• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পুরোনো লাইন ও অবৈধ গ্যাস সংযোগ ঝুঁকিতে রাজধানী


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ২০, ২০২০, ০৩:৩৪ পিএম
পুরোনো লাইন ও অবৈধ গ্যাস সংযোগ ঝুঁকিতে রাজধানী

ঢাকা : রাজধানীতে অর্ধশত বর্ষের জরাজীর্ণ পুরোনো লাইন আর অবৈধ সংযোগের কারণে প্রতিনিয়ত গ্যাস লাইনে লিকেজ সৃষ্টি হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। কখনো কখনো কর্তৃপক্ষ লিকেজের খবর পেয়ে মেরামত করে। তবে অধিকাংশ সময়ই এসব লিকেজের খবর পেয়েও কর্তৃপক্ষের ভূমিকা থাকে নীরব। ফলে মেলে না স্থায়ী সমাধান। এতে রাজধানীজুড়ে ক্রমেই বাড়ছে গ্যাস বিস্ফোরণের ঝুঁকি।

তবে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ বলছে, পুরোনো লাইন আর অবৈধ সংযোগের পাশাপাশি বিভিন্ন সেবা সংস্থার উন্নয়ন কাজে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির কারণেও গ্যাস লাইনে লিকেজ হচ্ছে। খবর পেলে তাৎক্ষণিক মেরামতও করা হচ্ছে।

যদিও নগরবাসী বলছে, গ্যাস লাইসে লিকেজের খবর দিলেও সঠিক সময়ে আসে না গ্যাস কর্তৃপক্ষের মেরামতকারীরা। এতে ঝুঁকি আরও বাড়ে। কখনো কখনো বিস্ফোরণও ঘটে। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনাও তার একটি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিতাসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, সমপ্রতি রাজধানী ও তার আশপাশের এলাকায় ১০ লাখ রাইজারের মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার রাইজারে লিকেজ পাওয়া গেছে। এসব লিকেজের মেরামতের কাজ চলছে। কিন্তু অবৈধ সংযোগ এবং মরচেধরা পুরোনো লাইন তো এ হিসাবের বাইরে। সেগুলোর ঝুঁকি নিরূপণ করা কঠিন। তবুও স্থানীয়দের তথ্যের ভিত্তিতে সেগুলোর অনুসন্ধানে তৎপর হয়েছে তিতাস কর্তৃপক্ষ।

তিনি বলেন, রাইজারে নানা কারণে লিকেজ হতে পারে। সেটি সহজে মেরামতও করা যায়। কিন্তু লাইন লিকেজ আর অবৈধ সংযোগগুলোর লিকেজ সম্পর্কে জানতে পারা দুষ্কর। যদিও গ্যাস লিকেজ ডিটেক্টর রয়েছে। তবুও অনেক সময় এসব ত্রুটি ধরা পরে একেবারে ব্লাস্ট হওয়ার পর।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর জুরাইনে আলম মার্কেটের সামনের সড়কের পাশে বেশ কয়েকদিন ধরে জমে থাকা পানি বুদবুদ করে উৎরাচ্ছে। এখানে চলাচলকারী লোকজন বুদবুদে গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান।

তাদের মতে, এখানে গ্যাস লাইন লিকেজ হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করলেও এখনো মেরামত সম্পন্ন হয়নি। ওই মার্কেটের একজন ব্যবসায়ী  বলেন, গত পরশু তিতাসের লোকজন এসে দেখে গেছে। তারা বলছে রাস্তা কাটতে হবে। কিন্তু এখনো সমাধান হয়নি।

একই রকম পরিস্থিতি দেখা গেছে হাজারীবাগের মিষ্টির মোড় সড়কেও। সড়কটির বিভিন্ন স্থানে গ্যাস লিকেজ রয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। দুই তিন মাস আগে এখানে রাস্তার কংক্রিট ফেটে উড়ে গেছে। পরে গ্যাসের লোকজন এসে ঠিক করে গেছে। কিন্তু বৃষ্টির পানি জমলে এখনও বুদবুদ করে ফোটে। মিষ্টির মোড়ের একটু সামনে এগুলেই ৪১/৬ নম্বর দোকানের সামনের মোড়ে রাস্তার ঠিক মাঝখানে কংক্রিট দেবে গেছে। যদিও সেখানে কোনো সুয়ারেজের মুখ নেই। সেখানে বৃষ্টির পানে জমে থাকায় ফুটন্ত জলের মত পানি ফুটতে দেখা যায়।

স্থানীয়রা জানায়, অনেকদিন ধরে এটা দেখতেছি আমরা। প্রায় ১মাস ধরে। স্থানীয় আরও কয়েকজন দোকানদার জানান, রাস্তার ওপর হওয়ায় কেউ গ্যাস কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানায়নি হয়তো। একই অবস্থা কলাবাগান এলাকার আবেদ ঢালি রোডের ঢালি বাড়ির সামনেও। সেখানেও বেশ কিছুদিন ধরে স্থানীয়রা গ্যাস লিকেজের বিষয়টি টের পেয়ে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এখনও লিকেজ মেরামতে কোনো কার্যকরী সমাধান করেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ঢালি বাড়ির পাশে একটি নির্মাণাধীন ভবন রয়েছে। ভবনের সামনেই গ্যাস লিকেজ দেখা গেছে। এতদিন কনস্ট্রাকশনের আবর্জনা থাকায় কারো চোখে পড়েনি। সেই জায়গা পরিষ্কার করার পর বুদবুদ আকারে গ্যাস বের হওয়ার ঘটনা ধরা পড়ে। লিকেজ দেখার পর স্থানীয়রা বস্তা দিয়ে ঘেরাও করে রেখেছে। আমরা গ্যাস কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু এখনও সমাধান হয়নি।

এখানে ছোট ছোট শিশুরা সারাদিন খেলাধুলা করে। লিকেজের পাশেই বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার রয়েছে। গ্যাস লিকেজের কারণে  যেকোনো সময় বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তার আগেই বিষয়টি সমাধান করা উচিত।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মো. আল মামুন  বলেন, আমরা যখনি খবর পাই কোথাও গ্যাস লিকেজ হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কর্মীরা সেখানে গিয়ে ব্যবস্থা নেয়। কলাবাগান এবং হাজারীবাগের বিষয়ে মাত্র শুনলাম। অবশ্যই সংশ্লিষ্ট জোনাল অফিসে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হবে। শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে জুরাইনের আলম মার্কেটের সামনে লিকেজের বিষয়ে খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি নিজেই সংশ্লিষ্টদেরকে পাঠিয়েছি। তারা সেটি সমাধান করেছেন। সেখানে পূর্ব জুরাইনেও একটা মসজিদের নিচ দিয়ে গ্যাসের লাইন গিয়েছে। ওই লাইনের শেষমাথা রাস্তায় পড়েছিল। কিন্তু রাস্তার প্রায় সাত আট ফুট নিচে গ্যাস লাইনটি লিকেজ পেয়েছি আমরা। প্রায় তিনদিন লেগেছে সেটির সমাধান করতে।

আল মামুন আরো বলেন, অনেকে মনে করে আমরা অবহেলা করি বা লিকেজের খবর পাওয়ার পরও ব্যবস্থা নিচ্ছি না। আসলে এটি ভুল ধারণা বরং আমরা লিকেজ অনুসন্ধানে অফিসিয়ালি লিকেজ ডিটেক্টরের মাধ্যমে যেমন খবর রাখি তেমনি এক ধরনের গন্ধযুক্ত পাইপ স্থাপনের মাধ্যমেও স্থানীয়দের মাধ্যমে সবসময় খোঁজখবর রাখার চেষ্টা করি কোথাও লিকেজ রয়েছে কিনা। কিন্তু সমস্যা হলো অবৈধ সংযোগ।

এসব সংযোগ তারা বিশেষ করে আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের বেলা নিতে গিয়ে লাইনে নিরাপত্তাজনিত কোনো নিশ্চয়তা নিশ্চিত করে না। আমরা সংযোগ দেওয়ার সময় প্রতিটি ধাপে নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে কিনা সেটি পরীক্ষা করেই সংযোগ স্থাপন করি। কিন্তু অবৈধ সংযোগ স্থাপনকারীরা নিরাপত্তা তো দূরের কথা গন্ধযুক্ত পাইপও বসায় না।

তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, নেদারল্যান্ড সরকারের যৌথ উদ্যোগে গত দু বছর ধরে লিকেজ ও গ্যাস লাইনের ত্রুটি খুঁজে বের করতে কাজ করা হয়েছে। এতে রাজধানীতে প্রায় ৩৬ হাজার লিকেজ পাওয়া গেছে রাইজারে। এসব লিকেজ মূলত নানা কারণে হয়। বিশেষ করে মরিচাপড়া এবং দীর্ঘদিন ধরে গ্যাসের চাপে ক্ষয় হওয়াসহ নানা কারণ রয়েছে। কিন্তু এগুলো তাৎক্ষণিক মেরামত করা যায়।

তবে বর্তমানে গত কয়েক বছর ধরে পাইপ লাইনে লিকেজ হওয়ার পেছনে অন্যতম একটি কারণ হলো অন্যান্য সংস্থাগুলো রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির সময় আমাদেরকে না জানিয়ে কাজ করে। ফলে লিকেজ হলেও আমরা জানতে পারি না। তারা কাজ করে চলে যাওয়ার কয়েক মাস পরে দেখা যায় সেখানে লিকেজ ধরা পড়েছে।

তিনি বলেন, ঢাকায় তিতাসের আওতাধীন ৪০-৫০ বছরের পুরোনো যেসব গ্যাস লাইন রয়েছে সেগুলো অপসারণ করে নতুন স্থাপনের জন্য ১২শ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন হয়েছে। প্রকল্পটি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথমে পুরান ঢাকার পাইন লাইনগুলো অপসারণ করা হবে। এতে করে লিকেজের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করছি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!