abc constructions

৭০ বছর পর মায়ের কোলে ফিরছেন আবদুল কুদ্দুস


রাজশাহী প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১, ০২:৩১ পিএম
৭০ বছর পর মায়ের কোলে ফিরছেন আবদুল কুদ্দুস

আবদুল কুদ্দুস মুন্সি (বাম থেকে দ্বিতীয়)

রাজশাহী : হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে মাসহ পরিবারের সদস্যদের খুঁজে পেতে ব্যাকুল ছিলেন আবদুল কুদ্দুস মুন্সি। মৃত্যুর আগ মূহুর্তে হলেও যেন গর্ভধারিনী মাকে একনজর দেখে পরপাড়ে পাড়ি জমাতে পারেন সৃষ্টিকর্তার কাছে এমনটাই মিনতি করছিলেন তিনি।

এখন বয়স ৮০ বছর। ৭০ বছর আগে নিজ জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে চাচার সঙ্গে রাজশাহীর বাগমারায় বেড়াতে গিয়ে হারিয়ে যান। তখন থেকেই বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের বাড়ুইপাড়া গ্রামে বসবাস শুরু করেন তিনি। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে যেন বিধাতা তার অভিপ্রায় পূর্ণ করছেন। হারিয়ে যাওয়ার ৭০ বছর পর শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাড্ডা গ্রামের নিজপাড়া মুন্সিবাড়ীতে যাচ্ছেন ১০ বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়া বৃদ্ধ আব্দুল কুদ্দুস।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে নিজের হারিয়ে যাওয়ার গল্প ফেসবুক পোস্টে লেখার মাধ্যমে মাসহ পরিবারকে খুঁজে পেয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যেই শত বছর বয়সী বৃদ্ধা মায়ের সঙ্গে আব্দুল কুদ্দুস ভিডিও কলে কথা বলেছেন। দীর্ঘ ৭০ বছর পর ভিডিও কলে মাকে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন কুদ্দুস। আর তাই সবকিছু ঠিক থাকলে জনমদুখিনী মাকে বাস্তবে এক নজর দেখতেই সপরিবারে আজ শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যাচ্ছেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর বাগমারা এলাকায় শিশু অবস্থায় হারিয়ে যান কুদ্দুস। এরপর থেকে উপজেলার বাড়ুইপাড়া গ্রামে সংসার শুরু করেন তিনি। হারিয়ে যাওয়ার পর থেকেই প্রতিনিয়ত নিজের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার নানা চেষ্টা করে যান কুদ্দুস। তবে দীর্ঘ দিন যাবৎ পরিবারের সন্ধান মেলেনি।

অবশেষে গেল এপ্রিল মাসে আইয়ূব আলী নামে পরিচিত একজনের ফেসবুক আইডিতে হারিয়ে যাওয়ার গল্প বলেন কুদ্দুস। সেখানে তিনি শুধু বাবা-মা ও নিজ গ্রাম বাড্ডার নাম বলতে পারেন। পরে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা বাড্ডা গ্রামের বাসিন্দারা সাড়া দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে কুদ্দুসকে খুঁজে পান তার পরিবারের সদস্যরা। আইয়ুব আলীর ওই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া পোস্টে নিজের শেষ ইচ্ছা হিসেবে নিজের পরিবারের সঙ্গে একবার হলেও দেখা করার কথা লেখেন। ওই ফেসবুক পোস্ট দেশের বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে ভাইরাল হয়। এক পর্যায়ের তার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক ভাতিজা সেই পোস্ট দেখে নিজের হারিয়ে যাওয়া চাচার কথা জানান পরিবারের কাছে। এরপর ফেসবুকে তাদের যোগাযোগও কথা হয়। এরপর নিজের সবকিছু খুলে বলে শেকড় খুঁজে পান তিনি।

নিজের পরিবারকে খুঁজে পাওয়ার পর কুদ্দুস বলেন, ‘আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া। দীর্ঘ দিন পর হলেও আমার ইচ্ছে পূর্ণ হয়েছে। আমার পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে। জীবনের সবচেয়ে খুশির মুহূর্ত এটি। আজ শনিবার জন্মস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশে রওয়ানা হবো। আমার মায়ের সঙ্গে দেখা হবে এটার চেয়ে ভালোলাগার কিছু হতে পারে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘হারিয়ে যাওয়ার পর জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছি। জীবনের এক পর্যায়ে বিবাহবন্ধনেও আবদ্ধ হয়েছি। স্ত্রী-সন্তান, নাতি-নাতনি নিয়ে এখানেই বসবাস করছি বটে কিন্তু প্রশান্তি পাইনি। মাকে ফিরে পেতে ৭০ বছর ধরে কাঁদছি। অবশেষে বাস্তবে মাকে দেখতে পাবো এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কিছু নেই।’  

বাড়ুইপাড়া গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের এক প্রতিবেশী গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘সেই ছোটবেলা থেকেই তিনি নিজের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার কথা সবাইকে বলতেন। কিন্তু কেউ কোনো খোঁজ দিতে পারেনি। অবশেষে ফেসবুকে লেখার পর তার পরিবারের খোঁজ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আমরা অনেক খুশি হয়েছি। দীর্ঘ দিন পর একটা মানুষ তার একান্ত আপনজনদের খোঁজ পেয়েছেন। এ ছাড়া তার জন্মস্থানের মানুষ এখন থেকে আমাদের এখানে আসবে। আবার আমরাও নতুন এক জায়গার কিছু মানুষের সঙ্গে নতুন করে আত্মীয়তার সুযোগ পাবো।’

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Haque Milk Chocolate Digestive Biscuit
Dutch Bangla Bank Agent Banking
Wordbridge School