• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকায় মশা বেড়েছে কয়েকগুণ


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২১, ১১:০৯ এএম
ঢাকায় মশা বেড়েছে কয়েকগুণ

ঢাকা : শীত বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীতে বাড়ছে মশার ঘনত্ব। যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ডেঙ্গু চিকনগুনিয়ার প্রকোপ বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বছরের অন্য যে-কোনো সময়ের চেয়ে রাজধানীতে মশা বেড়েছে কয়েকগুন। এডিস মশার উপদ্রব না থাকলেও কয়েক মাস ধরে রাজধানীতে মারাত্মক হারে বেড়েছে কিউল্যাক্স মশা। চিকুনগুনিয়া ও ম্যালেরিয়াসহ মশাবাহিত নানা রোগ ছড়াতে এরা বেশ ভালো ভূমিকা রাখে।

আগে যেখানে প্রতি ডিপে (মশার ঘনত্ব বের করার পরিমাপক) মশার ঘনত্ব ছিল ১০ থেকে ১৫টি, সেখানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০টির মতো বলে এক জরিপে উঠে এসেছে।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় জরিপটি চালিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। তারা মশা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সিটি করপোরেশনের অবহেলা ও অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসকেই দায়ী করছেন। কীটতত্ত্ববিদরা বলেন, বছরজুড়ে মশা নিধন পরিচালনা করার কথা থাকলেও ডেঙ্গুর প্রকোপ কমতে থাকার পর দুই সিটি করপোরেশনে কোনো কাজই হয়নি।

মশা বেড়ে যাওয়ায় সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমের ওপর সন্দেহ বাড়ছে সাধারণ নাগরিকদেরও।

তারা বলছে, যে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে তা কোনো কাজ করে না। মশার ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে কাউন্সিলররাও নগর ভবনকে জানিয়েছেন। মশা নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বিভিন্ন প্রোগ্রাম পরিচালনা করলেও দক্ষিণ সিটিতে তা একেবারেই দেখা যাচ্ছে না। উপরন্তু সংস্থাটি তার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে মশক নিধন কর্মীর সংখ্যা কমিয়েছে। এ নিয়ে কথাও বলতে রাজি নয় সংস্থাটির স্বাস্থ্য বিভাগ।

নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিসেম্বর থেকে মার্চ কিউলেক্স মশার প্রজনন মৌসুম। প্রতি বছরের এ সময় মশার আধিক্য দেখা যায়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, শুরু থেকেই ওয়ার্ডগুলোতে জনপ্রতিনিধি ও নাগরিকদের সম্পৃক্ত করে ক্রাশ প্রোগ্রাম চালানোর দরকার ছিল। বছরজুড়ে এই কাজে অবহেলা ছিল। মশা নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে প্রতি সাত দিন অন্তর ড্রেন, ডোবা ও নোংরা এলাকা পরিষ্কার করতে হবে।

আমরা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় জরিপ করে দেখেছি, বছরের অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন মশার ঘনত্ব তিন থেকে চারগুণ বেড়েছে। মশার প্রজননস্থলগুলো পরিষ্কার করে এ উপদ্রব কমিয়ে আনা সম্ভব। জরুরি পদক্ষেপ না নিলে মার্চের পর মশা আরো বাড়তে থাকবে। মশার উপদ্রব যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তাতে কালবৈশাখি ঝড় না হওয়া পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।

মশা নিয়ে অভিযোগ করেছেন খোদ করপোরেশনের কাউন্সিলর ও মশক নিধনে নিয়োজিত ব্যক্তিরাও। ডিএসসিসির ৬৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজি মো. ইবরাহীম সংস্থার মেয়রকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, তার ওয়ার্ডের জন্য সিটি করপোরেশনের বরাদ্দকৃত মশার ওষুধ প্রতিদিন ছিটানো হচ্ছে। কিন্তু সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

ডিএসসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিদিন অনেক কাউন্সিলরের ফোন পাই। সবারই অভিযোগ, ওষুধ কাজ করে না। তারা ওষুধ পরীক্ষার দাবি করেছেন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ৬ লাখ ৪০ হাজার লিটার অ্যাডাল্টিসাইডিং ওষুধের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে ডিএসসিসি। তাতে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১২ কোটি ৪১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু প্রতিটি কোম্পানি অতিরিক্ত দর দেওয়ায় বার বার রি-টেন্ডার করে ডিএসসিসি।

মশক নিধনে যেখানে প্রতিটি ওয়ার্ডে অন্তত ৪০ জন কর্মী রাখার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের, সেখানে রয়েছে ১৩-১৮ জন। এদের মধ্য থেকে আবার ১০-১২ জনকে রেখে বাকিদের সচিব দপ্তরে বদলি করা হয়েছে। সামনে আসছে ডেঙ্গুর মৌসুম।

এ সময় কর্মী কমানোকে চরম অবহেলা হিসেবে দেখছেন কীটতত্ত্ববিদ ও নাগরিকরা। বিষয়টি নিয়ে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (ডা.) মো. শরীফ আহমেদের দপ্তরে গেলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, মশার ওষুধ আমরা পরীক্ষা করি না। কাজটা করে আইইডিসিআর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারের প্ল্যান্ট প্রটেকশন। তারা যে ওষুধ সার্টিফায়েড করে আমরা সেটাই ব্যবহার করি।

উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, মশা বেড়েছে সত্য। বিগত সময়ে আমরা কয়েকবার চিরুনি অভিযান করেছি। এখনো অভিযান চলছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!