abc constructions

সুঁই-সুতোয় স্বপ্ন গাঁথেন ইলোরা


নিউজ ডেস্ক সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২১, ০২:১৫ পিএম
সুঁই-সুতোয় স্বপ্ন গাঁথেন ইলোরা

ঢাকা : নড়াইলের মেয়ে ইলোরা পারভীন। কাজ করেন সূচিশিল্প নিয়ে। যে কোনো সুঁই সুতার জাদুকরী বুননে যার হাতে জীবন্ত হয়ে উঠে, সেই প্রখ্যাত সূচিশিল্পী ইলোরা পারভীন। ইলোরা নিপুণ হাতে সুঁই-সুতো দিয়ে গেঁথেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের দৃষ্টিনন্দন ছবি। সুঁই-সুতোয় আলপনা তুলে কারুকাজখচিত বঙ্গবন্ধুর পরিবারের এ ছবি সবার নজর কেড়েছে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের ছবি ব্যতিক্রমী নকশায় খচিত করতে পেরে ইলোরা গর্বিত। সুঁই-সুতোয় আলপনা এঁকে নতুন বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে বুনেছেন তিনি। তার আলপনায় সত্যিকার অর্থে জীবন্ত মানুষের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। স্বামী, সংসার ও মেয়েসহ পরিবারের সব কাজ সামলে সুঁই-সুতোয় আলপনা আঁকা চিত্রশিল্পী হিসেবে নিজেকে নতুনভাবে পরিচিত করেছেন ইলোরা পারভীন ।

ইলোরার বাবার বাড়ি নড়াইল পৌর এলাকার মাছিমদিয়া গ্রামে। এ গ্রামেই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের জন্ম। সুলতানের বাড়ির পাশেই ইলোরার জন্মভিটা। ইলোরার বাবা মরহুম হাবিবুর রহমান বরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের বাল্যবন্ধু ছিলেন। ইলোরার পরিবারের সদস্যরা জানান, শৈশব থেকে ছবি আঁকার শখ ইলোরার। এ কারণে তিনি মাঝে-মধ্যে এসএম সুলতানের বাড়িতে গিয়ে উঁকি দিতেন। গভীর দৃষ্টিতে দেখতেন সুলতানের অংকন কৌশল। ছবি আঁকার প্রতি আগ্রহ থাকায় শিশুপ্রেমী সুলতানও ভালোবাসতেন ইলোরাকে। উৎসাহ দিতেন ইলোরাকে। এ আগ্রহ থেকেই তিনি বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের ছবি আকার স্বপ্ন দেখেন। অবশেষে সে আশা বাস্তবে রূপ দিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিলেন।

ইলোরা জানান, ১৯৯৮ সালে ইডেন মহিলা কলেজের দর্শন বিভাগ থেকে মাস্টার্স পাসের পর জন্মভূমি নড়াইলের মাছিমদিয়ায় আসেন তিনি। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর এসএম সুলতান মারা যাওয়ার পর সুলতানের শিষ্য দুলালের কাছে চিত্রকর্মের কাজ শেখা শুরু করেন তিনি। সুঁই-সুতোয় ছবি আঁকা কঠিন। বারবার অনুশীলনে এটা সম্ভব বলে ইলোরাকে জানালেন দুলাল।

চিত্রাংকনে দুলাল ইলোরাকে ব্যাপক উৎসাহ দিতেন। বছর দুয়েক আগে দুলালের মত্যুতে ইলোরা ভীষণ কষ্ট পান। দুইজন চিত্রগুরুর (এসএম সুলতান ও সুলতানের শিষ্য দুলাল) মৃত্যুর শোক কেটে উঠে নতুন উদ্দীপনা নিয়ে চিত্রকর্মের কাজ শুরু করেন ইলোরা। একটি বইয়ের কভার পেজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দেখে সেলাইয়ের মাধ্যমেই ইলোরা এ পথে হাঁটতে শুরু করেন ১৯৯৮ সালে। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মোট ৩৫টি শিল্পকর্ম শেষ করতে সক্ষম হন তিনি। প্রতিটি চিত্রকর্ম শেষ করার তারিখ সুই-সুতো দিয়ে লেখা হয়েছে। তার চিত্রশিল্পে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবার। এ ধরনের চিত্রকর্মের সংখ্যা ১৭টি।

এসবের মধ্যে দাঁড়ানো অবস্থায় বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি রয়েছে। একক বঙ্গবন্ধুর ৭টি ছবি। আছে বঙ্গবন্ধুর বাবা, মা ও শেখ রাসেলের ছবি। শেখ হাসিনা ও জয়ের হাস্যোজ্জ্বল মুখ ও সুলতানা কামালের ছবি। এককভাবে আছে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসার ছবি, একক শেখ হাসিনার ছবি। শেখ হাসিনার পাঁচ ভাই-বোনের যৌথ ছবি। এসবের একটি ইলোলার বড় ভাই স্থানীয় চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা হাসানুজ্জামানের অফিসে ফ্রেমে বাঁধাই করা এবং অবশিষ্ট ছবিগুলো নিজ বাসার ফ্রেমে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

ইলোরা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে আমার হাতেখড়ি। একটি ছবি শেষ করার পর ভাবি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আর আঁকবো না। কিন্তু আবার চলে যাই বঙ্গবন্ধুর অন্য ভঙ্গির ছবিতে। বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে চিত্রকর্মটি ফ্রেমসহ দৈর্ঘ্য ৩০ ইঞ্চি আর প্রস্থ ২১ ইঞ্চি। বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও শেখ হাসিনার পাঁচ ভাই-বোনের ছবির আকৃতির দৈর্ঘ্য ৩০ ইঞ্চি আর প্রস্থ ২১ ইঞ্চি অথবা এর চেয়ে সামান্য কম বেশি। বাংলা একাডেমি মুজিববর্ষ উপলক্ষে একটি বই বের করবে। বইটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক মলয় বালার তত্ত্বাবধানে বের হচ্ছে। যারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কাজ করছেন সেরকম ১০০ জন শিল্পীকে নিয়ে এ বই। তাদের মধ্যে আমিও একজন।’

এছাড়া একটি করে ভাষা আন্দোলন, রায়ের বাজারের বধ্যভূমি, জাতীয় সম্পদ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, এসএম সুলতান, নববধূ, পাখি, নিজের মা নূরজাহান, ভাই আলহাজ মো. ওয়াহিদুজ্জামানসহ নিজের ছবি এঁকেছেন ইলোরা।

৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩ ফুট প্রস্থের ভাষা আন্দোলনের ছবিটি আঁকতে সময় লেগেছে ২ বছর। ৪২/২০ ইঞ্চি আকৃতির বধ্যভূমির ছবি আঁকতে সময় লেগেছে চার মাস। পত্রিকায় ছাপা দেখে শেখ হাসিনার পাঁচ ভাই-বোনের ছবি আঁকতে সময় লেগেছে চার মাস। ইলোরা বলেন, সময় বেশি লাগে গলা, হাত, পরনের কাপড়ের ভাঁজ তুলতে। কোনো কোনো ছবির চোখ আঁকতেই ১৫-২০ দিন সময় লেগে যায়। সামান্য এদিক-ওদিক হলেই পুরো কাজ শেষ। ইলোরা সাত ভাই-বোনের মধ্যে পঞ্চম। ১৯৯৯ সালে তিনি মো. ফয়জুল্যাহ বিশ্বাসের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার জীবনে পা দেন। তার দুই মেয়ে হুমাইয়রা ফয়েজ ও নাফিসা ফয়েজ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Haque Milk Chocolate Digestive Biscuit
Dutch Bangla Bank Agent Banking
Wordbridge School