abc constructions

‘জোড়দিয়া শেখপাড়া এখন ভ্যাকসিনেটেড গ্রাম’


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ২৯, ২০২১, ০৯:১২ পিএম
‘জোড়দিয়া শেখপাড়া এখন ভ্যাকসিনেটেড গ্রাম’

সাতক্ষীরা: গ্রামাঞ্চলে মানুষের ভ্যাকসিন নিতে অনীহা থাকলেও ভিন্ন চিত্র সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ী ইউনিয়নের জোড়দিয়া শেখপাড়া গ্রামে। স্থানীয় তরুণদের উদ্যোগে ইতিমধ্যে এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ করোনা ভ্যাকসিনের আওতায় এসেছে। 

বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) সকারে ফিংড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে জোড়দিয়া শেখপাড়া গ্রামকে ‘ভ্যাকসিনেটেড গ্রাম’ ঘোষণা করেছেন।

সাতক্ষীরা জেলা সদর থেকে ১০ মাইল দূরের এই গ্রামে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে অনেকেই কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। করোনার উপসর্গ নিয়ে মারাও গেছেন। তবুও ভ্যাকসিন গ্রহণে অনীহা কাটছিল না গ্রামবাসীর। বিষয়টি ভাবায় জোড়দিয়া শেখপাড়ার তরুণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শেখ শাকিল হোসেনকে। তিনি স্থানীয় তরুণদের সাথে নিয়ে গ্রামের মানুষকে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন গ্রহণে উৎসাহিত করার উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করেন।

গত তিন সপ্তাহে পুরো গ্রমের চিত্র পাল্টে গেছে। চাকরীজীবী ও প্রবাসী অধ্যুষিত জোড়দিয়া শেখপাড়া গ্রামে প্রায় ১ হাজার ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে ৩০ বছরের নীচের বয়সের, গ্রামের বাইরে অবস্থান করেন, গর্ভবতী, গুরুতর অসুস্থ ও টিকা নিতে অক্ষম ব্যতীত ৩ শতাধিক মানুষ ভ্যাকসিনের আওতায় আসছে। অধিকাংশরাই অন্তত ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজের আওতায় এসেছেন। বাকিরা এসএমএসের অপেক্ষায় আছেন।

ভ্যাকসিনেটেড গ্রামের উদ্যোক্তা শেখ শাকিল হোসেন বলেন, করোনার ভ্যাকসিন সহজলভ্য হলেও ভ্যাকসিনভীতি ও নিবন্ধন সংক্রান্ত জটিলতার কারণে গ্রামের মানুষের ভেতর টিকা গ্রহণে অনীহা ছিল। শুরুতে আমরা গ্রামের তরুণদের নিয়ে সবাইকে ভ্যাকসিনের প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়েছি ও ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী করেছি। কিন্তু, অনেককেই আমরা ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী করতে পারিনি। তখন আমরা এলাকার ধর্মীয় প্রতিনিধিদের শরনাপন্ন হই। গ্রামের মানুষ ধর্মীয় প্রতিনিধিদের কথা শোনে। তাই আমরা মসজিদের ইমামদের সহযোগিতায় মানুষদের টিকা নিতে উৎসাহিত করি এবং তাতে ইতিবাচক সাড়া পাই। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ টিকা গ্রহণে অগ্রহী হয়ে উঠে। এখন সদর উপজেলার জোড়দিয়া শেখপাড়া গ্রামকে ভ্যাকসিনেটেড গ্রাম বলা যায়।

জোড়দিয়া বায়তুল আতিক জামে মসজিদের খতিব ও ইমাম মাওলানা ফরিদ আহম্মাদ আরারী বলেন, তরুণরা আমাকে বিষয়টা জানালে আমি গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি জুম’আর খুতবায় তুলে ধরি। গ্রামবাসীকে ভ্যাকনিন নিতে উৎসাহিত করি। এখন এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ করোনা প্রতিরোধে ভ্যাকসিন নিয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শেখ শাকিল হোসেনের সাথে গ্রামের তরুণ শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন, মিয়ারাজ হোসেন, হাসানুর রহমান, সাকিবুর রহমান, মাহবুবুল হক, আজগার আলী, তৌফিকুজ্জামান ও রোহেল উদ্দীনসহ অনান্যরাও এগিয়ে আসেন এই উদ্যোগে।

গ্রামবাসীদের জন্য বিনামূল্যে টিকার নিবন্ধন করতে গ্রামের বিভিন্ন পয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ নিবন্ধন বুথ স্থাপন করেন ওই তরুণরা। মসজিদগুলোর মাইকে ঘোষণা দিয়ে প্রচার করা হয় এই খবর। সাথে সাথে টিকা কার্ডও বের করে দেন। এছাড়াও মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নিবন্ধন করা হয়। তিন সপ্তাহব্যাপী ধরে চলছে এই বিনামূল্যের নিবন্ধন প্রক্রিয়া। উদ্যোক্তারা সঠিক সময়ে সকলকে টিকাদান কেন্দ্রে যাওয়াও নিশ্চিত করেছেন।

জোড়দিয়া গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সভাপতি শেখ মোনায়েম হোসেন বলেন, তরুণদের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তারা শুরু থেকেই মানুষকে টিকা নিতে উৎসাহিত করছে এবং বিনামূল্যে নিবন্ধন করে দিচ্ছে। তাদের এই জতৎপরতা গ্রামে সচেতনতার বলয় তৈরী করেছে।

ফিংড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমান বলেন, শুরু থেকেই জোড়দিয়া শেখপাড়ার তরুণদের উদ্যোগ পর্যবেক্ষণ করছি। গ্রামের মানুষের ভ্যাকসিন নিতে অনীহা লক্ষ্য করেছি। তবে, জোড়দিয়া শেখপাড়া সেইসব বাঁধাকে জয় করেছেন। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার জোড়দিয়া শেখপাড়া গ্রামই সম্ভবত বাংলাদেশের প্রথম গ্রাম যেখানে ইতিমধ্যে অধিকাংশ মানুষ করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে ফেলেছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সোনালীনিউজ/আইএ

Haque Milk Chocolate Digestive Biscuit
Dutch Bangla Bank Agent Banking
Wordbridge School