abc constructions

নারী-পুরুষের সমঅধিকার এবং ইসলাম


রাশেদ নাইব জুলাই ৩০, ২০২১, ০২:৩৭ পিএম
নারী-পুরুষের সমঅধিকার এবং ইসলাম

ঢাকা : বিশ্বে নারী-পুরুষ সমঅধিকার নিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা। অবস্থা এমন হয়েছে, একদল এখন নারীবাদী হয়ে গেছে। নারীদের সমতা দেওয়া হয়নি। তাদের নেই সামাজিক কোনো মর্যাদা এই ভাবনায় বিভোর এখন মুসলিম অধ্যুষিত সমাজও। পশ্চিমাদের প্ররোচনায় এসে মুসলিম বুনিয়াদের মাঝেও এই ব্যাধি ছড়িয়ে পড়েছে। যতক্ষণ অব্ধি আমরা পশ্চিমাদের চশমা না খুলবো ততক্ষণ অব্দি আমরা নারীদের ইসলাম কী সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে তা দেখবো না। অনেকেই এটা ভাবেন, নারীদের জন্য পর্দা কেন? সম্পদে তারা ভাইয়ের অর্ধেক পাবে কেন? সাক্ষী দেয়ার ক্ষেত্রে দুই নারী সমান এক পুরুষ কেন? ইত্যাদি ফোভিয়াতে তারা প্রতিনিয়ত ভুগতে থাকেন। এর সমাধান পাওয়া যাবে, যদি তারা পশ্চিমাদের অপপ্রচারিত রঙিন চশমা পরিহার করে ইসলামী ভাবধারায় চিন্তা করেন।

পাশ্চাত্যের নারী-পুরুষ সমতার ধারণা ভুল। ব্যক্তি রচিত মতবাদের ভিত্তিতে চিন্তা করলে এর সমাধান কখনো পাওয়া যাবে না। সমতার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হলে ভাবতে হবে সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর দেয়া নিয়মনীতি অনুযায়ী। সেখানে নারী পুরুষ সমান নয় বরং পুরুষের তুলনায় নারীর মর্যাদা অধিকার ও সম্মান অনেকাংশে ইসলাম বেশি দিয়েছে।

যদি নারী অধিকারের কথা বলতে চাই, তাহলে স্পষ্ট ভাবে বলতে হবে নারীরা পুরুষের চেয়েও অধিক পরিমাণ অধিকার ভোগ করছেন। এখানে মর্যাদা, ক্ষমতা, অধিকার ও দায়িত্ব নিয়ে মানুষে ব্যক্তিত্ব গঠিত হয়। নারীর মর্যাদা ক্ষমতা ও অধিকার পুরুষের চেয়ে বেশি। কিন্তু দায়িত্ব কম। আবার নারীর একটি দায়িত্ব আছে যা শত পুরুষের দায়িত্বের চেয়ে বড় ও ভারী। এর নাম মাতৃত্ব। এটি কোনো পুরুষ পালন করতে পারবে না। কখনো সম্ভব নয়। মর্যাদাও এমনই।

প্রতিটি শিশু ও নারী পুরুষের কাছে আমানত, তাদের ভরণপোষণ থেকে শুরু করে সবকিছুই পুরুষের উপরন্যস্ত করেছে ইসলাম। তাহলে বলা যায় ইসলাম তাদেরকে সর্বোচ্চ মর্যাদা ও অধিকার দিয়েছে।

যারা বলে ইসলাম নারী অধিকার দেয়নি, তাদের উচিত এই আয়াতের প্রতি দৃষ্টি দেয়া। যেখানে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নারীরা তোমাদের পোশাকস্বরূপ, তোমরাও নারীদের পোশাকস্বরূপ।’ (সুরা বাকারাহ, আয়াত ১৮৭)। কোরআনে সুরা নিসার ১৯ নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা আবারো ইরশাদ করেন, ‘নারীদের সঙ্গে সদ্ভাবে জীবনযাপন করো।’ ইসলাম নারীকে যে অধিকার দিয়েছে তা পুরুষ অপেক্ষায় কয়েকগুণ বেশি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে পশ্চিমাদের রঙিন চশমায় এসব দেখা যায় না। তারা নারী-পুরুষের সমান অধিকার বলতে বোঝায়, অবাধ মেলামেশা। যেটাকে ইসলাম হারাম করে দিয়েছে। এর মাঝে ছড়িয়ে পড়ে ফেতনা ফাসাদ।

নারীবাদী স্লোগানে যারা বিশ্বাসী, তারা আবারো ফিরতে চাচ্ছে জাহেলিয়াতের সমাজে। যেখানে নারীকে কেবল ভোগসামগ্রী মনে করা হতো। ন্যূনতম সম্মান ইজ্জত ছিলো না নারীদের। বরং মেয়ে সন্তান জন্মনিলে সাথে সাথে তাকে জীবিত দাফন করা হতো। সে সময়ে মানবতার মুক্তির দূত মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাব ঘটে। তিনি নারীকে সম্মান ও ইজ্জত ফিরিয়ে দিয়েছে। যেমন আমরা লক্ষ্য করলেই দেখতে পাই। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, একবার এক লোক মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশি অধিকারী কে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমার মা।’ ওই লোক জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা।’ ওই লোক আবারো জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? এবারো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, ‘তোমার মা।’ (সহিহ বুখারি)

নারীকে ইসলাম কী পরিমাণ সম্মান ও অধিকার দিয়েছে, তার আরেকটা ঘটনা উল্লেখ করলে পরিষ্কার বোঝা যাবে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জামানার বিখ্যাত এক ঘটনার কথা আমরা জানি। মায়ের সেবা করার কারণে হজরত ওয়াইস করনি (রা.) প্রিয় নবীর জামানায় থেকেও সাহাবি হতে পারেননি। একবার ওয়াইস করনি (রা.) নবীজির কাছে খবর পাঠালেন ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার সঙ্গে আমার দেখা করতে মন চায়; কিন্তু আমার মা অসুস্থ, এখন আমি কী করতে পারি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর পাঠালেন, আমার কাছে আসতে হবে না। আমার সঙ্গে সাক্ষাতের চেয়ে তোমার মায়ের খেদমত করা বেশি জরুরি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর গায়ের একটি মোবারক জুব্বা ওয়াইস করনির জন্য রেখে যান। তিনি বলেন, মায়ের খেদমতের কারণে সে আমার কাছে আসতে পারেনি। আমার ইন্তেকালের পরে তাকে আমার এই জুব্বাটি উপহার দেবে। জুব্বাটি রেখে যান হজরত ওমর (রা.) এর কাছে। আর প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে ওমর! ওয়াইস করনির কাছ থেকে তুমি দোয়া নিয়ো।

একইভাবে আধ্যাত্মিক মহিমা অর্জনের ক্ষেত্রেও নারীর কর্তব্য রয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘এ কথা সুনিশ্চিত, যে পুরুষ ও নারী মুসলিম মুমিন, হুকুমের অনুগত, সত্যবাদী, সবরকারী, আল্লাহর সামনে বিনত, সাদকা দানকারী, রোজা পালনকারী, নিজেদের সম্ভ্রমের হেফাজতকারী এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণকারী, আল্লাহ তাদের জন্য মাগফিরাত ও প্রতিদানের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। (সুরা আহজাব, আয়াত: ৩৫)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজের ভাষণের মধ্য দিয়েও নারীদের প্রতি সম্মানের প্রকাশ করেন।

বিদায় হজে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে মানুষ! নারীদের সম্পর্কে আমি তোমাদের সতর্ক করে দিচ্ছি। তাদের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করো না। তাদের ওপর তোমাদের যেমন অধিকার রয়েছে, তেমনি তোমাদের ওপরও তাদের অনুরূপ অধিকার রয়েছে। সুতরাং তাদের কল্যাণের দিকে সবসময় খেয়াল রেখো। বিদায় হজের বাণী থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারী ও পুরুষ উভয়কেই যথাযথ মর্যাদা দিয়ে গেছেন। তিনি পুরুষকে নারীর চেয়ে বেশি নয় বরং উভয়কেই অধিকারের দিক হতে যথাযথ মর্যাদা ও অধিকারের আসনে বসিয়েছেন।

এছাড়াও কেবল ইসলামি উম্মাহর ইমারত (খেলাফতের প্রধান) ও মুসলিম জামাতের ইমামত (পুরুষের জামাতের ইমামতি) ছাড়া নারী অন্য সবকিছুতেই ভূমিকা রাখতে পারে। এটি নারীর প্রতি অবজ্ঞা নয়, বরং মাতৃত্বের বৈশিষ্ট্যের প্রতি পরম শ্রদ্ধা। তবে অধিক স্নেহ, নম্রতা ও কোমলতা এবং ক্ষেত্র বিশেষে ভীরুতা, অমনোযোগিতা, পরিবেশ জ্ঞানের স্বল্পতা দরুন বোধের সীমাবদ্ধতার জন্য (অল্প ব্যতিক্রম ছাড়া) সাধারণত নারীরা সবসময় সবক্ষেত্রে স্বাভাবিক মন-মানসিকতা ধরে রাখতে পারে না। তাই, গুরুত্বপূর্ণ কিছু ক্ষেত্রে তাদের সাক্ষ্য দুজন মিলে একজনের সমান করা হয়েছে। তবে এটিও আইনগত ক্ষেত্র ছাড়া জীবনের সব ক্ষেত্রে নয়। এটি উচ্চতর প্রজ্ঞাময় মহান সৃষ্টিকর্তার সিদ্ধান্ত। প্রকৃতির ওপর মানুষের যেমন হাত নেই, অভিযোগ নেই, ঠিক তেমনই শরিয়তের ওপরও মানুষের হাত নেই, অভিযোগ নেই, থাকতেও পারে না।

সুতরাং ইসলামের আলোয় যখন আপনি সব বিষয় দেখবেন, তখন মনে আর কোনো প্রশ্ন থাকবে না। কারণ, ইসলাম মহান সৃষ্টিকর্তার বিধান। বান্দাদের সম্পর্কে তার চেয়ে ভালো আর কে জানে। কিসে তাদের মঙ্গল, তা তিনি ছাড়া আর কে বুঝবে। মুসলিম নারীরা কত সম্মানে অবস্থান করছে, তা বিশ্লেষণ করে দেখলে দুনিয়ার মানুষ আর যাই করুক, মুসলিম নারীদের জীবন নিয়ে ঈর্ষা করবেই। এর থেকে আমরা স্পষ্ট বুঝতে পাড়লাম।

ইসলাম নারীকে যথাযথ অধিকার দিয়েছে, বরং ক্ষেত্র বিশেষ এর চেয়েও বেশি। আল্লাহতায়ালা আমাদের সঠিক ইলম দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।

লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক

 

Haque Milk Chocolate Digestive Biscuit
Dutch Bangla Bank Agent Banking
Wordbridge School