abc constructions

সংকট আর সম্ভাবনার চ্যালেঞ্জ


বিশেষ প্রতিনিধি জুলাই ৩০, ২০২১, ১০:২৮ পিএম
সংকট আর সম্ভাবনার চ্যালেঞ্জ

ঢাকা : ইউরোপ, আমেরিকাসহ উন্নত দেশে সাধারণ জীবনযাত্রা ও অর্থনীতি সচল হতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে এসব দেশে খুলে দেওয়া হয়েছে শপিংমল, দোকানপাট। কয়েকগুণ বেড়েছে পোশাক-পরিচ্ছদসহ সবকিছুর চাহিদা।

কারণ করোনা মহামারির কবলে পড়ে দীর্ঘদিন ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকায় অনেকেই নতুন কোনো অর্ডার দেননি। ক্রেতাদের অনেকে আসছেন বাংলাদেশে। কেননা অনেক দেশের করোনা পরিস্থিতি বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ। ঠিক এই সময়ে বাংলাদেশে চলছে করোনার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা।

এজন্য সরকার পোশাক কারখানাসহ বেশিরভাগ উৎপাদনমুখী কলকারখানা বন্ধ করে রেখেছে। এতে বেকায়দায় পড়েছেন পোশাকশিল্পসহ রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে সংকট এবং সম্ভাবনার নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে রপ্তানিশিল্প।

দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিমুখী খাত তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকরা জানান, এই মুহূর্তে কারখানা খুলে দেওয়া না হলে যেসব অর্ডার আসতে শুরু করেছে তা হারাতে হবে। ক্রেতারা অন্য দেশে চলে যাবেন। সামগ্রিকভাবে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর।

বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফাকচার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘পোশাক উৎপাদনকারী অনেক দেশে বাংলাদেশের চেয়েও করোনা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় ক্রেতারা ছুটছেন বাংলাদেশে। কিন্তু আমরা যদি তাদের অর্ডার সময়মতো সরবরাহ করতে না পারি তাহলে তারা অন্য কোন দেশে চলে যাবে। যার বিরূপ প্রভাব পড়বে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর।’

এদিকে লকডাউনের কারণে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য কমে যাওয়ায় পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক শিপিং কোম্পানিগুলো জাহাজের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে তারা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ।

অন্যদিকে অর্ডার বেড়ে যাওয়ায় পণ্য পরিবহনে জাহাজ সংকটের কারণে চট্টগ্রাম এবং সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি বন্দরে পণ্যজট তৈরি হয়েছে। এতে হতাশা বাড়ছে রপ্তানিকারকদের মাঝে। বন্দরে অচলাবস্থার কারণে বিদেশি ক্রেতাদের কার্যাদেশ বিমানে করে বা এয়ারফ্রেইটারে পাঠাতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে খরচ বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। আবার এই মুহূর্তে পণ্যবাহী কার্গো বিমানের সংখ্যাও তেমন বেশি না। সবমিলিয়ে পোশাকশিল্পসহ রপ্তানিমুখী শিল্পগুলো আন্তর্জাতিক বাজারের এই মোক্ষম সময়টাকে কাজে লাগানো নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি এবং এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর প্রেসিডেন্ট আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘আমরা ঈদের আগে যে মাল রপ্তানির উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছি, সেগুলো এখনো চট্টগ্রাম বন্দরের ওয়্যারহাউস অথবা ট্রাকে পড়ে আছে কন্টেইনার সংকটে। এই সংকট যে কীভাবে মোকাবিলা করব সেটা নিয়েই আমরা টেনশনে আছি।’

কন্টেইনার এবং জাহাজ সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমদানি-রপ্তানি কম থাকায়  জাহাজগুলো পণ্য ছাড়া খালি চলে না।

দ্বিতীয়ত, ৫ তারিখে লকডাউন দেওয়ার ঘোষণায় অনেকেই মনে করেছে, যত দ্রুত পণ্য উৎপাদন করে বিদেশে পাঠানো যায়। অনেকেই এই চিন্তায় বন্দরে পণ্য পাঠাতে শুরু করলে জট সৃষ্টি হয়। এ কারণে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার ট্রাকের ভাড়া ৭০ হাজার টাকায় গিয়ে ঠেকেছিলো।

অন্যদিকে যেসব দেশে আমরা পণ্য রপ্তানি করি সেসব দেশে পণ্য পাঠাতে জাহাজ পাওয়া যাচ্ছে না। এটিও বন্দরে জট সৃষ্টি হওয়ার অন্যতম কারণ।’    

এদিকে শ্রম আইন অনুসারে কারখানা বন্ধ থাকলে শ্রমিকদের মূল বেতনের অর্ধেক হলেও দিতে হবে। তবে নির্দিষ্ট সময়ে পুরো বেতন না দিলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন শ্রমিক নেতারা। সবমিলিয়ে পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে সব পক্ষ থেকেই।

আর তাই কঠোর লকডাউনেও সরকারকে পুনরায় কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি নিয়ে গতকাল মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সাথে আলোচনায় বসেন ব্যবসায়ী নেতারা। তারা দ্রুত শ্রমিকদের টিকার আওতায় আনার অনুরোধও জানান।

বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি এবং এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর নেতৃত্বে আলোচনায় অংশ নেন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং ডিসিসিআইসহ বিভিন্ন সংগঠেনর নেতারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী নেতা জানান, সরকারের পক্ষ থেকে কারখানা খুলে দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখা গেছে। কারণ, এটি না হলে দেশের অর্থনীতিতেও মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এর সঙ্গে জীবন-জীবিকা দুটোই জড়িত বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে অনেক কারখানার মালিক কাজ ছাড়া বেতন না দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন নিজ নিজ সংগঠনকে। কোনো কোনো উদ্যোক্তা এরই মধ্যে নোটিশ দিয়ে জানিয়েছেন, ঈদুল আজহার ছুটি মাত্র সাত দিনের, অর্থাৎ গত ২৬ জুলাই পর্যন্ত হিসাব করা হবে। আর এর মধ্যে সরকার কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত না নিলে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলমান লকডাউনের অবশিষ্ট দিনগুলো সাধারণ ছুটি হিসেবে গণ্য করা হবে।

অন্যদিকে ৫ আগস্টের পর সরকার কারখানা সচল করার সিদ্ধান্ত নিলে, শ্রমিকদের মাসের প্রথম সাত কার্যদিবসের বেতন আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে চলে আসবে। যদিও সংগঠনগুলোর পক্ষ জানানো  হয়েছে, তারা আইন মেনেই বেতন-ভাতা পরিশোধ করবেন।

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান জানান, ১ আগস্ট থেকে কারখানা খুলে দেওয়া না হলে অনেক কারখানা নিয়মিত মজুরি ও ছুটির ব্যাপারে শ্রম আইনের আশ্রয় নিতে পারে। আর ১ আগস্ট থেকে কারখানা খোলার অনুমতি দিলে অতিরিক্ত ছুটি হিসাবে জুলাইয়ের শেষ চার-পাঁচ দিন বিবেচনা করার জন্য নিজ সদস্যদের অনুরোধ করা হবে বলে জানান তিনি।

তবে বিজিএমইএ এমন সিদ্ধান্ত নিলে আন্দোলনের মাধ্যমে তা রুখে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।

আওয়াজ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরচালক নাজমা আক্তারের মতে, গত বছরের ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল শ্রমিকরাই। তাই এবার লকডাউনের দোহাই দিয়ে কারখানা মালিকেরা যাতে সেই সুযোগ গ্রহণ না করেন সেজন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Haque Milk Chocolate Digestive Biscuit
Dutch Bangla Bank Agent Banking
Wordbridge School