• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘ও মা, তোরে কে দেখব রে মা’


নিজস্ব প্রতিবেদক  ডিসেম্বর ৮, ২০২২, ১০:১৭ এএম
‘ও মা, তোরে কে দেখব রে মা’

মর্গের সামনে মেয়েকে নিয়ে মো. মকবুলের স্ত্রী হালিমা

ঢাকা: পোশাকে, জুতায় কারচুপির কাজ করতেন মো. মকবুল, স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে দিন চলত কষ্টে; রাজনৈতিক সহিংসতায় তাকে হারানোর বেদনা ছাপিয়ে স্ত্রী হালিমার আহাজারিতে ফুটে উঠছে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা।

“ও মা, তোরে কে দেখব রে মা। আমারে ভাসাইয়া দিয়া গেল রে,” ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের সামনে মেয়েকে নিয়ে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছিলেন তিনি।

হালিমার স্বামী মকবুল (৩২) বুধবার বিকালে ঢাকার নয়া পল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন।

আগামী শনিবার ঢাকায় বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়া পল্টনে জড়ো হয়েছিলেন দলটির নেতা-কর্মীরা। সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধলে আহত কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেলে নিলে মকবুলকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেছেন, মকবুলের শরীরে ছররা গুলির চিহ্ন রয়েছে।

ঢাকার মিরপুরের বাউনিয়া বাঁধ এলাকার বাসিন্দা মকবুল বিএনপির সমর্থক ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার বড় ভাই আব্দুর রহমান। তবে তিনি বলেন, সভা-সমাবেশে খুব একটা যেতেন না মকবুল। সারাদিন কারচুপির কাজ করেই কুলিয়ে উঠতে পারতেন না।

মকবুলের বোন আয়েশা জানান, মকবুল যে নয়া পল্টনে গেছেন, তা তারা জানতেন না। তারা জানতেন তিনি পুঁতি কিনতে গেছেন।

ঢাকার নয়া পল্টনে বুধবার বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধলে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

বুধবার সকালে পুঁতি কেনার কথা বলে স্ত্রীর বড় বোনের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা ধার নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন মকবুল।

আয়েশা বলেন, সন্ধ্যায় তাদের পাশের বাসার এক আনসার সদস্য ফেইসবুকে পাওয়া ছবি দেখিয়ে জানতে চান এটা মকবুল কি না? তারা রক্তাক্ত মকবুলকে দেখে চিনতে পেরে ঢাকা মেডিকেলে রওনা হন। এসে জরুরি বিভাগসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে খোঁজাখুঁজি করেও মকবুলের খোঁজ পাননি। পরে তার লাশ পান মর্গে।

মকবুল কেন নয়া পল্টনে গিয়েছিলেন- জানতে চাইলে তার স্ত্রী হালিমা বলেন, “ওরে কে এখানে নিয়ে আইলো, আমরা কিছুই জানি না। আমাদের ও বলছিল পুঁতি কিনতে যাচ্ছে।”

বলতে বলতেই আবার কেঁদে ফেলেন হালিমা। বলতে থাকেন, “রাস্তায় নাকি অনেকক্ষণ পইড়া আছিল, সময়মতো চিকিৎসা দিলে মনে হয় বাঁচতো। আল্লাহ তুমি আমার মাইয়াটার দিকে চাইয়া ওরে বাঁচায়ে রাখতা। আমারে ভাসাইয়া দিয়া গেল রে।”

ঢাকার নয়া পল্টনে বুধবার বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধলে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়

বাউনিয়া বাঁধেই মকবুলের কারচুপির কারখানা,স্ত্রীকে নিয়ে তা চালান তিনি। তার আট বছর বয়সী একমাত্র মেয়েটি পড়ছে একটি মাদ্রাসায়।

অন্য ভাই-বোনদের সঙ্গে মায়ের মালিকানাধীন একটি টিনশেড বাড়িতে থাকতেন মকবুল। সেখানেই মায়ের কাছ থেকে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে চালাতেন কারচুপির কারখানা।

বড় বোন আয়শা বলেন, স্ত্রীর সহায়তায় কাপড় ও জুতায় কারচুপির কাজ করতেন মকবুল। মেয়েদের জুতোর উপর পুঁতি ও জরির ডিজাইন করতেন তিনি। সপ্তাহ শেষে অর্ডারে জিনিসপত্র সাভারে মালিকের কাছে জমা দিয়ে আসতেন। মালিক সব সময় কিছু বাকি রাখত, ঈদের আগে সব টাকা পরিশোধ করতেন। যে কারণে টানাটানির মধ্যেই চলতে হত মকবুলকে। 

মকবুলের স্ত্রীর বড় বোন নাসরিন বলেন, মাস শেষে প্রায়ই টাকা ধার করতেন মকবুল। বুধবার সকালে তার কাছ থেকে এক হাজার টাকা নিয়েছিলেন। পুরান ঢাকায় পুঁতি কিনতে যাবেন বলে জানিয়েছিলেন। বিকালে তারা জানতে পারেন মকবুল নিহত হয়েছেন।

সোনালীনিউজ/এম

Wordbridge School
Link copied!