abc constructions

আদালতে আবু ত্ব-হা


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ১৮, ২০২১, ০৯:৪৫ পিএম
আদালতে আবু ত্ব-হা

রংপুর: নিখোঁজের পর উদ্ধার আলোচিত ধর্মীয় বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান ও তার দুই সঙ্গীকে রংপুর আদালতে তোলা হয়েছে।

শুক্রবার (১৮ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাদের কেএম হাফিজুর রহমানের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। 

রংপুর মহানগর পুলিশের (আরএমপি) ক্রাইম ডিভিশনের উপ-কমিশনার আবু মারুফ হোসেন এতথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, ত্ব-হা নিখোঁজের ঘটনায় করা সাধারণ ডায়েরির (জিডি) আলোকে তিনজনকে আদালতে তোলা হয়েছে। এখন আদালতই এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করবেন।

আলোচিত ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত কারণে আত্মগোপনে ছিলেন বলে জানিয়েছে রংপুর মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।তবে সরকারকে বা দেশের মানুষকে বিব্রত করতে তিনি আত্মগোপন করেননি বলেও জানিয়েছে ডিবি। 

শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছে রংপুর মহানগর পুলিশের ক্রাইম ডিভিশনের উপ-কমিশনার আবু মারুফ হোসেন।

তিনি বলেন, এটা উদ্দেশ্যমূলক না। সরকারকে বা দেশের মানুষকে বিব্রত করতে এটা করেনি। এখন পর্যন্ত এটা মনে হয়নি। এত কিছু ভেবে তারা করেনি।  আবু ত্ব-হা শিক্ষিত ছেলে। তাই সে ফোন বন্ধ করে রেখেছিল। সে জানে তার ফোন যদি অন করা হয় তাহলে তাকে শনাক্ত করা যাবে। তাই সে ফোন সুইজড অফ করে রেখেছিল। তারা সবাই একসঙ্গে ছিলেন। একই বাড়িতে ছিলেন। 

ড্রাইভার আমির উদ্দিনকে মডিফাইয়েড করে বলেছিল, আমাকে একটু সহায়তা করো। তাহলে আমার জন্য ভালো হবে। আমাকে এ পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে হলে আমাকে একটু হেল্প করো। আমারা একটু গোপনে থাকি।  
 
তিনি বলেন, সামাজিক ও পারিবারিক পরিস্থিতি থেকে বাঁচতেই আত্মগোপন করেছেন ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান। 

ডিবি পুলিশের দাবি অনুযায়ী ব্যক্তিগত কারণে ত্ব-হা ও তার সঙ্গীরা আত্মগোপনে ছিলেন।  তবে ব্যক্তিগত কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ জানায় এই মুহূর্তে তারা বলতে পারবেন না। সেটা ভেরিফাই করতে হবে। তাদের তথ্য যাচাই-বাছাই করব। আসলে সব ব্যক্তিগত কারণ তো বলা যায় না।

পরে ডিবি পুলিশ জানায়, দাম্পত্য কলহে অতিষ্ঠ হয়ে ত্ব-হা আদনান স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে গিয়েছিলেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।

জিজ্ঞাসাবাদে আবু ত্ব-হা পুলিশকে আরও জানিয়েছেন ঘটনার দিন রাজধানীর গাবতলী থেকে স্ত্রীর মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে সর্বশেষ কথা বলেন। এরপর মোবাইল বন্ধ করে দেন। সেখান থেকে চলে যান গাইবান্ধা সদর উপজেলার ত্রিমোহনীতে এক বন্ধুর বাড়িতে। এরপর থেকে তিনি কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। ব্যক্তিগত কারণে বন্ধুর বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। এখানে তার সঙ্গে দুই সঙ্গী ছিলেন। তারা হলেন গাড়িচালক আমির উদ্দিন ও মুহিত। 

এর আগে শুক্রবার দুপুর পৌনে ৩টার দিকে তাকে রংপুর নগরীর মাস্টারপাড়া এলাকার শ্বশুরবাড়িতে (প্রথম স্ত্রীর বাবার বাড়ি) পাওয়া যায় আবু ত্ব-হাকে।সেখান থেকে তাকে পুলিশ বের করে নিয়ে যায়।

তখন রংপুরের কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশিদ গণমাধ্যমকে জানান, আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের সঙ্গে নিখোঁজ অন্য তিনজনও বাড়ি ফিরেছেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

এরপর আবু ত্ব-হাকে রংপুর মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয়ে নেয়া হয়।

শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে ত্ব-হা তার সেই বাড়িতে ফেরেন। আর তার সেখানে ফেরার সময় দেখেছেন স্থানীয় দুই বাসিন্দা বিপ্লব মিয়া ও মো. খোকন।

বিপ্লব মিয়া বলেন, ‘একাই ঢুকছিল।তার শরীরে খালি শুধু একটা হাফ হাতা গেঞ্জি আর পায়জামাটা আর মাস্ক পরা ছিল। আর কোনো কিছু ছিল না।’

বিপ্লব আরও বলেন, ত্ব-হা তার শ্বশুর বাড়ি ঢুকেন পেছনের দরজা দিয়ে।

‘সাড়ে ১২টার দিকে এখানে নামি আমার গলির দিকে আসছে। ওনার বাড়ির পেছনে একটা দরজা আছে। পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকছে।’

খোকন নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে তিনি মাস্টারপাড়ায় তাকে দেখেন। কিন্তু ত্ব-হা সে সময় কোনো কথা বলেননি। মুখে আঙুল দিয়ে চুপ থাকতে বলেন।

মুখে আঙ্গুল রেখে ত্ব-হা কী ইশারা করেছেন, সেটি বুঝিয়ে তিনি বলেন, ‘তখন তিনি বলেন, চুপ কর, চুপ কর। কোনো কথা হবে না। পরে আলাপ হবে।

‘এই কথা বলে, তখন তিনি চলে গেলেন।’

সেখানে থেমে না থেকে উৎসুক হয়ে ওঠা খোকন চলে যান ত্ব-হার শ্বশুরবাড়ি। তবে সেখানে গিয়েও তিনি তার প্রশ্নের জবাব পাননি।

প্রতিবেশী বিপ্লব ও খোকন।
খোকন বলেন, ‘আমি কিছু বললাম না (ত্ব-হার বক্তব্য শোনার পর)। তখন আমি ওনার বাসায় (শ্বশুর বাড়ি) গেলাম। যাওয়ার পরে ওনার শালি বলল, ‘এখন কোনো কথা বলবে না। কালকে ব্রিফিং হবে তখন তিনি কথা বলবে।’

উল্লেখ্য,গত ১০ জুন রংপুর থেকে ঢাকায় আসার পথে রাজধানীর গাবতলী এলাকা থেকে ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান নিখোঁজ হন। এছাড়াও তার সঙ্গে নিখোঁজ হয়েছেন আব্দুল মুহিত, মোহাম্মদ ফিরোজ ও গাড়িচালক আমির উদ্দীন। 

ত্ব-হার নিখোঁজ হওয়ার তথ্য জানিয়ে দারুসসালাম এবং মিরপুর থানায় গেলে কোনো থানাই সাধারণ ডায়েরি বা মামলা গ্রহণ করেনি বলেও অভিযোগ করেছেন তার পরিবার। এ নিয়ে সর্বশেষ রংপুর সদর থানায় একটি জিডি করা হয়।

আবু ত্ব-হার সঙ্গে আরও যারা নিখোঁজ হয়েছিলেন তারা হলেন- আব্দুল মুকিত, মোহাম্মদ ফিরোজ ও গাড়িচালক আমির উদ্দিন ফয়েজ। আদনানের পরিবার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্রে জানা গেছে আদনানের বিভিন্ন ইসলামিক অনুষ্ঠান ও মাহফিলে তারা থাকতেন। এই তিনজনের সঙ্গে আদনানের সখ্যতা ছিল।

আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের প্রকৃত নাম আফছানুল আদনান। বয়স ৩১। তার মা আজেদা বেগম। বাবা মৃত রফিকুল ইসলাম। ছোট বোন রিতিকা রুবাইয়াত ইসলাম। আদনানের প্রথম স্ত্রী আবিদা নুর, তাদের সংসারে তিন বছরের একটি মেয়ে ও দেড় বছর বয়সী একটি ছেলে-সন্তান রয়েছে।

বাবা মারা যাওয়ার পর রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডে নানার বাড়িতে বড় হন আদনান। বিয়ের পর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে নগরীর নিউ শালবন এলাকায় বসবাস করেন। কয়েক মাস আগে আদনান আরেকটি বিয়ে করেন। তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন্নাহার সারা ঢাকার মিরপুর আল ইদফান ইসলামী গার্লস মাদরাসার পরিচালক ও শিক্ষক।

আদনান প্রাতিষ্ঠানিক কোনো আরবি শিক্ষা গ্রহণ করেননি। তিনি কারমাইকেল কলেজ থেকে দর্শন বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। কোরআন শিক্ষার জন্য কিছুদিন স্থানীয় একটি মাদরাসায় তালিম নেন। এ সময় তিনি আহলে হাদিস নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এছাড়াও লাইফ ফাউন্ডেশন, আলোর পথ এবং একাডেমিক কোরআন স্টাডিজ নামে সংগঠনে জড়িত রয়েছেন। ঢাকার মিরপুর আল ইদফান ইসলামী গার্লস মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতাও তিনি।

সোনালীনিউজ/আইএ

Haque Milk Chocolate Digestive Biscuit
Dutch Bangla Bank Agent Banking
Wordbridge School