলায় নিবন্ধিত মোটরসাইকেল অন্য জেলায় প্রবেশ করতে পারবে না ঈদের সাত দিন। সম্প্রতি সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন বিভাগে অনুষ্ঠিত এক সভাশেষে সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী জানান, ঈদুল আজহায় ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল (রাইড শেয়ারিং) মহাসড়কে চলতে পারবে না। রাইড শেয়ারিং শুধু রাজধানী ঢাকাসহ অনুমোদিত এলাকায় চলতে পারবে। ঈদুল আজহার আগের তিন দিন, ঈদের দিন ও ঈদের পরের তিন দিন সারা দেশের মহাসড়কে যৌক্তিক কারণ ছাড়া মোটরসাইকেল চালানো যাবে না। পাশাপাশি এক জেলায় রেজিস্ট্রেশন করা মোটরসাইকেল অন্য জেলায় চালানো যাবে না। তবে যৌক্তিক ও অনিবার্য প্রয়োজনে পুলিশের অনুমতি নিয়ে মোটরসাইকেল চালানো যাবে।

আমার অনেক বন্ধু এবং আত্মীয়কে দেখেছি বাইকে নিয়মিত অফিস করতে। যে কোনো ছুটি বা উৎসবে বাইক নিয়ে বাড়ি যেতে। পদ্মা সেতু হওয়ার আগেও তারা ফেরিতে নদী পার হয়ে বাড়ি গেছেন। অথচ কাঙ্ক্ষিত সেতু হওয়ার পর তারা বাইক নিয়ে চিন্তিত। বাইক নিয়ে ঈদের ছুটিতে বাড়ি যেতে পারবে না বলে আশাহত। বাইক ঢাকায় রেখে যাওয়াও অনিরাপদ। ফাঁকা ঢাকায় গ্যারেজ থেকে খোয়া গেলে তার দায় কে নেবে? তাই আমার কাছে মনে হচ্ছে—বাইকের ওপর নিষেধাজ্ঞা কি যৌক্তিক? যেসব কারণে এ নিষেধাজ্ঞা; সেসব সমস্যার কি সহজ সমাধান ছিল না? তবে কি মোটরসাইকেল চালকদের অভিযোগ সত্য? পরিবহন মালিকদের খুশি করতেই কি এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে? বাইকের কারণে পরিবহনের যাত্রী কমে যায় বলে এমন কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে? যদি তা-ই হয়, তবে তা খুবই দুঃখজনক। এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত থেকে অবিলম্বে সরে আসা উচিত। সব ধরনের নাগরিকের সুবিধা নিশ্চিত করাই কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।

তাই তো ঈদযাত্রায় মহাসড়কে মোটরসাইকেলের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে চলাচলের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। ৫ জুলাই গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এমন দাবি করেন। বিবৃতিতে বলা হয়, বিগত ঈদুল ফিতরে প্রায় ২৫ লাখ মোটরসাইকেল রাস্তায় নামার কারণে স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা লক্ষ করা গেছে। তবে সড়ক দুর্ঘটনাও বেড়েছে। তাই আপাতত গণপরিবহন সংকট সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রা নিষিদ্ধ না করাই যৌক্তিক হবে। কারণ একটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুজন নিহত হওয়ায় বাইক চালানো বন্ধ করে দেওয়াটা কোনো সমাধান নয়। আমরা দেখেছি, ওই বাইকের স্পিড ছিল নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তাই আগে স্পিড নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে মহাসড়কে আইনের প্রয়োগ করে হলেও মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দেওয়া হোক।

সবচেয়ে অবাক লাগে, আমাদের দেশে মাথা ব্যথা হলে যখন মাথা-ই কেটে ফেলার চিন্তা করা হয়। বিষয়টি কতটা হাস্যকর, তা চিন্তা করলেও হাসি পায়। বিকল্প কিছু যেন ভাবতেই পারেন না কেউ। অথচ খুব সহজে অবশ্যই কিছু নীতিমালা আরোপ করা যায়। যেমন— প্রয়োজন ছাড়া বাইক নিয়ে বের হলে আটক বা জরিমানা করা; অপ্রাপ্তবয়স্ক কারো হাতে বাইকের স্টিয়ারিং দেখলে আটক করা; মহাসড়কে বাইকের স্পিড লিমিট করে দেওয়া ও মনিটরিং করা; দূরযাত্রায় অতিরিক্ত লাগেজ-ব্যাগেজ নিয়ে না যাওয়া বা রোধ করা; একটি গাড়িতে পরিবারের একাধিক সদস্য নিয়ে চলতে না দেওয়া; এবং বাইকের চালক ও আরোহীর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

এমন কিছু নীতিমালা আরোপ করে হলেও মোটরসাইকেল চলাচলের সুযোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করি। তাই তো নিরাপত্তা ইস্যুতে আন্তঃমহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাইকাররাও। ঈদুল আজহা উপলক্ষে সঠিক আইন প্রয়োগের মাধ্যমে আবারও বাইক চলাচলের অনুমতি দেওয়ার দাবি জানান তারা। ৫ জুলাই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে তারা এ দাবি জানান।

এছাড়া এবারের ঈদযাত্রায় মহাসড়কে মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং বন্ধের সিদ্ধান্তকে পুঁজি করে ব্যক্তিগত বাইক নিয়ে চলাচলকারীদের যাত্রাপথে হয়রানি করা হলে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বেড়ে যাবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংগঠনগুলো। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘রাইড শেয়ারকারী মোটরসাইকেলের সঠিক কোনো সংখ্যা বা তথ্য বিআরটিএ বা ট্রাফিক বিভাগের কাছে নেই। ফলে কোনটি রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেল আর কোনটি ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল, তা আলাদা করার কোনো সুযোগ নেই।’ বিভিন্ন সংগঠন মারফত আমরা জেনেছি, বর্তমানে দেশে ৩৭ লাখের বেশি মোটরসাইকেল রাস্তায় চলছে। গণপরিবহন সংকট, বাস মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা, পদে পদে যাত্রী হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, রেলের টিকিট অব্যবস্থাপনা, শিডিউল বিপর্যয়, যানজটসহ নানা কারণে মানুষ মোটরসাইকেলের ওপর দিন দিন নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।

আমরা এ-ও জেনেছি, ঝুঁকিপূর্ণ এ বাহন কখনোই গণপরিবহনের বিকল্প হতে পারে না। এ কথা স্বীকার করতেও দ্বিধা নেই। যদিও যানজট কমাতে দেশে রাইড শেয়ারিং চালু করা হলেও বাস্তবভিত্তিক নীতিমালা ও মনিটরিংয়ের অভাবে এসব রাইড শেয়ারকারী যানবাহন যানজট আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ অবস্থায় সড়কের তুলনায় মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেশি হওয়ায় বাহনটির নিবন্ধন বন্ধ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। যে কোনো বয়সী মানুষ বাইক নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছে। তাই তার আগে অবশ্যই গণপরিবহন সংকট সমাধান করা, যাত্রীসেবার মানোন্নয়ন, যাত্রী হয়রানি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। একই সঙ্গে আমাদের গৌরব ও অহংকারের প্রতীক স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেলের স্পিড লিমিট নির্ধারণ করে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে ঈদের আগেই মোটরসাইকেল চালুর জোর দাবি জানাচ্ছি।

তা না হলে, অসংখ্য মানুষের ভোগান্তির কারণ হবে এমন সিদ্ধান্ত। যাতে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিতে পারে। দুর্ঘটনার অজুহাতে সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেলের নিষেধাজ্ঞা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। ব্যক্তিগত বাইকে অনেকেই দূর থেকে কর্মস্থলে আসেন। তারা কেন ভুগবেন। ব্যক্তিগত বা রাইড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে অনেকেই বাড়ি যান, তাদের ভোগান্তিতে ফেলা অযৌক্তিক। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে নিয়ন্ত্রণ জরুরি হলেও দমন কাম্য নয়। অদক্ষ চালকদের নিয়ন্ত্রণ করতে সঠিক আইনের প্রয়োগ করে চলাচলের অনুমতি দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। শুধু শুধু বাইক নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন পড়ে না। তাই সবার দাবি, ঈদুল আজহার আগেই সহজ-সুন্দর সমাধান একান্ত প্রয়োজন। কর্তৃপক্ষ কি বিষয়টি ভেবে দেখবেন?

লেখক : কথাশিল্পী ও সাংবাদিক

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!