abc constructions

অদম্য নাহিয়ানের গল্প


নিউজ ডেস্ক জুন ১৩, ২০২১, ০৪:২২ পিএম
অদম্য নাহিয়ানের গল্প

ঢাকা : নূর নাহিয়ান অন্য সবার মতো স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে উঠছিলেন। দেখতেন বড় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় হঠাৎ তার জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। স্পাইনাল কর্ডে রক্ত জমে চিরতরে পঙ্গু হয়ে যান। চলার সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয় হুইলচেয়ার। তবুও থেমে থাকেননি। হুইলচেয়ারে বসেই নিজের স্বপ্ন পূরণের পথে হেঁটে চলেছেন। খেলে যাচ্ছেন ক্রিকেট।

নূর নাহিয়ানের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার জয়পুর গ্রামে। তার বাবা লেখক, গবেষক, কবি ড. আমিনুর রহমান সুলতান বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক পদে কর্মরত। নাহিয়ানের মা শিলু রহমান একজন শিক্ষক। সুলতান-শিলু দম্পতির একমাত্র সন্তান নাহিয়ান ঢাকার সেন্ট গ্রেগরিজ স্কুলে পড়াকালে প্যারালাইজড হয়ে যান। দেশে ও ভারতে অনেক চিকিৎসা করানো হয় নাহিয়ানকে। প্রথমদিকে ক্রাচ দিয়ে হাঁটতে পারলেও ২০১১ সালে ভুল থেরাপির কারণে বাম পায়ের জয়েন্ট খুলে যায়। সেই থেকে নাহিয়ানের চলাচলের সঙ্গী হুইলচেয়ার।

শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জীবন নাহিয়ানকে নতুন করে জীবন সম্পর্কে ভাবতে বাধ্য করে। এবিষয়ে সবসময় পরিবার থেরেক পূর্ণ সমর্থন পেয়েছেন সবসময়। চারদেয়ালে বদ্ধ জীবন নাহিয়ানকে অনুপ্রাণিত করে প্রতিবন্ধিতার শিকার ভাই বোনদেরকে জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে। তাই খেলাধুলার জগতটাকে বেছে নেন শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মুক্ত জীবন গড়ার প্রতিজ্ঞায়।

বাসায় যখন টিভিতে খেলা দেখতাম তখনই হুইলচেয়ারে বসে ক্রিকেট কীভাবে খেলা যায় তার নানান ধরনের পরিকল্পনা করতেন। মনস্থির করেন, এবার নাহিয়ানও ক্রিকেট খেলবেন।

ক্রিকেট খেলা শুরু করলেন হুইলচেয়ার বসেই। সংকল্প করেন, কেউ যদি বাংলাদেশে হুইলচেয়ার ক্রিকেট নিয়ে কাজ না করে তাহলে নাহিয়ান নিজেই হুইলচেয়ার ক্রিকেট নিয়ে কাজ করবেন এবং এটিকে প্রতিষ্ঠা করবেন। সেই সময় থেকেই নাহিয়ানের ক্রিকেট যাত্রার শুরু হয়। ফেসবুকে খোঁজ করি যে, হুইলচেয়ার ক্রিকেট নিয়ে কেউ কাজ করে কিনা। জানতে পারেন মো. মহসিন প্রতিবন্ধীদের ক্রিকেট নিয়ে কাজ করছেন। নাহিয়ান তার সাথে যোগাযোগ করেন। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে নাহিয়ান, মো. মহসিন , মাহবুবুর রহমান চৌধুরী পলাশসহ তিনজন মিলে গড়ে তুলেন হুইলচেয়ার ক্রিকেট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ।

২০১৬ সালের অক্টোবরের ১৮ তারিখ ইমাগো স্পোর্টস ম্যানেজমেন্টের সাথে যৌথভাবে আয়োজন করেন প্রথম জাতীয় হুইলচেয়ার ক্রিকেট টুর্নামেন্টের।

২০১৭ সালে  বাংলাদেশে প্রথম আন্তর্জাতিক হুইলচেয়ার ক্রিকেট সিরিজের আয়োজন করা হয়। এটি ছিল দ্বিপাক্ষিক সিরিজ। এ খেলায় ভারত অংশগ্রহণ করে। এ সিরিজে বাংলাদেশ হুইলচেয়ার ক্রিকেট দলের সহ-অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন নাহিয়ান।

এছাড়াও আমি ঘরোয়া হুইলচেয়ার ক্রিকেটে রাজশাহী দলের অধিনায়ক হিসেবে ২০১৬ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করেন। ক্রিকেট নিয়ে কাজ করতে গিয়ে ২০১৭ সালের শুরুর দিকে  নাহিয়ান দেখলেন খেলাধুলার প্রতি আগ্রহী অনেক শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদ আছেন যারা মূল দলে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন না। বিষয়টি পীড়া দিত নাহিয়ানকে। নতুন করে আবার চিন্তা শুরু করলেন তিনি। নাহিয়ান সিদ্ধান্ত নিলেন আরো বড় কিছু করতে হবে আরো বড় আকারে। যে প্ল্যাটফর্মে সীমাবদ্ধতা থাকবে না। সবাই থাকবে খেলাধুলার জগতে কোনো না কোনো খেলার মাধ্যমে। সবাই নাহিয়ানের নতুন উদ্যোগটি- যেখানে সকল ধরনের হুইলচেয়ার ভিত্তিক খেলাধুলায় হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন এবং এটি একটি প্রফেশনাল সেক্টর হবে সবার জন্য-একে সাধুবাদ জানাই।

২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল সেই কাঙ্ক্ষিত দিন যেদিন বাংলাদেশ হুইলচেয়ার স্পোর্টস ফাউন্ডেশ-এর আহবায়ক কমিটির প্রথম মিটিং-এর মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয় স্বপ্ন বাস্তবায়নের।

২০২০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ হুইলচেয়ার স্পোর্টস ফাউন্ডেশনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। লক্ষ্য ছিল মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রায় ৭টি খেলা নিয়ে একসাথে একটি টুর্নামেন্ট করবেন।

কিন্তু, করোনার জন্য তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। করোনার শুরুতেই করোনা সংক্রান্ত সচেতনতামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি টেলিমেডিসিন সেবা, আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা প্রদান, বই বিতরণ কর্মসূচির মতো উদ্যোগ গ্রহণ করে ফাউন্ডেশনটি । করোনার জন্য সকল কিছু বন্ধ থাকবার কারণে তারা অনলাইনে খেলাধুলার কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

ফাউন্ডেশনটি ১ম অনলাইন হুইলচেয়ার দাবা প্রতিযোগিতা ২০২০ এর মাধ্যমে ক্রীড়া যাত্রার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। সেখানে নিবন্ধিত হুইলচেয়ার ক্রীড়াবিদদের মধ্যে থেকে দশ জেলার দশজন হুইলচেয়ার ক্রীড়াবিদ অনলাইনের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেন। এরপর পরিস্থিতি একটু অনুকূলে আসলে ১ অক্টোবর ফাউন্ডেশনটি ২০২০ প্রথম হুইলচেয়ার স্পোর্টস টুর্নামেন্টের আয়োজন করেন। যেখানে ঢাকার দশজন হুইলচেয়ার ক্রীড়াবিদ তিনটি খেলা যথাক্রমে হুইলচেয়ার রেস, হুইলচেয়ার ক্যারাম ও হুইলচেয়ার ডার্টসে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন।

এরপর ০৫ ডিসেম্বর ২০২০ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে হুইলচেয়া স্পোর্টস কার্নিভাল ২০২০ আয়োজন করা হয়। এই টুর্নামেন্টে বিভিন্ন জেলা থেকে নিবন্ধিত হুইলচেয়ার ক্রীড়াবিদদের মধ্যে থেকে বাছাইকৃত ২৫ জন তিনটি টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেন। এই কার্নিভালের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রথম ইনডোর হুইলচেয়ার ক্রিকেটের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেন।

এছাড়াও এই কার্নিভালে ছিল হুইলচেয়ার ব্যাডমিন্টন ও হুইলচেয়ার ডার্টস প্রতিযোগিতা। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ হুইলচেয়ার স্পোর্টস ফাউন্ডেশন থেকে ১৯ জন প্যারা শার্টলার চারটি বিভাগে অংশগ্রহণ করে ‘দ্বিতীয় ন্যাশনাল প্যারা ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট ২০২১’-এ। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে খেলাধুলা বন্ধ রয়েছে। সামনের প্যারালিম্পিকে বাংলাদেশকে এই ফাউন্ডেশনের ক্রীড়াবিদরা রিপ্রেজেন্ট করবে ।

নাহিয়ান ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট থেকে স্নাতক সম্মান অর্জন করেন। নাহিয়ান ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির  স্পোর্টস ক্লাবেরও পরপর দুই মেয়াদে ক্লাব প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বর্তমান নাহিয়ান বাংলাদেশ হুইলচেয়ার স্পোর্টস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি অধ্যয়ন করছেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে।

এছাড়াও নিজের একটি ফ্রিল্যান্স হাউস নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। যেখানে পাঁচজন শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কম্পিউটার টাইপিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। বইয়ের প্রচ্ছদশিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন নাহিয়ান ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Haque Milk Chocolate Digestive Biscuit
Dutch Bangla Bank Agent Banking
Wordbridge School