• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এক সপ্তাহে গ্রেফতার হেফাজতের শীর্ষ ১২ নেতা


নিজস্ব প্রতিনিধি এপ্রিল ১৯, ২০২১, ০২:০৩ পিএম
এক সপ্তাহে গ্রেফতার হেফাজতের শীর্ষ ১২ নেতা

ফাইল ছবি

ঢাকা : গত ২৬ ও ২৭ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উপলক্ষে বাংলাদেশে আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুরু থেকেই মোদির সফরের বিরোধিতা করে আসছিল হেফাজতে ইসলাম। মোদি আসার আগে থেকেই নানা কর্মসূচি পালন করে হেফাজত। 

মোদি এলে বিক্ষোভ ও হরতাল করে সংগঠনটি। এসব কর্মসূচিতে রাজধানী ঢাকা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় তাণ্ডব চালায় হেফাজত। এ সময় হেফাজত ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হন। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় হেফাজতের বিরুদ্ধে দায়ের হয় অনেক মামলা। পুলিশ ও বিভিন্ন ব্যক্তি বাদী হয়ে করেন এসব মামলা করেন। 

এসব মামলা ও সর্বশেষ হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের রিসোর্টকাণ্ডের পর সংগঠনটির ওপর কঠোর অবস্থানে যায় সরকার। একে একে গ্রেফতার করা হয় হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের। সর্বশেষ হেফাজতের হেভিওয়েট নেতা মামুনুল হককে রোববার (১৮ এপ্রিল) গ্রেফতার করা হয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, শুধু মাত্র গত এক সপ্তাহে পুরাতন ও নতুন মামলায় হেফাজতে ইসলামের ১২ জন হেভিওয়েট নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। আর সর্বশেষ গত ১৩ দিনে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে শীর্ষ ১২ নেতাসহ হেফাজতের মোট ১৯ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হওয়া অনেক নেতার বিরুদ্ধে নতুন মামলা হয়েছে, অনেককে পুরাতন এবং সম্প্রতি করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।  

মাওলানা মামুনুল হক : হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে রোববার (১৮ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর তাকে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনারের কার্যালয়ে নেওয়া হয়। 

সোমবার (১৯ এপ্রিল) বেলা ১১টা ৮ মিনিটে তাকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয় থেকে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। আপাতত মোহাম্মদপুর থানার মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। অন্য মামলার বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

 আজিজুল হক ইসলামাবাদী : হেফাজত ইসলামের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা ও সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীকে গত সোমবার (১২ এপ্রিল) রাত ২টায় চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার বালুচড়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ও র‍্যাব।

ডিবি সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে রাজধানীর মতিঝিলে জ্বালাও-পোড়াও মামলায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীকে গ্রেফতার করা হয়। 

মুফতি ইলিয়াস হামিদী : গত সোমবার (১২ এপ্রিল) সাংগঠনিক বৈঠক শেষে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে ঢাকা ফেরার পথে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-অর্থসম্পাদক ও ঢাকা মহানগরী কমিটির সহসভাপতি মুফতি ইলিয়াস হামিদীকে গ্রেফতার করে র‍্যাব।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানায় দায়ের করা সন্ত্রাস বিরোধী আইনে করা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ১৪ এপ্রিল আদালত তার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

তার বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে বলা হয়, সম্প্রতি ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্নস্থানে যে নাশকতা করা হয়েছ তার প্রত্যেকটিতে তিনি মদদ দিয়েছেন। 

ওয়াসেক বিল্লাহ নোমানী : রাষ্ট্রবিরোধী  ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে ১২ এপ্রিল ময়মনসিংহের সানকিপাড়া এলাকার সেনবাড়ি রোড থেকে হেফাজতে ইসলামের অনুসারী ও প্রভাবশালী বক্তা ওয়াসেক বিল্লাহ নোমানীকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।

ডিবি সূত্রে জানা যায়, ওয়াসেক বিল্লাহ নোমানী হেফাজতের কোনো সাংগঠনিক পদে না থাকলেও তিনি স্থানীয় প্রভাবশালী হেফাজত নেতা। এছাড়া স্থানীয় হেফাজত ইসলামের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তিনি উপস্থিত থাকেন। 

লোকমান হোসেন আমিনী : ফেসবুকে উসকানিমূলক স্ট্যাটাস প্রদান এবং সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় দাঙ্গা-হাঙ্গামার অভিযোগে গত ১০ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় হেফাজতে ইসলামের অনুসারী ও স্থানীয় মতুর্জাবাদ জামে মসজিদের খতিব লোকমান হোসেন আমিনীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে ১১ এপ্রিল সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা সূত্রে জানা যায়, মতুর্জাবাদ জামে মসজিদের খতিব মাওলানা লোকমান হোসেন আমিনী হেফাজতের মামুনুল হকের পক্ষ নিয়ে ফেসবুকে রাষ্ট্রবিরোধী এবং দাঙ্গা-হাঙ্গামার উসকানিমূলক স্ট্যাটাস দিয়ে আসছিল। সাংগঠনিক পদে না থাকলেও তিনি হেফাজত ইসলামের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা। 

মুফতি শাখাওয়াত হোসাইন রাজী : হেফাজতে ইসলামের আরেক প্রভাবশালী নেতা ও সংগঠনটির সহকারী মহাসচিব মুফতি শাখাওয়াত হোসাইন রাজীকে ১৪ এপ্রিল রাজধানীর লালবাগ থেকে ডিবির একটি টিম গ্রেফতার করে। ওইদিন সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, সম্প্রতি হেফাজতে ইসলাম আন্দোলনের নামে যে তাণ্ডব চালিয়েছে সেসব ঘটনায় রাজধানীর একাধিক থানায় কয়েকটি মামলা হয়েছে। এসব মামলার কয়েকটিতে মুফতি শাখাওয়াত হোসাইন রাজীর নাম রয়েছে। এছাড়া ২০১৩ সালের ৬ মে যাত্রাবাড়ী থানায় তার বিরুদ্ধে করা একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।

মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী : রাজধানীর গ্রিন রোড এলাকা থেকে গত বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীকে (৫৫) গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

ডিবি সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

মুফতি বশির উল্লাহ : হেফাজতে ইসলামের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মুফতি বশির উল্লাহকে ১৩ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় লন্ডন মার্কেট এলাকায় নির্মাণাধীন একটি বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা সূত্রে জানা যায়, মুফতি বশির উল্লাহ ২৮ মার্চ হেফাজতের ডাকা হরতালে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। হরতালে লাঠি, রড, ইটপাটকেল নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা, যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। এসব ঘটনায়  সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় করা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।

মুফতি শরিফ উল্লাহ : হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক মুফতি শরিফ উল্লাহকে ১২ এপ্রিল রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মীর হাজিরবাগ এলাকা থেকে করে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ডিবি সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৬ মে যাত্রাবাড়ী থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।

মাওলানা জুবায়ের : হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরীর সহসভাপতি মাওলানা জুবায়েরকে ১৬ এপ্রিল গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ- ডিবি লালবাগ। রাজধানীর লালবাগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

ডিবি সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক হেফাজতের তাণ্ডবে সংশ্লিষ্টতা ছাড়াও ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তার নাম রয়েছে।

মাওলানা জালাল উদ্দিন : হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিনকে ১৭ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ডিবি সূত্রে জানা যায়, তার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি সহিংসতার সঙ্গেও তার সম্পৃক্ততা রয়েছে।

আল্লামা জুনায়েদ আল হাবিব : হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সভাপতি আল্লামা জুনায়েদ আল হাবিবকে ১৭ এপ্রিল বিকেলে রাজধানীর বারিধারা থেকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।

ডিবি সূত্রে জানা যায়, জুনায়েদ আল হাবিবের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনায় মামলা ছাড়াও বর্তমানে একাধিক মামলা রয়েছে।

রফিকুল ইসলাম মাদানী : হেফাজতে ইসলামের সমর্থক ও ধর্মীয় বক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানীকে রাষ্ট্রবিরোধী ও উসকানিমূলক কথাবার্তা এবং রাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে কটাক্ষ করার অভিযোগে ৭ এপ্রিল নেত্রকোনা থেকে আটক করে র‍্যাব। পরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গাছা থানায় তার বিরুদ্ধে একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামালা হয়। এছাড়া রাজধানীর মতিঝিল থানাও তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়।

চলতি এপ্রিল মাসে ডিএমপি গোয়েন্দা শাখার অভিযানে হেফাজতে ইসলামের সাবেক প্রচার সম্পাদক মুফতি ফখরুল ইসলাম ও হেফাজত নেতা আতাউল করীম মাকসুদকেও গ্রেফতার করে।

অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের রয়েল রিসোর্টে ভাঙচুর ও মহাসড়কে নাশকতা সৃষ্টির মামলায় ১২ এপ্রিল রাজধানীর জুরাইন থেকে হেফাজতের ৪ নেতাকে গ্রেফতার করে র‍্যাব-১১। তারা হলেন- হেফাজত নেতা মাওলানা ইকবাল (প্রধান আসামি), মাওলানা মহিউদ্দিন, মাওলানা শাহজাহান শিবলী ও মাওলানা মোয়াজ্জেম।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!