abc constructions

বস্ত্র নিয়ে শীতের অপেক্ষা


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ১৯, ২০২০, ১০:১৬ পিএম
বস্ত্র নিয়ে শীতের অপেক্ষা

ঢাকা : বাংলা সনের অগ্রহায়ণ মাস সবে শুরু। যদিও প্রায় মধ্যরাত ও ভোরে হিম হিম ভাব নিয়ে শীত অনেকটাই অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। অবশ্য পঞ্জিকা মতে শীত আসতে আরো এক মাস বাকি।

আবহাওয়া ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রামগঞ্জে শীতের আমেজ আসতে শুরু করে হেমন্তের শেষ দিকে। তবে ইট-কাঠ-পাথরের ঢাকায় সেই বাতাস ঢুকতে একটু সময় নেয়।

তবু রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিপণিবিতান ও ফুটপাতে শীতবস্ত্র নিয়ে বিক্রেতাদের অপেক্ষা শুরু হয়ে গেছে। একইসঙ্গে অনেকটা জমেও উঠেছে রাজধানীর ফুটপাতগুলো। গুলিস্তান, বঙ্গবাজার, মতিঝিল, পল্টন, মালিবাগ, মৌচাক, ফার্মগেট, মীরপুর, নিউমার্কেটসহ প্রায় সব এলাকায় শীতবস্ত্রের বিক্রি বেড়েছে।

অবশ্য বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গত বছরের এই সময়ে শীতের পোশাক বিক্রি জমজমাট থাকলেও এবার মন্দা। এছাড়া করোনার কারণে মানুষ আর্থিক সংকটে থাকায় এখনো গরম পোশাক কিনতে মার্কেটে আসছেন না। তুলনামূলক বেশি বিক্রি হচ্ছে শিশুদের কাপড়। মাথার টুপি, পায়ের মোজা, হাতমোজা, মাফলার, সোয়েটার, জাম্পার, ফুলহাতা গেঞ্জি, কম্বলের দোকানে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

বিক্রেতারা বলছেন, শীতের কাপড়ের বেচাকেনা পুরোদমে শুরু না হলেও প্রতিদিন কিছু কিছু বিক্রি হচ্ছে। চলার পথে একটু থেমে নেড়েচেড়ে দেখছেন অনেকেই। আগামী ১০-১৫ দিন পর থেকে পুরোদমে বিক্রি শুরু হবে বলে আশা তাদের। ঢাকা ও সারা দেশের ফুটপাত-রাস্তায় ভ্যানে করে বছরজুড়ে যারা শার্ট, টি-শার্ট, প্যান্ট বিক্রি করেন, তারাই এখন রঙ-বেরঙের শীতের কাপড়ের পসরা বসিয়েছেন। পথচারীরাও নেড়েচেড়ে দেখছেন, ঠিক করছেন কোনটা কেনা যায়।

এদিকে কোভিড-১৯ করোনা মহামারীর মধ্যে এবার দুই ঈদ আর পূজায় কাপড়ের ব্যবসা তেমন ভালো হয়নি। এবার শীতকে সামনে রেখে আশা দেখছেন বিক্রেতারা। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দোকানে ঝোলানো পোশাকের ধরনও বদলাতে শুরু করেছে। ফুটপাতেও সোয়েটার, জ্যাকেট, কম্বল, চাদর, শাল, বাচ্চাদের কাপড়ের জুতা, হাত ও পায়ের মোজা, কানটুপিসহ নানা শীতবস্ত্রের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। কোনো কোনো ব্যবসায়ী গুদামে শীতবস্ত্র মজুত করছেন; শীত পড়লেই দোকানে বের করবেন। তবে এবার শীতের কাপড়ের দাম গতবারের চেয়ে একটু বেশি হবে বলে আভাস দিয়েছেন বিক্রেতারা।

তারা বলছেন, মহামারীর কারণে অনেক কোম্পানি কাপড়, সুতা ও অন্যান্য এক্সেসরিজ সময়মতো আমদানি করতে পারেনি। ফলে অন্য বছরের চেয়ে এবার শীত মৌসুমের কাপড় প্রস্তুত কম হয়েছে। আবার শীতের সঙ্গে যদি করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ে, ক্রেতা যদি সেভাবে না পাওয়া যায়, সেই শঙ্কাও আছে ব্যবসায়ীদের মনে।

বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে নানা ধরনের শীতবস্ত্র নিয়ে পাশাপাশি বসেন কয়েকজন। তাদেরই একজন আবু হানিফ বলেন, সপ্তাহ দুই হলো শীতের কাপড় এনেছি। গত শনিবার সারা দিনে আটশ টাকার মতো বিক্রি হয়েছে বলে জানান তিনি। আবু হানিফ বলেন, ‘শীতের কাপড়ের ব্যবসা হয় অল্প কয় দিন, এখন তো খচরই উঠছে না। দিনে যদি আট-নয় হাজার টাকা বিক্রি হয়, তখন বেশ লাভ থাকে। না হয় লোকসানই হবে।’

হানিফের কাছ থেকে দুটি সোয়েটার কিনেন পল্টনে ফলের ব্যবসা করা কাজী জাহিদুল হক শাকিল। তিনি বলেন, ‘শীতের কাপড় কেনার পরিকল্পনা ছিল না। এই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় হাতের কাছে পেয়ে কিনে ফেললাম। এগুলো আর কয়দিন পরই লাগবে, সব সময় হাতে সময় থাকে না, সে জন্যই নেওয়া।’

গুলিস্তান এলাকায় বাচ্চাদের কাপড়ের জুতা, মোজা ও টুপি বিক্রি করেন মোহাম্মদ আজম। তিনি জানান, গত সপ্তাহে এসব মালামাল তুলেছেন। দাম দেড়শ থেকে আড়াইশ টাকার মধ্যে। আজম বলেন, বিক্রি নেই বললেই চলে। শীত পড়তে শুরু করলে তখন মানুষ হয়ত কিনবে।

বায়তুল মোকাররমের পশ্চিমপাশের ফুটপাতে বাচ্চাদের রঙ-বেরঙের সোয়েটার তুলেন সাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে হঠাৎ করে হালকা শীতের একটা আবহ দেখা দিয়েছিল, তখন অনেক দোকানী শীতের কাপড় উঠিয়েছেন, কিন্তু এখন তো গরমই বলা চলে। তাই বিক্রি তেমন হয় না। হঠাৎ হঠাৎ কোনো কাস্টমার এসে দরদাম করছেন। অল্প লাভেই বিক্রি করে দিচ্ছি।

গতবারের চেয়ে এবার শীতবস্ত্রের দাম কিছুটা বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, গতবছর পাইকারিতে যে সোয়েটার ২৬০ টাকায় কিনেছিলেন, এবার সেটা ৩০০ টাকা। তিনি বলেন, কারখানাগুলো করোনার কারণে মাল কম তৈরি করেছে। শীত যদি বেশি পড়ে তখন মানুষের কাপড়ের চাহিদা বাড়বে, তখন হয়ত বাজারে শীতের কাপড়ের স্বল্পতা দেখা দিতে পারে। আবার বড় কাপড় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটও আছে।

নিউ মার্কেট এলাকায় গত শনিবার সন্ধ্যায় ফুটপাতের দোকানগুলোতে দেখা যায় অনেকেই চলতি পথে শীতের কাপড় নেড়েচেড়ে দেখেন। টুকটাক বিক্রিও হয়। তবে মার্কেটগুলোতে তেমন বিক্রি নেই বলে ক্রেতারা জানালেন। নিউ মার্কেটের একটি কাপড়ের দোকানের ব্যবসায়ী মুজিবুর রহমান বলেন, শীতের কাপড় তো উঠাইছি, বিক্রি নেই। খুব অল্প-স্বল্প কাস্টমার শীতের কাপড় কিনছেন। শীত বাড়লে তখন বিক্রি হবে, আমাদের কাছে ভালো কালেকশন আছে।

ঢাকা কলেজের উল্টো দিকে ফুটপাতে কাপড়ের পসরা নিয়ে বসেছিলে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা আকবর আলী। তিনি বলেন, এই এলাকায় অনেকে শপিং করতে আসেন, তারা আমাদের কাছ থেকেও কাপড় কিনে নিয়ে যান। ছোট-বড়, সব বয়সী মেয়েদের সোয়েটার, মোটা কাপড়ের সর্টস, লং কুর্তি আছে। দাম ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। গত দুই-তিন দিনে বিক্রি একটু বেড়েছে।

নীলক্ষেতের ফুটপাতে সোয়েটার বিক্রি করছিলেন আবদুস সালাম। কয়েকজন ক্রেতা সেখান থেকে সোয়েটার হাতে তুলে খুঁটিয়ে দেখেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে দুটো সুয়েটার বিক্রি হয়ে গেল। সালাম বলেন, ‘এগুলো গার্মেন্টসের গরম কাপড়। এখনো পুরোপুরি শীত না নামায় দাম একটু কম। শীত পড়লে চাহিদা বাড়বে এবং এগুলোর প্রতিটিতে ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা দাম বেড়ে যাবে।’

গুলিস্তান এলাকার এস কিউ সুপারশপ নামে একটি কম্বলের দোকানের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন জানান, শীতের জন্য তারাও প্রস্তুত। তিনি বলেন, আমরা শীতকালে দেশি-বিদেশি, ছোট-বড় নানা ধরনের ও দামের কম্বল বিক্রি করি। আমাদের এখানে ভালো মানের চাদর ও শাল রয়েছে। দুই সপ্তাহ ধরে কম্বল বিক্রি জন্য শো করা হয়েছে, তবে বিক্রি তেমন হয় না। মঈনুদ্দিন বলেন, শীত না পড়লে কম্বল বিক্রি হবে, এমনটা আশাও করা যায় না। এটাই আমাদের ব্যবসার ধরন।

একই এলাকা থেকে চার হাজার টাকায় একটি কম্বল কিনেন যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা রবিউল হাসান। তিনি বলেন, আজকে অফিস নেই বলে কম্বল নিতে এলাম। শীত আসছে, এটা তো লাগবে। আগামী সপ্তাহের ছুটির দিনে অন্য কাজে ব্যস্ত থাকব, পরে সময় করতে পারব না ভেবে কিনে নিলাম।

গাজীপুরের ব্যবসায়ী আবদুল হাকিম গত শনিবার দুপুরে বঙ্গবাজারে কম্বল কিনতে আসেন। তিনি বলেন, গাজীপুরের বেশিরভাগ এলাকা গাছপালাবেষ্টিত হওয়ায় অপেক্ষাকৃত বেশি শীত অনুভূত হয়। গত কয়েকদিন ধরে কম্বল ও সোয়েটারের চাহিদাও বেড়েছে। তাই কম্বল কিনতে এখানে এসেছি। কয়েকদিন আগের তুলনায় কম্বল প্রতি দাম ৩০-৪০ টাকা বেড়ে গেছে বলে জানান হাকিম। বিক্রেতারাও কম্বলের দাম বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘করোনাকালে বেচাকেনার অবস্থা খুবই খারাপ। লাখ লাখ টাকা লগ্নি করেছি আমরা। কিন্তু করোনার কারণে ক্রেতা নেই। তবে শীতের পোশাকের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আমরা খুশি।’

বঙ্গবাজারেই কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মফিজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি শীতের কাপড় এখনই কেনার কারণ জানিয়ে বলেন, ‘ঢাকায় পুরোপুরি শীত এলে শীতের পোশাকের দাম বেড়ে যাবে। তাই এখনই কিনে নিচ্ছি। দোকানে বেচা-কেনা কম হওয়ায় কিছুটা কমে কিনতে পারছি; খুব সহজে পছন্দের জিনিসটি বের করতে পারছি।

পুরানা পল্টনের পলওয়েল সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন জানান, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন মার্কেট প্রায় ক্রেতাশূন্য ছিল। গত দু-তিন দিন ধরে কম্বল, জ্যাকেট, সোয়েটার ও শাল কিনতে ক্রেতারা আসছেন। বেচা-কেনাও বেশ ভালো।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Haque Milk Chocolate Digestive Biscuit
Dutch Bangla Bank Agent Banking
Wordbridge School