abc constructions

পতিতার নামে আমের নামকরণের গল্প


আর্ন্তজাতিক ডেস্ক জুন ১৬, ২০২১, ০৬:৩১ পিএম
পতিতার নামে আমের নামকরণের গল্প

ফাইল ফটো

ঢাকা: সাধারণত যে কয়টি প্রজাতির আম স্বাদ ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে তার মধ্যে আম্রপালি অন্যতম। তবে কয়েক বছর ধরে জনপ্রিয় এই প্রজাতির আমটি হিমসাগর, ল্যাংড়া ও ফজলিকে টেক্কা দিচ্ছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও আম চাষিরা। মজার বিষয় হলো আম্রপালি নামের সাথে জড়িয়ে আছে ভারতে জন্ম নেয়া প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বের এক অপরুপ সুন্দরী নারীর নাম। বিষ্ময়কর ও অপরুপ এ নারী পেশায় ছিলেন একজন নগর পতিতা বা নর্তকী। তার আগুন ঝড়া সৌন্দর্য্যে কথা আজও লোকমুখে শোনা যায়।

প্রাচীন ভারতে একদা এক নিঃসন্তান দম্পতি একদিন ঘন আম বাগানে খুজে পেয়েছিলেন পরিত্যক্ত এক কন্যা শিশুকে। দম্পতি অতি সুন্দর সেই কন্যা শিশুটিকে নিয়ে যান নিজেদের বাড়িতে। আম বাগানে কুড়িয়ে পাওয়ায় মেয়েটির নাম দেন আম্রপালি। সংস্কৃত ‘আম্র’ মানে আম আর পালি বা পল্লপ মানে হলো পাতা/নবীন পাতা। অর্থাৎ আমগাছের নবীন পাতা। মেয়েটি সময়ের সাথে ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলো। আর ঠিক আমের মুকুলের মতোই যেন তার সৌন্দর্য্য ক্রমে ফুটে উঠতে শুরু করলো। কৈশোরে পা দিতে না দিতেই তার অপূর্ব দ্যূতিময় সৌন্দর্য্যের কথা ছড়িয়ে পড়ে আশে পাশের সকল এলাকায়। আম্রপালির মা বাবা পরে যান ব্যাপক সমস্যায়। এলাকায় কিশোরি আম্রপালিকে নিয়ে রিতি মতো বেধে যায় যুদ্ধ।
 
সময় তখন খ্রিষ্টের জন্মের ৫০০-৬০০ বছর পূর্বে।  আম্রপালি তার পালিত বাবা মার সাথে বাস করে তৎকালীন ভারতবর্ষের বৈশালী রাজ্যে (বর্তমান বিহার রাজ্য)। আম্রপালির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এলাকার মহাজন, আশে পাশের শহরের বণিক ও বিভিন্ন জনপদের রাজা বিয়ে করতে জোড় জবরদস্তি শুরু করে। একেকজন পারলে উঠিয়ে নিয়ে যায় আম্রপালিকে। একেক পক্ষে শুরু হয় দ্বন্দ। এলাকার মানুষ আম্রপালিকে এক নজর দেখার জন্য উদগ্রীব। আম্রপালির বাবা মা চিন্তায় অস্থির। কি হবে আম্রপালির!

ক্রমে কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা রাখে আম্রপালি তার সৌব্দর্যের দ্যূতি যেন বাড়তে থাকে আরো গতিতে। তার অপরুপ সৌন্দর্য্যের কথাও ছড়িয়ে পরতে থাকে আরো দূর দূরান্তে। আম্রপালির রুপে-গুণের খ্যাতিতে মুগ্ধ হয়ে তাকে বিবাহ করার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠে বহু রাজা ও রাজপুত্র, এবং ক্রমে তাঁরা পরস্পরের মধ্যে বৃহৎ কলহে প্রবৃত্ত হতে লাগলেন।

নগর পতিতা আম্রপালি (আর্ট ছবি)

আম্রপালির পিতা পড়ে গেলেন মহাসমস্যায়। চারিদিকে সবাই হতে চায় আম্রপালির পাণিপ্রার্থী। তিনি যাকেই ফেরাতে চান সেই হয়ে উঠে তার শত্রু। তখন তিনি উপায়ান্তর না পেয়ে শহরের গন্য মান্য ব্যাক্তিদের পরামর্শের জন্য এক সভা বসান। সভায় আম্রপালির পিতা সমাজের গন্য মান্য ব্যক্তিদের সবার কাছে আম্রপালির বিবাহের কথাটি উল্লেখ করে সমাধান প্রার্থনা করেন। সভাস্থ ব্যক্তিবর্গ আম্রপালিকে সভায় উপস্থিত করানোর জন্য আম্রপালির পিতাকে অনুরোধ জানালেন। পিতার আদেশে আম্রপালি সভায় উপস্থিত হয় এবং সাক্ষী হয় তৎকালীন সমাজরীতির এক অশ্লীল বেড়াজালে। এবং তাদের পক্ষে সমাজপতিদের সিদ্ধান্ত এবং তৎকালীন রীতি কে অমান্য করাও ছিল অচিন্তনীয়।
 
বৈশালীর তৎকালীন প্রচলিত রীতি অনুসারে সর্বাঙ্গ সুন্দরী রমণী বিবাহ করতে পারতেন না, তিনি হতেন গণভোগ্যা। আম্র পালির ভাগ্যেও জুটে সেই রীতিরই অভিশাপ। তাই আদেশ দেয়া হয় সর্বাঙ্গসুন্দরী রমণীরুপে স্বীকৃত আম্রপালিকেও প্রচলিত এই নিয়ম শৃঙ্খলে আবদ্ধা হতে হবে। সমাজ পতিরা বিধান দেয় যে আম্রপালি কখনও কোন পুরুষ কে বিয়ে করতে পারবে না। এত রূপ ও যৌবন নিয়ে সে শুধু একজন পুরুষের ভোগ্য হতে পারে না।

সেদিনের সভায় সিদ্ধান্ত দেয়া হলো আম্রপালি হবে বৈশালীর নগরবধূ। নগরবধূ মানে হলো – নগরের বহু পুরুষের ভোগ্য। ইংরেজিতে Courtesan (a woman, usually with a high social position, who in the past had sexual relationships with rich or important men in exchange for money.)। বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম গ্রন্থেও নগরবধূর উল্লেখ রয়েছে, সেখানে নগরবধূ কে জনপদকল্যাণী বলে উল্লেখ করা হয়েছে| তবে এই জনপদকল্যাণী বা নগরবধূ কোন সামান্য গণিকা বা পতিতা বা দেহপসারিণী নন | নগরবধূ বা জনপদকল্যানী হবেন অভিজাত আদবকায়দায় রপ্ত এক সুন্দরী, যে নৃত্যগীতে পারদর্শী| শুধুমাত্র সমাজের উচ্চবংশের পুরুষই পেতে পারবেন তাঁর সঙ্গসুখ | তিনি নিজেই নিজের সঙ্গী নির্বাচনের অধিকার রাখেন। কিন্তু রীতি অনুযায়ী কোন দিন বিয়ের অধিকার তাকে দেয়া হয় না। সে আমলে বৈশালীতেও আম্রপালিকে ভোগের আশায় এই রীতি অনুযায়ীই সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। অনিন্দ্য সুন্দরী আম্রপালি কখনও পরিণয় সূত্রে  বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে না। তাঁকে উৎসর্গ করা হয় সমাজের অভিজাত শ্রেনীর ভোগের দ্রব্য ও আনন্দের জন্য। সমাজপতিরা রায় দিলেন, ‘আম্রপালি কে নিয়ে কোন প্রকার লড়াইয়ের প্রয়োজন নেই, টাকার বিনিময়ে সে হবে সকলের। সমাজপতি বা রাষ্ট্রের নির্দেশে দেহ ব্যবসার বিরল ঘটনা পৃথিবীতে এই একটিই।

সমাজপতিদের এ জঘন্য সিদ্ধান্তে আম্রপালির পিতা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও বিচলিত হয়ে পড়লেন। কিন্ত প্রতিবাদ করার সাহস তার ছিল না। আম্রপালি তাঁর স্নেহময় পিতার অসহায় অবস্থা বিবেচনা করে তখন কয়েকটি শর্তসাপেক্ষে সভার অসভ্য ও জঘন্য এই সিদ্ধান্ত স্বেচ্ছায় শিরোধার্য করে নিলেন। সামান্য কয়েকটি শর্তসাপেক্ষে আম্রপালি হয়ে গেল বহুভোগ্যা নগরনটী বা নগর পতিতা।

আম্রপালি আমের নামকরণ

ভারতের আম গবেষকরা ১৯৭৮ সালে দশোহরি ও নিলাম এই দুইটি জাতের আমের মধ্যে সংকরায়ণের মাধ্যমে আম্রপালি নামের নতুন এই আমের জাত উদ্ভাবন করেন। আম্রপালি দুশোহরী ও নীলম আমের চেয়ে অনেক উন্নত ও ভিন্ন এবং মজাদার।

ভারতীয় বিজ্ঞানীরা আমটির নামকরণের জন্য প্রায় ২৫০০ বছর আগে জন্ম নেয়া “আম্রপালি নামের সেই বিখ্যাত নগর কন্যার নামটি নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং তা কর্যকরও হয়। সেই সাথে আম্রপালি নামের তৎকালীন সমাজের জঘন্য প্রথার শিকার হওয়া সেই নগরবধূ কে দান করেন অমরত্ব।

সোনালীনিউজ/এমএইচ

Haque Milk Chocolate Digestive Biscuit
Dutch Bangla Bank Agent Banking
Wordbridge School