abc constructions

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন প্রযুক্তি


অনিক চক্রবর্তী জুলাই ২৫, ২০২১, ০২:৪৭ পিএম
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন প্রযুক্তি

ঢাকা : বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলতে আবর্জনা সংগ্রহ, পরিবহন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পুনর্ব্যবহার এবং নিষ্কাশনের সমন্বিত প্রক্রিয়াকে বোঝায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ ১ হাজার। এই বর্ধিত জনসংখ্যার ফল হিসেবে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ বর্জ্য উৎপন্ন হয় এবং প্রতিনিয়ত সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমস্যাও বেড়ে চলছে। এভাবে চলতে থাকলে ২০২৫ সালে দৈনিক প্রায় ৪৭ হাজার ৬৪ টন বর্জ্য উৎপন্ন হবে। তখন বর্জ্য উৎপাদনের হার বেড়ে বছরে মাথাপিছু ২২০ কিলোগ্রাম হবে।

পরিবেশদূষণ হ্রাস, জীববৈচিত্র্য রক্ষা, মানুষকে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা ইত্যাদির উদ্দেশ্য সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অতীব জরুরি। সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে থাকে। বর্জ্যের পরিমাণ হ্রাস, বর্জ্য পদার্থ সংগ্রহ, উপযুক্ত ব্যবস্থার মাধ্যমে বর্জ্য পদার্থের পুনর্ব্যবহার ও নতুন সম্পদ সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারই পারে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে। সমন্বিত এবং সম্পূর্ণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তিনটি R নীতি প্রয়োগ করা হয়। সেগুলো হচ্ছে—Reduce (কমানো), Re-use (পুনর্ব্যবহার) এবং Recycle (পুনশ্চক্রীকরণ)। এই নীতিগুলোর বাস্তবায়নে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার পুরো প্রক্রিয়াটিকেই সহজ ও সাবলীল করে তোলে। বাংলাদেশ প্রতি বছর জাতিসংঘ ঘোষিত ‘বিশ্ব বসতি দিবস’ যথাযথ মর্যাদায় উদ্যাপন করে। ২০১৯ সালে বিশ্ব বসতি দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার’। এর মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে যথাক্রমে—Automation, Robotics, ElectricVehicles, Renewable energy technologies, Biotechnologies এবং Artificial Intelligence

এই ছয়টি প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারই পারে বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করতে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বর্তমানে এই প্রতিপাদ্যটি অত্যন্ত সময়োপযোগী ও তাৎপর্যপূর্ণ। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আলোচ্য প্রতিপাদ্যের বিষয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় হতে সকল নির্মিতব্য ভবনে সুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও আবর্জনা ব্যবস্থাপনার সংস্থান রেখে ইমারত (নির্মাণ, উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও অপসারণ) বিধিমালা, ২০০৮-কে হালনাগাদ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি আবাসন প্রকল্পসমূহে ‘সুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’ এবং ‘সলিড ওয়েস্ট ডাম্পিং প্ল্যান্ট’ নির্মাণের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা হয়েছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্মিত ভবনগুলোতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের সংস্থান করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসহ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত সকল সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, এনজিও’র সাথে সমন্বয় করে নগরের সৃষ্ট বর্জ্য রিসাইক্লিং করতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

বর্জ্য আমাদের জন্য বোঝা নয়, বর্জ্য আমাদের সম্পদ। এক্ষেত্রে দেশের জন্য রোল মডেল যশোরের ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। ২০১৮ সালে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্ল্যান্টটি নির্মিত হয়। এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৩৯ একর জমির ওপর এই প্ল্যান্টটি নির্মিত হয়। প্ল্যান্টটিতে প্রতিদিন ৪২ জন শ্রমিক কাজ করেন। যশোর শহর, উপশহর, ইউনিয়ন ও ক্যান্টনমেন্টের কিছু এলাকা থেকে ময়লা আবর্জনা কম্পোস্ট প্ল্যান্টে জমা হয়। প্ল্যান্টের প্রবেশমুখে স্থাপিত ওয়েটিং ব্রিজের ওপর দিয়ে ট্রাক নেওয়া হয়। এ ব্রিজ ময়লার পরিমাপ করে। ময়লা রাখা হয় সটিং প্ল্যাটফরমে। এ প্ল্যাটফরম ট্রমেলের মাধ্যমে ময়লা বাছাই করে কম্পোস্ট বক্সে দেওয়া হয়। বাছাইকৃত ময়লা আবর্জনা ডিসাইক্লিন করে শুকানোর পর নেটিং করে একটি অংশ দিয়ে সার ও আরেকটি অংশ দিয়ে বায়োগ্যাস তৈরি করা হয়। এই ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড কম্পোজ প্ল্যান্ট থেকে প্রতিদিন ৫ টন সার উৎপাদন হচ্ছে। অপরদিকে এখানের উৎপাদিত বায়োগ্যাস দুটি জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুতে রূপান্তরিত হচ্ছে। রূপান্তরিত বিদ্যুৎ দিয়েই চলছে এ প্ল্যান্ট। ফলে এ কার্যক্রম পরিচালনা করতে অতিরিক্ত কোনো বিদ্যুৎ লাগছে না। উপরন্তু ময়লা থেকে উৎপাদিত সার কৃষি কাজে ব্যবহারের উপযোগী।

উন্নত দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত সংস্থাগুলো এবং পৌরসভাগুলো সক্রিয়ভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্য প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনগুলোর ব্যবহার শুরু করেছে। সেখানে রুট অপ্টিমাইজেশনের সাহায্যে বর্জ্য সংগ্রহকারী ট্রাকগুলো প্রতিটি ডাম্পারের ট্র্যাশ স্তরটি পরীক্ষা করে। এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে সেইসব দেশ সময় ও অর্থ উভয়ের অপচয় অনেকাংশেই রোধ করতে পারে ।

এছাড়া আইওটি চালিত স্মার্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত দেশগুলোতে চোখে পড়ার মতো। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে সাধারণ আইওটি ব্যবহারের বিষয়টি হলো রুট অপ্টিমাইজেশন, যা পুরো শহর জুড়ে ডাম্পস্টারগুলো খালি করার সময় জ্বালানি খরচ হ্রাস করে। সর্বাধিক জনপ্রিয় এবং সম্ভাব্য স্মার্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এন্ডপয়েন্টস সেন্সর), গেটওয়েস, আইওটি প্ল্যাটফরম এবং ওয়েব ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনগুলোর ব্যবহার হয় সবচেয়ে বেশি। একটি সেন্সর বর্জ্যের ফিল লেভেল পরিমাপ করার জন্য একটি ডাম্পসটারের সাথে সংযুক্ত থাকে। সেন্সর থেকে ক্লাউডে ডেটা প্রেরণ, আইওটি প্ল্যাটফরম এবং সেন্সরের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনতে গেটওয়েস ভূমিকা পালন করে। কিছু এজ-প্রসেসিং সক্ষম গেটওয়েগুলিরও প্রয়োজন। এই ডিভাইসগুলো মূল ডেটা প্রক্রিয়া করে। আইওটি প্ল্যাটফরমটি মূল ডেটাগুলোকে তথ্যে রূপান্তরিত করার কাজ করে। বেশিরভাগ সময়, আইওটি প্ল্যাটফরমগুলো ক্লাউডে হোস্ট করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করতে বিভিন্ন সেন্সর ব্যবহার করা যেতে পারে। স্মার্ট বর্জ্য পরিচালনার আইওটি সমাধানগুলোতে সর্বাধিক ব্যবহূত সেন্সরগুলি হলো আল্ট্রাসোনিক লেভেল সেন্সর। অন্যান্য সেন্সরের মধ্যে অবস্থান, তাপমাত্রাসহ বিভিন্ন প্যারামিটার পর্যবেক্ষণ করতে মোশন সেন্সর, জিপিএস সেন্সর এবং ভাইব্রেশন সেন্সর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই জাতীয় সেন্সর এবং আইওটি প্ল্যাটফরম ব্যবহারের বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে, যেমন—

এক-সংগ্রহের ব্যয় হ্রাস : স্মার্ট ডাম্পস্টারগুলো তাদের রিয়েল-টাইম পূরণের স্তরের তথ্যগুলো বর্জ্য সংগ্রহকারীদের নিকট প্রেরণ করে। আইওটি সমাধানটি ডেটা ব্যবহার করে এবং বর্জ্য সংগ্রহের ট্রাকগুলোর জন্য সর্বোত্তম রুট নির্বাচন করে। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যা জ্বালানি সাশ্রয় করার পাশাপাশি সময়ের অপচয় রোধ করে।

দুই-কোনো মিস পিকআপ নেই : গতানুগতিক বর্জ্য সংগ্রহের পদ্ধতির বিপরীতে স্মার্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রক্রিয়াটি আবর্জনার ডাম্পস্টারগুলো থেকে উপচে পড়া রোধ করে। যখন কোনো ট্র্যাশ বিন পূর্ণ হতে থাকে, তৎক্ষণাৎ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয় এবং বর্জ্য সংগ্রহের ট্রাকগুলো পূর্বনির্ধারিত সময়ের আগেই পিকআপের জন্য নির্ধারিত জায়গায় যেতে পারে।

তিন-বর্জ্য উৎপাদনের বিশ্লেষণ : স্মার্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেবল রুট অপ্টিমাইজেশনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বলা হয় যে আইওটির আসল উপকারিতা ডেটা বিশ্লেষণের মধ্যে রয়েছে। বাজারে যেসব আইওটি সমাধান পাওয়া যায় অধিকাংশই ডেটা অ্যানালিটিক্স ফিচারের সাথে সংযোজিত। এই ধরনের প্রযুক্তি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত সংস্থাগুলোকে ভবিষ্যতে বর্জ্য উৎপাদনের পূর্বাভাস দিতে সহায়তা করতে পারে।

চার-কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন হ্রাস : বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পুনর্ব্যবহারের সময় কার্বনের উপস্থিতি সম্পর্কে অনেক আলোচনা এবং বিতর্ক হয়েছে। রুট অপ্টিমাইজেশনের ফলে বর্জ্য সংগ্রহকারী যানবাহনগুলো শুধু নির্দিষ্ট ডাস্টবিন থেকেই বর্জ্য সংগ্রহ করে, ফলে যানবাহনগুলোর জ্বালানি গ্রহণের পরিমাণ অনেকাংশেই কমে যায়, যা শেষ পর্যন্ত কার্বনের উপস্থিতি হ্রাস করে এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়াটিকে পরিবেশবান্ধব করে তোলে।

লেখক : শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ

 

Haque Milk Chocolate Digestive Biscuit
Dutch Bangla Bank Agent Banking

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School