• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
সংসদ ভবন এলাকা

ঝুঁকিপূর্ণ সেই পেট্রোল পাম্প আবারো চালু


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২০, ০৫:৫০ পিএম
ঝুঁকিপূর্ণ সেই পেট্রোল পাম্প আবারো চালু

ঢাকা : জাতীয় সংসদ ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবন সংশ্লিষ্ট আসাদগেট এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ তালুকদার পেট্রোল পাম্প আবারো চালু হয়েছে। নিরাপত্তার হুমকি এ পাম্পটি চালু রাখার জন্য পাম্প মালিকরা হাইকোর্ট পর্যন্ত গেলেও ২০১০ সালের ২২ জুলাই আদালত বন্ধ রাখার পক্ষেই রায় দেয়। এরপর ওই বছরের ২৪ জুলাই পাম্পটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

দীর্ঘ ১০ বছর পর যখন নিরাপত্তার হুমকি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে ঠিক এমন মুহূর্তে আবারো চালু করা হয়েছে পাম্পটি। তবে কেমন করে, কার আদেশে পাম্পটি চালু করা হলো সেই বিষয়ে কোনো স্পষ্ট জবাব দিতে পারেনি পাম্প পরিচালনা কর্তৃপক্ষ।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু এটি কেপিআই এলাকা সেহেতু এখানে কোনো ধরনের পাম্প না থাকাই ভালো। দুর্ঘটনা এড়াতে সতর্ক থাকাটাই সবচেয়ে ভালোপন্থা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নবম জাতীয় সংসদের সংসদ কমিটির সুপারিশে রাজধানীর আসাদগেইট সংলগ্ন তালকুদার ফিলিং স্টেশন বন্ধ করা হয়। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার (কেপিআইভুক্ত) নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে নবম জাতীয় সংসদের তৎকালীন ‘সংসদ কমিটি’ তালুকদার ফিলিং স্টেশন বন্ধ করে দেওয়ার সুপারিশ করেছিল। তখন ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন তৎকালীন চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ এলাকার ‘নিরাপত্তার হুমকিস্বরূপ’ এ স্টেশনকে বন্ধ করার ব্যবস্থা নিতে সংসদ সচিবালয় থেকে গণপূর্ত অধিদপ্তরকে চিঠি দেওয়া হয়। ২০০৯ সালের ৪ অগাস্ট তালুকদার ফিলিং স্টেশন এক মাসের মধ্যে সরিয়ে নিতে নোটিশ দেয় গণপূর্ত অধিদপ্তর। ওই বছরের ১৭ আগস্ট ফিলিং স্টেশনের মালিক আমেনা বেগম ওই নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট করেন।

সূত্র জানায়, পরে ২০১০ সালের ২২ জুলাই হাই কোর্ট ডিভিশনের একটি দ্বৈতবেঞ্চ ফিলিং স্টেশন বন্ধে সরকারের নোটিশ বৈধ বলে রায় দেয়। একইসঙ্গে আদালত আমেনা বেগমের রিট খারিজ করে দেয়। এর দুদিন পর ২৪ জুলাই ফিলিং স্টেশনটি বন্ধ করে দেয় গণপূর্ত অধিদপ্তর। তখন থেকে এটি বন্ধ অবস্থায় ছিল।

অন্যদিকে, গত ৬ সেপ্টেম্বর সংসদ কমিটির সভায় বন্ধ থাকা পেট্রোল পাম্পটি চালুর করার ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। কমিটির বৈঠকে এই সুপারিশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ৬ সেপ্টেম্বরের পর গত ১৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় সংসদ ভবনে পার্লামেন্ট মেম্বার্স ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির দ্বিতীয় সভা। কমিটির সভাপতি ও জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন।

পার্লামেন্ট মেম্বার্স ক্লাবের সার্বিক উন্নয়নের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিশেষ করে দীর্ঘদিন যাবত আসাদগেইটস্থ বন্ধ পেট্রোল পাম্প চালু করার উদ্যোগের সিদ্ধান্তে সব সদস্য একমত পোষণ করেন। পেট্রোল পাম্পটি মেম্বার্স ক্লাবের সাথে সমন্বয় করে পরিচালিত হবে বলে সভায় উল্লেখ করা হয়। এতে পার্শ্ববর্তী এলাকাসহ সবাই উপকৃত হবে বলে সভায় মতামত ব্যক্ত করা হয়।

সূত্র জানায়, সমপ্রতি পিডব্লিউডি, জাতীয় সংসদ ও মালিকপক্ষের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ৫ বছরের জন্য এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরপরই পাম্পটি চালু করা হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পেট্রোল পাম্প খোলা। শুধু অকটেন আর ডিজেল বিক্রি হচ্ছে।। আগামী ১০/১৫ দিনের মধ্যে চালু হবে গ্যাস বিক্রিও।  পাম্পটি চালুর বিষয়ে স্পিকারের দপ্তর এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় কেউ নাম পরিচয় প্রকাশ করে কথা বলতে চাননি।

তবে স্পিকারের দপ্তর থেকে বলা হয়, এ ধরনের উদ্যোগ কোনো শুভ উদ্যোগ নয়। যেখানে উচ্চ আদালতের নির্দেশ রয়েছে সেখানে পাম্পটি আবারো কীভাবে চালু হলো সেটিই প্রশ্নের বিষয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের কেপিআই স্থাপনার পাশে পেট্রোল পাম্প বা সিএনজি পাম্প কোনোটাই থাকা উচিত নয়।

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন হুমকির কথা উল্লেখ করে কর্মকর্তারা বলেন, যারা জঙ্গি বা সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর জন্য চেষ্টা করে থাকে তারা বিশেষ করে এ ধরনের স্থাপনাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে।

তারা বলছেন, এই এলাকাজুড়ে আমাদের বাড়তি নজরদারি এমনিতেই থাকে। অনেক সময় ভিআইপি আগমনের সময় যান চলাচল সীমিত করে দেওয়া হয়। আবার সংসদ চলার সময় বিভিন্ন ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। সেই স্থানে এ ধরনের পাম্প থাকলে এই বিধি-নিষেধ কোনো কাজে দেবে না বলে তারা মতামত ব্যক্ত করেন।

কোনো ব্যক্তি বা সংঘবদ্ধ চক্র পাম্পকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে কোনো ধরনের নাশকতা চালানোর চেষ্টা করলে সেটি কতটুকু প্রতিহত করা যাবে সেটাই এখন প্রশ্নের বিষয়।

এদিকে পাম্পটি চালু হওয়ায় সাধারণ লোকজনের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই বলছেন নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত সেহেতু পাম্পটি বন্ধ থাকাটাই উচিত ছিল। এছাড়াও পাম্পের মালিকরা চালু অব্যাহত রাখার জন্য পূর্বে উচ্চ আদালতে গিয়েছিলেন, আদালত তাদের আবেদন নাকচ করেছিল। এখন এটা কীভাবে চালু হলো সেটিই প্রশ্নের বিষয়।

পাম্প দেখাশুনার দায়িত্বে থাকা এজাজ আহমেদ খান বলেন, এ বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারবো না। পাম্প চালুর বিষয়টি সংসদীয় কমিটিই ভালো বলতে পারবেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!