abc constructions

সিনেমা-নায়িকা, ছিঃ নে মা!


নিয়ন মতিয়ুল আগস্ট ৫, ২০২১, ০১:৫১ পিএম
সিনেমা-নায়িকা, ছিঃ নে মা!

ঢাকা : আমার এক সম্পাদক বলতেন, হলিউড, বলিডড কিংবা ঢালিউডের চোখধাঁধানো সুন্দরীদের ঘোরলাগা রূপ চোখে নিয়ে প্রতিদিন বাসায় ফিরে ‘মুখস্থবউ’ কি আর ভালো লাগে? বউয়ের মধ্যেই খুঁজতে হয় ফ্যান্টাসি। একান্ত মুহূর্তগুলোতেও ভর করে ক্যাটরিনা, দীপিকারা।

মূলত সিনেমা হচ্ছে স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। ‘গণস্বপ্নের’ বাণিজ্যিক উৎপাদন আর হোলসেলের ওপরই টিকে থাকে সিনেমাশিল্প। ভালো ‘স্বপ্নপণ্য’ উৎপাদন করাই নির্মাতাদের বড় চ্যালেঞ্জ। অভিনয়শিল্পীরা সেই স্বপ্নপণ্যের প্রমোশনের কাজ করেন মাত্র। সিনেমা দেখার পুরো সময় জুড়ে পুরুষ দর্শকরা নায়িকাকে নিয়ে, আর নারীরা নায়ককে নিয়ে ফ্যান্টাসির রাজ্যে ডুবে থাকেন।

মোটাদাগে সিনেমা হলগুলোতে আগে তিন ধরনের স্বপ্নক্রেতার জন্য তিন রকমের ব্যবস্থা থাকতো। নিম্নবিত্তদের থার্ডক্লাস, মধ্যবিত্তদের ফার্স্টক্লাস আর উচ্চবিত্তদের ‘সোফা’। আমার এক বন্ধু বলতো, সিনেমার কোনো রোমান্টিক সিনে তিনশ্রেণির প্রতিক্রিয়া দুইভাবে হয়। থার্ডক্লাসওয়ালারা শিষ দেয়, আর সোফাওয়ালারা পাশের সঙ্গীকে স্পর্শ করে। এই দুই প্রতিক্রিয়ার অনুভূতিই সমান। তবে ফার্স্টক্লাসওয়ালারা দৃশ্যমান প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে বরং পর্দার নায়ক-নায়িকাদের নিয়ে স্বপ্নের রাজ্যে হারিয়ে যায়, বিভোর হয়। মূলত, এই মধ্যবিত্তরাই সিনেমার মূল ক্রেতা। তারাই মুনাফা দিয়ে সিনেমাশিল্প বাঁচিয়ে রাখেন।

সিনেমার নায়িকা হিসেবে নিম্নবিত্তদের পছন্দ স্থুলদেহীদের। স্থুলদেহ মানে পর্যাপ্ত খাবারের সুযোগ। যে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতদরিদ্র, নিম্নবিত্তরা। বাস্তবে কেউ যা না পায়, কল্পনাতে তা পাওয়ার চেষ্টা করে। এ তত্ত্বের ভিত্তিতে গেল কয়েক দশকে ঢালিউডে স্থুলদেহীদের জয়জয়কারের মধ্য দিয়ে সিনেমার প্রধান ক্রেতা হয়ে উঠেছে নিম্নবিত্ত তথা বস্তিবাসী, কুলি, দিনমজুর, রিকশাওয়ালারা।

আর পর্দা থেকে নামিয়ে কাঙ্ক্ষিত স্লিম নায়িকাদের বেডরুমে নিয়ে গেছেন উচ্চবিত্তরা। অন্যদিকে, সিনেমার ক্রেতা হিসেবে বিদায় নেয়া মধ্যবিত্তদের জন্য নির্মাতারা সরকারি অর্থে বানিয়ে যাচ্ছেন আর্টফিল্ম। যদিও মধ্যবিত্তদের বড় একটা অংশ এখন উচ্চবিত্তের কাতারে ছুটছেন। যারা নায়িকাদের পর্দায় নয়, বাস্তবেই পেতে চান। (ত্রিমুখী এই টানাপোড়েনেই ঢালিউডের দড়ি ছিঁড়েছে?)

সিনেমার চোখ ধাঁধানো নায়িকাদের ছুঁতে না পারার কষ্ট অনেক। এই কষ্টের নাম অবদমনও। বিশ্বব্যাপী বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের পর্নইন্ডাস্ট্রি এই অবদমনকে ভার্চুয়ালি প্রশমিত করলেও ফ্যান্টাসিতে ডুবতে নারাজ উচ্চবিত্ত বা প্রভাবশালীরা। জীবন্ত ফুলের ঘ্রাণ তাদের চা-ই চাই। সেজন্য থাকে সব কৌশল, আয়োজন।

তবে স্বপ্নের সাম্যবাদের এই পৃথিবীতে যারা জীবন্ত ফুল ছুঁয়ে দেখতে ব্যর্থ হন, তারাই কলঙ্কিত করেন ফুলকে, তার ঘ্রাণকে। ফুলকে তারা পায়ে পিষে ফেলার আদেশও জারি করেন। এটা অপ্রাপ্তির অবদমন থেকে উঠে আসা এক ধরনের হিপোক্রেসি বা চূড়ান্ত বিচারে জঘন্য বিকৃতিও। যাতে আক্রান্ত হন সমাজের বিবেকবানরাও! কেননা, জগতের মনীষী, পুরোহিত থেকে শুরু করে পিঁপড়া পর্যন্ত সবাই যৌনকাতর!

লেখক : সাংবাদিক

 

Haque Milk Chocolate Digestive Biscuit
Dutch Bangla Bank Agent Banking

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School