• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এডিস নির্মূলে বাধা শুল্ক


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ৩০, ২০২০, ১১:১৮ এএম
এডিস নির্মূলে বাধা শুল্ক

ঢাকা : এডিস মশা নির্মূলে নানা উদ্যোগের ফলে সারা দেশে এবার ডেঙ্গু আক্রান্তের হার কমে গেছে অনেকটাই। তবে ডেঙ্গু পুরোপুরি নির্মূলে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মশক নিধনের কাজে ব্যবহূত কীটনাশকের আমদানি শুল্ক।

কৃষিতে ব্যবহূত কীটনাশকে যেখানে ৬-৭ শতাংশ শুল্ক দিতে হয় সেখানে মশক নিধনের জন্য লাগে ৬০-৭০ শতাংশ।

সম্প্রতি সরকারের শীর্ষ মহলের এক বৈঠকে আমদানি শুল্ক কমানোর সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি বছরব্যাপী মশক নিধনের ওপর জোর দেওয়া হয়।

সম্প্রতি অনলাইনে সপ্তম আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সারা দেশে ডেঙ্গুরোগ প্রতিরোধ কার্যক্রম নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় দেশের সিটি করপোরেশনগুলোর মেয়র, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের কর্মকর্তারা অংশ নেন।

সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, সিটি করপোরেশনসমূহ মশক নিধনে ব্যবহূত কীটনাশক আমদানি শুল্ক কমানের জন্য এ সম্পর্কিত পূর্ণাঙ্গ তথ্যসহ প্রস্তাব পাঠানো হবে। প্রস্তাব প্রাপ্তির পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) এ বিষয়ে অনুরোধ জানানো হবে।

মশকের বংশ বিস্তাররোধে সরকারের সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, সংস্থা ও সিটি করপোরেশন, পৌরসভায় বছরব্যাপী পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়। সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে সৃষ্ট চিকিৎসা বর্জ্যের নিরাপদ ব্যবস্থাপনার জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

এছাড়া ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় এ বছরের অভিজ্ঞতা ও সাফল্য চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য একটি লিখিত গাইডলাইন প্রণয়ন করার সিদ্ধান্ত হয়।  

স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, প্রতিবছর নভেম্বর মাসে স্বাভাবিকভাবে মশার উপদ্রব কিছুটা বাড়ে। এখন করোনা মহামারীতে যাতে কোনো ক্রমেই মশার উপদ্রব না বাড়ে এবং ডেঙ্গুর প্রকোপ আরো কমিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে গৃহীত কার্যক্রম পর্যালোচনা করা হয়। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অনুযায়ী সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, সংস্থা ও সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।

সভার সভাপতি ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, কোভিড মহামারী পরিস্থিতির মধ্যেও আমাদের সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে এবছর অভাবনীয় সফলতা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। গতবছর ডেঙ্গু নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক ছিল। তবে সবার কর্মতৎপরতার ফলে এ বছর প্রাদুর্ভাব খুবই নগণ্য।

ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, মশার লার্ভা নিধনে কীটনাশক আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ। অপরদিকে কৃষি কাজে ব্যবহূত কীটনাশকের আমদানি শুল্ক ৬-৭ শতাংশ। উচ্চ শুল্কহারের জন্য বেসরকারি পর্যায়ে আমদানিকারক কোনো কীটনাশক আমদানিতে উৎসাহিত হচ্ছেন না। এজন্য তিনি শুল্ক কমানোর আহ্বান জানান।

বলেন, এবছর উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ডেঙ্গুরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা খুবই নগণ্য। ৪৪টি কেন্দ্রে বিনামূল্যে ডেঙ্গু শনাক্ত করা হচ্ছে এবং কোথাও কোনো ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হলে র্যাপিড অ্যাকশন টিম দ্রুততম সময়ে রোগীর বাসস্থান ও চারপাশে লার্ভিসাইড প্রয়োগ করে।

মে থেকে প্রতি মাসে অন্তত ১০ দিন চিরুনি অভিযান পরিচালনা, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হচ্ছে। চিরুনি অভিযান পরিচালনার জন্য তিনি ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়ার অনুরোধ করেন।

খুলনা সিটির মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, গত বছরের বরাদ্দ থেকে প্রয়োজনীয় লার্ভিসাইড, এডালডিসাইড, ফগার মেশিন, হ্যান্ড-স্প্রে মেশিন ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি কেনা হয়েছে। এ বছর বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযান পরিচালনা করা হয়। ফলে এখন পর্যন্ত নগরীতে কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। তিনিও কীটনাশক আমদানি শুল্ক কমানোর ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের তথ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ বলেন, গত বছরের তুলনায় এবছর ডেঙঙ্গুরোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশা পূরণে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

তিনি সিটি করপোরেশনের মেয়রদের প্রস্তাব অনুযায়ী মশকের কীটনাশক আমদানি শুল্ক কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। তিনি ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় এবছরের সফলতা অভিজ্ঞতার আলোকে একটি লিখিত গাইডলাইন তৈরির প্রস্তাব করেন, যা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।

গতবছর মশা নিয়ন্ত্রণে কীটনাশক আমদানি লাইসেন্স দেওয়া কার্যক্রম আরো সহজীকরণের জন্য বিভিন্ন সিটি করপোরেশন হতে অনুরোধ করা হয়েছিল। সে পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনাক্রমে মশক নিধনে ব্যবহূত কীটনাশক আমদানির জন্য একাধিক প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া সিটি করপোরেশনসমূহের মশক নিধন কাজে ব্যয় নির্বাহের জন্য গত অর্থবছর এবং বর্তমান অর্থবছরে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা ও মশক নিধনে বর্তমান সাফল্য ভবিষ্যতে যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিনি সবাইকে উৎসাহ দেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা: শাহনিলা ফেরদৌসী বলেন, এবছরের শুরু থেকেই সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালসমূহ ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত এবং যথাযথ চিকিৎসার জন্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নেওয়া হয়। ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত ৬২৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ৩-৪ জন মারা গেছেন। ডেঙ্গুরোগের বিস্তার অত্যন্ত স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য) মোঃ মোস্তফা কামাল বলেন, এ বছর শুরু থেকেই সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা অনেক কম। করোনা মহামারীর মধ্যেও যাতে ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত করা ও যথাযথ চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি না থাকে সেজন্য তার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটির প্রশাসক মোঃ খোরশেদ আলম সুজন মশক নিধনে দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম চলমান রয়েছে জানিয়ে বলেন, নগরীতে এখন ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা খুবই নগণ্য।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, মশার প্রজননস্থল চিহ্নিত করে অভিযান চলছে এবং একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।

কুমিল্লা সিটির মেয়র মোঃ মনিরুল হক বলেন, ওয়ার্ডভিত্তিক মনিটরিং করা হচ্ছে। এর ফলে অত্যন্ত ভালো সুফল পাওয়া যাচ্ছে কুমিল্লা শহরে উল্লেখযোগ্য কোনো ডেঙ্গুরোগী নেই।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক বলেন, আবাসিক এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে মনিটরিং টিম কাজ করছে। কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী সব ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ সহিদ উল্লাহ খন্দকার বলেন, সরকারি অফিস, আবাসিক ভবনসমূহে মনিটরিং করার জন্য মনিটরিং টিম কাজ করছে।

ঢাকার সব খালেক নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে এবং তিনি নিজে এসব কার্যক্রম তদারকি করছেন।

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসকিন এ খান বলেন, ওয়াসার নিয়ন্ত্রণাধীন খালসমূহ যাতে কচুরিপানা ও বর্জ্যমুক্ত থাকে জন্য নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!