abc constructions
কনস্টেবল বন্ধুকে নিয়ে এসপি’র আবেগঘন স্ট্যাটাস

পদবীর প্রটোকল আটকাতে পারেনি কনস্টেবল-এসপির বন্ধুত্ব


নিউজ ডেস্ক সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১, ১২:১৬ পিএম
পদবীর প্রটোকল আটকাতে পারেনি কনস্টেবল-এসপির বন্ধুত্ব

এসএসপি রেজাউল মাসুদ ও কনস্টেবল আবু বকর সিদ্দিক

ঢাকা : পুলিশ প্রশাসনের পদবীর প্রটোকল আটকাতে পারেনি কনস্টেবল আর এক পুলিশ সুপারের (এসপি) বন্ধুত্বকে। ঘটনাটি সত্যিকারের বন্ধু্ত্বের উদাহরণ হয়ে থাকবে। সামাজিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। 

‘বন্ধু’ এমন একটা শব্দ, যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেক আবেগ, ভালোবাসা, আস্থা আর ভরসা। আসলে বন্ধু নামক সম্পর্ককে কোনও সংজ্ঞায়ই সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব নয়, বন্ধু বন্ধুই। বন্ধু তো সেই, যার সাথে আপনার ভেতরকার চাপানো শেষ কথাটুকুও শেয়ার করা যায়। যার সাথে আপনার আত্মার সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও অনুভূতিটা যেন আত্মারই। বন্ধু মানে অন্ধকার পথে হঠাৎ আলোর ঝলকানি, বন্ধু মানে একটাই প্রতিজ্ঞা পাশেই আছি। সাধারণত আমরা সবাইকে বন্ধু বলে থাকি, কিন্তু সবাই প্রকৃত বন্ধু নয়। প্রকৃত বন্ধু সে, যে বিপদে-আপদে সবসময় পাশে থাকে।

বন্ধু শব্দটি ছোট হলেও এর গভীরতা অনেক। এর ব্যাপ্তি সীমাহীন। বন্ধুত্ব ব্যাপারটি সব সম্পর্কের ক্ষেত্রেই প্রয়োজন। বন্ধুত্ব সম্পর্ককে সহজ করে। বলে-কয়ে বন্ধুত্ব হয় না। মনের সঙ্গে মনের মিল হলেই শুধু সত্যিকারের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। যেখানে অহঙ্কার ও হিংসার কোনও স্থান নেই। বন্ধু বা বন্ধুত্ব এমন একটা বিষয়, যা অনেক ক্ষেত্রে জীবনের চেয়েও দামি হয়ে দাঁড়ায়। পৃথিবীতে এমন বহু নজির আছে। তবে, মনে রাখতে হবে সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরিচর্যার কোনও বিকল্প নেই। অবহেলা যেকোনো সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট।

আমাদের সমাজে সচরাচর দেখা যায়- ক্যারিয়ারের দিক থেকে, কিংবা অর্থবিত্তের দিক থেকে বন্ধুদের কেউ উপরে উঠে গেলে তার পেছনে পড়া বন্ধুদের অবহেলা করেন, অবজ্ঞা করেন কিংবা ছোট করে দেখেন। যেখান থেকেই শুরু হয় বন্ধুত্বের দূরত্ব। এক্ষেত্রে এক ভিন্ন রকমের উদাহরণ স্থাপন করলেন সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারে কর্মরত বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) রেজাউল মাসুদ।

এই কর্মকর্তার তার স্কুল জীবনের বন্ধু কনস্টেবল আবু বকর সিদ্দিকের বিপদে কেবল আশ্বাস দিয়ে নয়, বাস্তবিকভাবেই পাশে দাঁড়িয়েছেন। যে কারণে ওই বন্ধুর পরিবারেও প্রশান্তি নেমে আসে। 

এ সংক্রান্তে সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টা ৩৩ মিনিটে নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে একটি পোস্ট দেন পুলিশ কর্মকর্তা। 

স্ট্যাটাসটি সোনালীনিউজের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

পুলিশ কর্মকর্তা রেজাউল মাসুদ লেখেন, ‘বিসিএস এর রেজাল্ট যেদিন বের হয় সেদিন কিভাবে জানি সে খবর পেয়ে যায়। ফোনের ওপ্রান্ত থেকে খুশিতে তার উল্লাস উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো। মনে হচ্ছিল যেন সেই চাকরি পেয়েছে। বলতেছিল তুমি পুলিশে এএসপি হয়েছো, একসময় এসপি হবে, ডিআইজি হবে। কি যে ভালো লাগছে আমার তোমাকে বুঝাতে পারব না, মনে হচ্ছে যেন আমিই এএসপি হয়েছি। সে বলতেছিল আমাদের এলাকায় শিক্ষক, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার, আর্মি অফিসার অনেক রয়েছে, কিন্তু বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তা একেবারেই নেই, তুমি আমাদের এই অভাবটা পূরণ করলে। কথাগুলো সে এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলল।

সিদ্দিক ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে নিউমার্কেট থানার সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। আমরা ছেলেবেলার বন্ধু, প্রাইমারি আর হাইস্কুল একইসাথে পড়েছি। সুদর্শন সুঠাম চেহারার সিদ্দিক এসএসসি পাশ করার পর পুলিশে যোগ দেয়। একজন টগবগে যুবক দ্রুত চাকরি পেয়ে এলাকায় পুলিশ সিদ্দিক হিসেবে পরিচিতি পায়। সবাই তাকে চিনে, মানুষের প্রয়োজনে সাধ্যমত কমবেশি সে পাশে দাঁড়ায়। ইন্টারমিডিয়েট এবং ঢাকা ভার্সিটি পড়াকালীন সময়েও আমার সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখে সে। পনের বছর পুলিশি চাকরি কালীন সময়ে তার সাথে অনেক দেখা হয়েছে কথা হয়েছে, তার এলাকার সমস্যায় আমাকে ইনভলভ করেছে। তার সাথে আমার সম্পর্ক সেই ছেলেবেলার মতনই। আমার বেশ কিছু বন্ধুবান্ধব যারা সাব-ইন্সপেক্টর/সার্জেন্ট থেকে ইন্সপেক্টর হয়েছে, আবার অনেক বন্ধু বিসিএসের জুনিয়র তাদের সাথে সাক্ষাৎ কিংবা কথা হলে আমি সহজ করে দিলেও তাদের ভিতর একটা অস্বস্তি ভাববাচ্য কাজ করে তারা আমায় আপনি বলবে, না স্যার বলবে না তুই বলবে দ্বিধায় থাকে!

কিন্তু কনস্টেবল বন্ধুটির মাঝে বিন্দু পরিমাণ ভাবনা আসতে দিতাম না, যাতে সে কখনোই মনে না করে তার সামনে আমি একজন বড় কর্মকর্তা, সে যেন সবসময় ধারণা রাখে আমি তার ছেলেবেলারই বন্ধু। অতি সম্প্রতি সে ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে সিলেট বিভাগে বদলীর আদেশ পান। তার পরিবার সন্তান সন্ততি নিয়ে ময়মনসিংহ বসবাস করেন। জামালপুর গ্রামের বাড়ি মা-বাবা ভাই-বোন সহ অনেকের প্রয়োজনে মুহূর্তেই পাশে দাঁড়ান। সিলেট বিভাগে বদলীর খবরে দারুণ অসহায় বোধ করে এবং ভেঙ্গে পড়ে সে। চারদিকে জোর চেষ্টা-তদবির দৌড়িয়েও বদলি বাতিলে ব্যর্থ হয় সে। তার সমস্যার কথাটা অবশেষে আমায় জানায়। 

পুলিশের জুনিয়র সদস্যদের জেলার ভিতরে বদলীর জন্য সহজে চেষ্টা করা যায় কিংবা বিভাগের মধ্যেও ডিআইজি স্যারকে বলা যায়। কিন্তু এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে বদলি আইজিপি স্যারের অফিস তথা পুলিশ সদর দপ্তর করে থাকে, সেজন্য এ কাজটা সবসময়ই কঠিন থেকে কঠিনতর হয়। নিয়তি আর ভাগ্য বলে মেনে নেয় অনেকেই। সিদ্দিক অনেক জায়গায় যোগাযোগ করেও ব্যর্থ হয়।

আমি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে যোগাযোগ করি। সাত দিনের ভিতরেই সিদ্দিকের কাজটা হয়ে যায়। আমি আগেও এরকম কাজে চেষ্টা করেছি অনেককে বদলি করিয়েছি, কিন্তু এটা এত দ্রুত সাত দিনের ভিতরে হয়ে যাওয়ায় আমি তাজ্জব বনে আশ্চর্য হই আবার লজ্জাও বোধ করি, ফোন না করে শুধুমাত্র টেক্সটে থ্যাংকস জানাই।

পুলিশ সদর দপ্তরের কনসার্নড ডেস্ক অফিসার এআইজি মাহবুব ভাই চব্বিশ বিসিএস-এ আমার ব্যাচমেট। সশরীরে তার সাথে সাক্ষাতে কৃতজ্ঞতায় বলি, ম্যাজিকের মতো কাজ টা কিভাবে এত দ্রুত করে দিলেন? মাহবুব ভাইয়ের উত্তরটা ছিল মাত্র দুলাইনের, একজন কনস্টেবলের আপনত্ব বোধে যেভাবে হাইলাইটস করে আপনি বলেছেন, সে আপনার প্রাইমারি এবং হাইস্কুলের বন্ধু, একই এলাকার আপনারা। বদলীতে তার পরিবার পরিজন নিয়ে বিপদে পড়ছে, ভাই আপনি একটু দেখবেন প্লিজ! আমার কাছে আপনার আকুতিটা এতো ভালো লাগছে যে আপনি একজন সামান্য কনস্টেবলকে সম্মান দিয়ে নিজের ভাই বন্ধু বলে সম্বোধন করলেন! অন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাদ দিয়ে তাই আপনার বন্ধুর কাজটাই আমার কাছে মহাগুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো।।

বন্ধুত্বের ভালোবাসা বেঁচে থাক আজন্ম......’

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Haque Milk Chocolate Digestive Biscuit
Dutch Bangla Bank Agent Banking
Wordbridge School