abc constructions

বাজেটে গবেষণা খাত কেন অবহেলিত


মো. হযরত আলী জুন ২১, ২০২১, ০২:৩০ পিএম
বাজেটে গবেষণা খাত কেন অবহেলিত

ঢাকা : ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট পরিকল্পনা পেশ করা হয়েছে। ৬ লক্ষ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বিশাল অঙ্কের এই বাজেট। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য যা চোখ কপালে ওঠার মতো ব্যাপার। তবে অবাক করার মতো বিষয় হলো-এত বড় বিশাল আকারের বাজেটে গবেষণা খাতের জন্য আলাদা করে কোনো বরাদ্দ নেই, যেখানে একটি উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়ন ও স্বনির্ভরতার জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার গবেষণা খাতকে।

কিছুদিন আগে সংবাদমাধ্যমে নজরে পড়ছিল বুয়েট শিক্ষার্থীদের একটি দল ‘টিম ইন্টারপ্লানেট’ মার্স সোসাইটি সাউথ এশিয়া আয়োজিত আইপিএএস চ্যালেঞ্জে অংশগ্রহণ করে ৮ম স্থান অধিকার করেছে। এমনকি উদ্ভাবনে সেরার খেতাব অর্জন করেছে। ‘নির্ভীক’ নামক তাদের রোবটটি মঙ্গলের বিরূপ আবহাওয়ায় উড়তে ও টিকে থাকতে সক্ষম। অনেক সীমাবদ্ধতা, গবেষণাগারের অপ্রতুলতা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এরকম সাফল্য আমাদেরকে আনন্দিত করে। বিপরীতে হতাশাও কাজ করে, যখন দেখি দক্ষ এবং প্রত্যয়ী এরকম তরুণ থাকা সত্ত্বেও তাদের গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া ও সহযোগিতা করা হচ্ছে না। একটি গুণগত মানসম্পন্ন সব সুযোগসমৃদ্ধ গবেষণাগারই নেই।

ফলাফল হচ্ছে, স্যাটেলাইট তৈরি করতে হচ্ছে ভিন্ন দেশ থেকে বাড়তি টাকা গুনে। অথচ বাংলাদেশেরই তরুণ বিজ্ঞানীদল সিঙ্গাপুর থেকে ‘ব্র্যাক অন্বেষা’ নামের মিনি স্যাটেলাইট তৈরি করেছিল। সামরিক সব ছোট-বড় সরঞ্জাম আমদানি করতে হচ্ছে। একটি দেশীয় মোটর গাড়ি নির্মাণের কারখানাও নেই। একটি ছোটখাটো ব্রিজ নির্মাণের জন্যও ভিন দেশ থেকে ইঞ্জিনিয়ার আনতে হচ্ছে। যে কৃষি খাতে অপার সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ, যেখানে-সেখানে এলোমেলো বীজ ছিটিয়ে রাখলেই চারা গজায়, সেখানে শুধু চাল ব্যতীত সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার আমদানি করতে হচ্ছে। দেশে বর্তমানে প্রায় নতুন করে ৪ কোটি ৮০ লাখ মানুষ বেকার হয়েছে, এমনটিই বলছে বিবিএস। এদের নিয়ে নেই কোনো পরিকল্পনা। এই অবস্থায় প্রয়োজন ছিল গবেষণা খাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া এবং এসব সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বের করা।

যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, কানাডার কথা বাদই দিলাম। ভারত তো তৃতীয় বিশ্বের দেশ। ভারতের কথাই একবার ভাবুন। নিজেদের প্রযুক্তিতে তারা চন্দ্রযান তৈরি করছে। চন্দ্র অভিযান পরিচালনা করছে। অস্ত্র রপ্তানি করছে। বাংলাদেশের তো সবজির জন্য ভারতের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হয়। একবার দেওয়া বন্ধ করলেই সবজির বাজারে আগুন লেগে যায়। উন্নত চিকিৎসার জন্য আমরা ভারত যাচ্ছি। এগুলো কি এমনিতেই হয়েছে? না, এমনিতেই হয়নি। স্বাধীনতা লাভের আগে থেকেই তৎকালীন কংগ্রেস দলীয় ভিত্তিতেই ‘প্ল্যানিং কমিটি’ নামে একটি কমিটি গঠন করেছিল, যা স্বাধীনতার পর ‘প্ল্যানিং কমিশন’-এ রূপ নেয়। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগেই উল্লিখিত প্ল্যানিং কমিটির মাধ্যমে নেহরু ভারতের ভবিষ্যৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির একটি রূপরেখা ঠিক করে রেখেছিলেন। উল্লেখ্য, ওই কমিটিতে তৎকালীন ভারতের নামকরা পণ্ডিত ব্যক্তিত্বদের আধিক্য ছিল, আমলাদের স্থান প্রায় ছিলই না বলা যায়। যতটা জানা যায়, ভবিষ্যৎ এই রূপকল্পে বিজ্ঞানের গবেষণা ও উন্নয়নে কয়েকটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। যেমন, ভারতের পারমাণবিক কমিশন গঠন ও এর কার্যক্রম চিহ্নিতকরণ; আইটিগুলোর রূপকল্প তৈরি করা; খাদ্যে ভারতের স্বনির্ভরতা অর্জন এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে গবেষণা ও উন্নয়ন রূপকল্পের একটা কাঠামো তৈরি করা ইত্যাদি। ফলে মাত্র কয়েক বছর আগে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ভারতের সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তির চুক্তি করতে গিয়ে অকপটে বলেছেন, ভারতের সফট ও জাপানের হার্ডওয়্যারের মিলন হলে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারব। আজ থেকে ৭০ বছর আগে ভারতের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা বিশ্বপ্রযুক্তিতে একটি প্রজ্ঞাবান রূপকল্পের জন্ম দেয়, যার ফল ভারত আজ ভোগ করছে।

বর্তমানে ভারত যোজন যোজন এগিয়ে আমাদের থেকে। সময় হয়েছে আমাদের গবেষণার মাধ্যমে আগামীর যাত্রা ঠিক করা। কৃষি ও খাদ্যের নিশ্চিয়তা প্রদান, জ্বালানির নিশ্চয়তা, চিকিৎসা ও প্রযুক্তির উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়গুলোকে সামনে রেখে পরিকল্পনা সাজানো এখন সময়ের দাবি। হয়তো এর ভেতর দিয়েই আমরা আগামী দিনের একটি স্বনির্ভর ও উন্নত বাংলাদেশকে দেখতে পাব।

লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

 

Haque Milk Chocolate Digestive Biscuit
Dutch Bangla Bank Agent Banking

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School