• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

হকারমুক্ত করা যাচ্ছে না ফুটপাত


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ৯, ২০২১, ০৪:১০ পিএম
হকারমুক্ত করা যাচ্ছে না ফুটপাত

ঢাকা : রাজধানীতে ফুটপাত রয়েছে প্রায় সাড়ে চারশ কিলোমিটার। কিন্তু এ ফুটপাতের বেশ কিছু অংশ দীর্ঘদিন ধরে বেদখল হয়ে আছে। শুধু ফুটপাতই নয়, হকারদের দখলে আছে অনেক রাস্তার দুইপাশের অংশও। এতে একদিকে পথচারীর চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে।

অন্যদিকে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজটের। মাঝেমধ্যে দুই সিটি করপোরেশন এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ করে। কিন্তু কিছুদিন না যেতে সেই ফুটপাত আবারো বেদখল হয়ে যায়। কোনো অভিযানেই হকার মুক্ত হচ্ছে না ফুটপাত।

জানা গেছে, সমস্যা সমাধানে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে একটি পরিকল্পনা জমা দেওয়া হয়েছে ।

অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর ফুটপাত ও রাস্তা দখলের পেছনে রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী মহলের ইন্ধন রয়েছে। তাই উচ্ছেদের পরও আবারো বেদখল হয়ে যায়। কারণ এসব ফুটপাতকে ঘিরে চলে মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজি।

গত জানুয়ারিতে রাজধানীর আগারগাঁও ও মিরপুর ১ নম্বরে উচ্ছেদ অভিযান চালায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় অবৈধ অনেক স্থাপনা। কিন্তু এক মাস পরই ওইসব স্থানে আবারো ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে হকাররা।

একইভাবে গুলিস্তান, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, পল্টন, মতিঝিল, বসিলা, মোহাম্মদপুর রিং রোড, বাড্ডা, রামপুরা, নিউমার্কেট ও ঢাকা কলেজের আশপাশ, যাত্রাবাড়ি, মিরপুর ১০, ১, ২, ১২ ও ১৪ নম্বরসহ অনেকে স্থানেই ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে রেখেছে হকাররা। আর মতিঝিল, গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, ধানমন্ডি, মিরপুরে শুধু ফুটপাতই নয়, হকারদের দখলে রয়েছে মূল সড়কেরও বেশ কিছু অংশ।

এর আগে ২০১৯ সালের অক্টোবরে মতিঝিল ও গুলিস্তানে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালায় ডিএসসিসি। মাসখানেক ফুটপাতগুলো হকারদের দখল মুক্ত থাকায় ওই এলাকার যানজট কমে গিয়েছিল। পথচারীরাও নির্বিঘ্নে ফুটপাত ব্যবহার করতেন। কিন্তু এখন আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে গোটা এলাকা।

গত বছর ফুলবাড়িয়াতেও ব্যাপক উচ্ছেদ অভিযান চালায় ডিএসসিসি। বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় কয়েকশ স্থায়ী-অস্থায়ী স্থাপনা। অভিযানকালে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে পড়তে হয় সিটি করপোরেশনকে।

অভিযোগ আছে ফুটপাতে প্রতিটি দোকান থেকে দৈনিক ৫০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলা হয়। এসব দোকানে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে আরেক দফা চাঁদা তুলছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এসব হকারের সাথে পুলিশসহ সিটি করপোরেশনেরও সম্পৃক্ততা আছে বলে অভিযোগ আছে।

গত ২১ জানুযায়ি রাজধানীর মিরপুর ১১ নম্বরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে গেলে পুলিশের সাথে স্থানীয়দের সংঘর্ষ হয়েছিল।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে টিয়ার সেলও ছুঁড়তে হয়। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বারবার এসব অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করলেও আবারো দখল হয়ে যায়। উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গিয়ে অর্থও খরচ হয়। তাই আবারো সেসব বেদখল হওয়া সরকারি অর্থের অপচয় মনে করেন অনেকে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, উচ্ছেদ অভিযানের ব্যাপ্তি অনুযায়ী কমপক্ষে ৫ হাজার থেকে লাখ টাকাও খরচ হয়। বিভিন্ন মার্কেটের মালিকদের যদি সচেতন করা না হয় তাহলে ফুটপাত দখলকারী এসব অবৈধ দোকান উচ্ছেদেও সফলতা ধরে রাখা সম্ভব নয়। কারণ মার্কেটগুলোর সামনের ফুটপাতে অবৈধ দোকান বেশি বসে। আবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ পুলিশ প্রশাসনেরও সহযোগিতা প্রয়োজন।

সকলের সমন্বিত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা না থাকলে ফুটপাত ও রাস্তা দখল মুক্ত করা সম্ভব নয়। তিনি জানান, কীভাবে রাজধানীর ফুটপাত ও রাস্তা দখলমুক্ত রাখা যায় এজন্য একটি পরিকল্পনা প্রস্তাব ডিএসসিসি মেয়রের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।

ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অব গর্ভনেন্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি)-র এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় রাজধানীতে প্রায়  ৪৩০ কিলোমিটার ফুটপাত রয়েছে। ডিএসসিসি-র আওতাধীন ফুটপাত আছে ২১৭ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার। বাকিটা ডিনসিসির আওতাধীন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!