abc constructions
২০ দিনে পাঁচ ঘটনায় নিহত নয় জন

সহিংসতা হচ্ছে পরকীয়ায়


বিশেষ প্রতিনিধি জুন ১৯, ২০২১, ০৯:০৬ পিএম
সহিংসতা হচ্ছে পরকীয়ায়

ঢাকা : সম্প্রতি পরকীয়া ঘিরে একের পর এক সহিংস ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে সাধারণ মানুষের মাঝে। মাত্র ২০ দিনে সারা দেশে কমপক্ষে ৫টি এমন ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার পেছনে ছিল পরকীয়া অর্থাৎ স্বামী বা স্ত্রীর সাথে অন্য নারী বা পুরুষের অনৈতিক সম্পর্ক।

কিন্তু নৃশংস খুন, হত্যা বা অমানবিক নির্যাতনের ঘটনার পরই এসব আইনের আওতায় আসে।

অথচ অনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে নারী বা পুরুষ কোনো মানসিক নির্যাতনের শিকার হলেও বিদ্যমান আইনে সহায়তা পাওয়ার সুযোগ নেই। এনিয়ে হাইকোর্টে রিটও হয়েছে। তাই দ্রুত আইনটি সংস্কারের প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশের দণ্ডবিধি ৪৯৭ ধারায় বিয়ের পবিত্রতা রক্ষায় ব্যভিচারকে অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

এখানে বলা হয়, ‘কোনো ব্যক্তি যদি, অপর কোনো নারীর স্বামীর বিনা সম্মতিতে বা যৌনকামনার উপস্থিতি ছাড়া যৌনসঙ্গম করে, যে নারী অপর কোনো পুরুষের এরূপ যৌনসঙ্গম ধর্ষণের অপরাধ না হলে, সে ব্যক্তি ব্যভিচার করেছে বলে পরিগণিত হবে ও তাকে যে কোনো বর্ণনার কারাদণ্ড যার মেয়াদ সাত বছর পর্যন্ত হতে পারে বা জরিমানা দণ্ড বা উভয় দণ্ডে শাস্তিযোগ্য হবে। এরূপ ক্ষেত্রে স্ত্রীলোকটি দুষ্কর্মের সহায়তাকারিণী হিসেবে শাস্তিযোগ্য হবে না।’

পরকীয়ার সাজাসংক্রান্ত  দণ্ডবিধির (পেনাল কোড) ৪৯৭ ধারা কেন অবৈধ এবং অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে ২০১৯ সালের ৮ জুলাই রুল জারি করে হাইকোর্ট। এর আগে ওই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান এ বিষয়ে রিটটি করেন।

এ প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী কোনো স্ত্রী পরকীয়া করলে যার সঙ্গে পরকীয়া করবে শুধু সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রয়েছে।  অথচ স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীর কিছুই করার নেই।

একইভাবে স্বামী পরকীয়া করলে স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে বা যার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িত হবে তার বিরুদ্ধে কোনো প্রতিকার পাবেন না। উপরন্ত স্বামী যদি কোনো বিধবা বা অবিবাহিত নারীর সঙ্গে পরকীয়া জড়িয়ে পড়েন এবং স্ত্রী যদি স্বামীর অনুমতি সাপেক্ষে পরকীয়ায় জড়িত হয় তা আইনত বৈধ।

তিনি আরো বলেন, এই আইন সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ৩২ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং এটা অদ্ভুত ও বৈষম্যমূলক।

দেশের প্রচলিত আইনে ব্যভিচার ও পরকীয়ার বিষয়ে ব্যারিস্টার সাবরিনা জেরিন বলেন, পেনাল কোডের ৪৯৭ ধারায় ব্যভিচারের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, একজন বিবাহিত পুরুষ যখন অন্যের বিবাহিত স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ান, সেটিই ব্যভিচার। এক্ষেত্রে নারী যদি অবিবাহিত বা বিধবা হন, তাহলে সেটি আইনের ধারায় পরকীয়া হিসেবে স্বীকৃত না।

অন্যদিকে কোনো স্ত্রী যদি অন্যের স্বামীর সঙ্গে পরকীয়া করেন, তাহলেও সেই স্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।

কিন্তু যার সঙ্গে তিনি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছেন, সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। আবার পরকীয়া করছেন যে ব্যক্তি, তার স্ত্রীও কোনো আইনের সাহায্য নিতে পারবেন না। এর ফলে ভুক্তভোগী মাত্রেই আইনের সাহায্য পান না।

বিদ্যমান এই আইনকে অসম্পূর্ণ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, একে পরিপূর্ণ না করলে ভুক্তভোগী নারী বা পুরুষ আইনের সাহায্য থেকে বঞ্চিত হতেই থাকবেন।

এই আইনজীবী বলেন, এখানে লক্ষ করার মতো বিষয় হলো, পরকীয়ার কারণে নির্যাতনের শিকার হলেও পরকীয়াজনিত কারণে আইনি কোনো প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে পারবেন না। আইনের আশ্রয় নিতে হলে তাকে পারিবারিক সহিংসতার বিষয়টি সামনে আনতে হবে।

তিনি আরো বলেন, যেসব নারী শারীরিক নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন, তারা যেন অবশ্যই কোনো সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তারি পরীক্ষা করান। সেখানে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের রেকর্ড কাজে লাগবে। এছাড়া ভিডিও, ছবি বা মেসেজও মামলায় সাহায্য করবে।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও পরকীয়া একটি ভয়াবহ অপরাধ। এর শাস্তিও কঠিন।

এ প্রসঙ্গে বঙ্গভবন জামে মসজিদের ইমাম জিয়াউর রহমান বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরকীয়া-ব্যভিচারের ভয়ানক শাস্তির কথা বর্ণনা করেছেন।

তিনি বলেন, ‘হে মানব জাতি, তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ করো। ব্যভিচারকারীদের জন্য ছয়টি কঠিন শাস্তি রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে ও তিনটি আখেরাতে প্রকাশ পাবে।

যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে—তার চেহারার উজ্জ্বলতা বিনষ্ট হবে, তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং তার দরিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে। আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে—সে আল্লাহর অসন্তোষ, কঠিন হিসাব ও জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে।’ (বায়হাকি-৫৬৪)

সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা : গত ২০ দিনে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বেশ কয়েকটি পরকীয়া সংশ্লিষ্ট পরিবারিক খুনের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার কোনটিতে স্ত্রী খুন করে লাশ টুকরো টুকরো করেছে স্বামীর, কোনোটিতে স্বামী কুপিয়ে খুন করেছে ঘুমন্ত স্ত্রীকে। আবার কোনো ঘটনায় প্রকাশ্যে গুলি করে স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে।

গত ১৫ জুন দিবাগত রাতে সিলেটের গোয়াইনঘাটে মা ও দুই শিশু সন্তানসহ তিনজনকে গলা কেটে হত্যার ঘটনা ঘটে। এসময় বন্ধ থাকা ওই ঘর থেকে স্বামী হাফিজুরকে উদ্ধার করা হয়।

পুলিশের ধারণা, পারিবারিক বিরোধের জের ধরে হাফিজুর নিজেই দা দিয়ে কুপিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। নিহতরা হলেন-হিফজুর রহমানের স্ত্রী আলেয়া বেগম (২৭), ছেলে মিজান আহমদ (১১) ও মেয়ে তানিসা (৫)।

গত ১৩ জুন কুষ্টিয়া শহরের ৬নং ওয়ার্ডের কাস্টমস মোড় এলাকায় স্ত্রী-সন্তানসহ তিনজনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে খুলনার ফুলতলা থানায় সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর (এএসআই) সৌমেন। তাকে আটক করা হয়েছে। নিহত আসমা খাতুন ছিলেন সৌমেনের দ্বিতীয় স্ত্রী। তবে তিনি থাকতেন প্রথম স্ত্রীর সাথে। নিহত শিশু রবিন আসমা খাতুনের ছেলে। তবে পুলিশ নিহত শাকিলের সঙ্গে নিহত আসমার সম্পর্কের বিষয়টি জানাতে পারেনি। একাধিক বিয়ে থেকে পারিবারিক কলহের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত ১০ জুন রাজধানীর ভাটারা থানাধীন সোলমাইদের নামাপাড়ায় ঘুমন্ত স্ত্রীকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে আবুল কাশেম নামের এক রিকশাচালক। স্ত্রীর অন্য কারো সঙ্গে  বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক আছে এমন সন্দেহ থেকে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে পুলিশকে তিনি জানান।

স্বামীর একাধিক বিয়েসহ পারিবারিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ফাতেমা খাতুন নামক এক নারী তার স্বামী ময়না মিয়াকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে নিজেই তিন টুকরা করেন। পরে তা রাজধানীর বিভিন্ন  স্থানে ফেলে আসেন। গত ৩১ মে রাজধানীর মহাখালী থেকে আটক করা হয় তাকে। এর আগে ময়না মিয়ার মৃতদেহের খণ্ডিত অংশগুলো উদ্ধার করে পুলিশ।

গত ২৫ মে রাজাধানীর দক্ষিণখান এলাকার একটি মসজিদের সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে আজহার নামে এক যুবকের খণ্ডিত ৬ টুকরা মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ তদন্তে জানতে পারে, আজহারের স্ত্রী আসমার পরিকল্পনাতে স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুর রহমান খুন করেন আজহারকে। আর এসব কিছুই তিনি করেন এক সন্তানের জননী আজহারের স্ত্রীর নির্দেশে। কারণ ৬৪ বছর বয়সী আব্দুর রহমানের সাথে আজহারের স্ত্রী আসমার ছিল পরকীয়ার সম্পর্ক।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Haque Milk Chocolate Digestive Biscuit
Dutch Bangla Bank Agent Banking
Wordbridge School