• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
হ্যালো লিডার, হ্যালো মিনিস্টার

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায়ভার কার?


এম সোলায়মান  অক্টোবর ১৫, ২০২২, ০৪:৩৬ পিএম
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায়ভার কার?

ঢাকা: মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমে গেলেও নতুন করে জনমনে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ডেঙ্গু। প্রতিনিয়তই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। হাসপাতালে হাটার জায়গা নেই। কোনো সিট খালি নেই! মেঝেতে বিছানা পেতেছে রোগীরা। কী মর্মান্তিক পরিস্থিতি। মিনিটে মিনিটে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। গত বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) রোগটিতে একসঙ্গে ৮জনের মৃত্যুর খবর এসেছে গণমাধ্যমে। এছাড়া চলতি বছরে মৃত্যুর সংখ্যা দাড়িয়েছে ৮৩ জনে। 

ডেঙ্গু নিয়ে মানুষের মনে উদ্বেগ যেমন বাড়ছে সেই সাথে এ ধরণের বিপজ্জনক পরিস্থিতির জন্য দায়ী কে সেই প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে।

রাজধানীবাসীর অভিযোগ মূলত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এবং সরকারের দিকে। অনেকেই সরাসারি তাদের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ করেছেন। 

বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে যথাসময়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলেই এই পরিস্থিতি হয়েছে। বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন সরকারি দায়িত্বশীল লোকজন। তারা বলছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে।

জরিপ ও সরকারি তথ্যসূত্রে দেখা যায়, দেশে ২০১৯ সালে এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিল। ২০২২ সালের ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ২৩ হাজার ২৮২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন এদের মধ্যে মারা গিয়েছেন ৮৩ জনের মতো। দেশের ৫০টি জেলাতেই ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে।

ঢাকার পরে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলা কক্সবাজারে। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, এবারে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশের বয়স ২০ বছরের বেশি। মৃত্যু বেশি ৪০-৫০ বছর বয়সীদের মধ্যে। মারা যাওয়া রোগীদের ৩৫% শিশু অর্থাৎ যাদের বয়স ১৮ বছরের নীচে। আক্রান্ত রোগীকে দেরি করে হাসপাতালে নেয়ায় ভর্তির তিনদিনের মধ্যেই মারা যাচ্ছেন অনেকে। 

সাধারণ মানুষের প্রশ্ন- মশা মারতে সরকার প্রতিবছরই বরাদ্দ বাড়ায়, তবে সেই টাকাগুলো কার পকেটে যায়? প্রতিনিয়তই কেউ না কেউ মারা যাচ্ছে, এই দায়ভার কে নিবে? এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি করপোরেশন তাদের দায়িত্ব কতটুকু পালন করছে?

২০২০ সালে একটি বৈঠকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘মশকনিধনের কীটনাশক নিয়ে আগে বড় সিন্ডিকেট সক্রিয় ছিল। সেই সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এখন বাসাবাড়িতে ব্যবহারের জন্য উন্নতমানের কীটনাশক আমদানির সুযোগ তৈরি হয়েছে। শর্ষের দানার মতো এসব কীটনাশক বাসায় ব্যবহার করলে তিন মাস পর্যন্ত মশার লার্ভা জন্মাতে পারবে না।’ 

সিন্ডিকেট বিষয়ে মেয়র আতিকুলের কথাই যদি সত্য হয় তবে সহসাই প্রশ্ন জাগে ২০২২ সালে এসেও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তারা কেনো ব্যর্থ হচ্ছে? 

রাজধানীর বেশ কিছু জায়গায় ওষুধ ছিটানো হলেও নগরবাসীর অভিযোগ সিটি করপোরেশনের দেয়া ওষুধে কোনো কাজ হচ্ছে না। তারা যে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন সেটাই বা কতটুকু কার্যকরী? তাছারা অনেক এলাকা আছে যেসব এলাকায় মাসে একবারও কীটনাশক প্রয়োগ হচ্ছে না এমনটাই অভিযোগ তাদের। 

এছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনের গুরুত্ব কতটুকু দেয়া হচ্ছে? 

এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জোবায়দুর রহমান সম্প্রতি গণমাধ্যমকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তারা তাদের সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। ডেঙ্গু মোকাবিলার জন্য মাইকিং করেছেন, লিফলেট দিয়েছেন, স্টিকার লাগাচ্ছেন এমনকি টেলিভিশনে বিজ্ঞাপনও দিয়েছেন। 

তিনি মনে করেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তারা সফল হয়েছেন। কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন গত বছরের তুলনায় এবারে আক্রান্তের হার তুলনামূলক কমে এসেছে।  

তবে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জোবায়দুর রহমানের কথার বিপরীত দেখা যায় রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ঢুকলে। কোথাও তিল ধারণের ঠাই নেই! হাসপাতালের বারান্দা দিয়েও হাটা দায়। স্বজনদের উদ্বেগ, আহাজারিতে ভারি হয়ে আছে হাসপাতালের পরিবেশ।

ডেঙ্গু আগে শুধু ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী শহর কেন্দ্রিক রোগ হলেও এখন এটি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে যেখানে উন্নয়ন কাজ ও নির্মাণ কাজ চলছে। এই রোগ থেকে মানুষকে বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের চরম গাফলতি আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

তারা বলছেন, ‘সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ ও কার্যকরী কীটনাশক প্রয়োগ করলে এতো মানুষের প্রাণহানী হতো না।’  

লেখক: এম সোলায়মান, সাংবাদিক।
 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!