• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
বিদ্যুৎ চুরি

দৈনিক কোটি টাকা কার পকেটে যায়?


এম. সোলায়মান আগস্ট ১১, ২০২২, ০৭:৩১ পিএম
দৈনিক কোটি টাকা কার পকেটে যায়?

ঢাকা: দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি মেটাতে যখন টালমাটাল অবস্থা, তখনো বিদ্যুতের চুরি ঠেকাতে দেখা যায়নি কোনো বিশেষ উদ্যোগ। রাজধানীর ফুটপাতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ দোকানে জ্বলছে পাঁচ লাখেরও বেশি বাতি। এর প্রায় সবই চলছে অবৈধ সংযোগে। এলাকা বেধে স্থানীয় চক্র প্রতিদিন এসব বাতিপ্রতি নিচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। যা এখন ওপেন সিক্রেট। 

একটি বাতিতে ২০ টাকা করে নিলেও সে হিসাবে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে মাসে ৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় প্রভাবশালী চক্র। যার বড় অংশই সরকারি কোষাগারে জমা পড়ে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কারণেই বন্ধ হচ্ছে না এসব অবৈধ সংযোগ।

গুলিস্তানে ফুটপাতের দুই পাশেই রয়েছে অসংখ্য দোকান। বাতিপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকার বিনিময়ে দেয়া হয়েছে অবৈধ সংযোগ। এসব দোকানে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে দিনের বেলা সূর্যের আলোতেও জ্বলছে বৈদ্যুতিক ভাল্ব। 

গুলিস্তানের মতো পুরো রাজধানীজুড়েই রয়েছে হকারদের দাপট। অবৈধভাবে ব্যবহৃত এই বিদ্যুতের সঠিক কোনো হিসাব কারো কাছে নেই। তবে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির একটি সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রাপ্ত আনুমানিক হিসেবে দেখা যায়, শুধু ঢাকা শহরেই ডিপিডিসির সরবরাহকৃত বিদ্যুতের ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অবৈধভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এ অবৈধ বিদ্যুতের অধিকাংশই ব্যবহার হচ্ছে রাতের বেলায় ঢাকার ফুটপাতে। ফুটপাতে বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য মিটারের ব্যবস্থা নেই। তাই কতটুকু বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে তারও কোনো হিসাব নেই।

রাজধানীর রামপুরা কাঁচাবাজার সংলগ্ন ফুটপাতের ব্যবসায়ী আকরাম খান বলেন, তারা ভাল্বপ্রতি ৩০ টাকা করে দেন একদল প্রভাবশালীকে। প্রতিদিন তারা সন্ধ্যা হলেই টাকা তুলে নিয়ে যান। যারাই ফুটপাতে ব্যবসা করেন তাদের একেকজন এক থেকে তিনটি ভাল্বও ব্যবহার করেন। 

গুলিস্তান এলাকার হকার শামীম জানান, মিটার আছে কী নাই তা তাদের জানা নাই। ভাল্বপ্রতি প্রতিদিন বিল দেন। তবে এই টাকাটা কাদের পকেটে যায় তা তাদের জানা নেই। 

ফুটপাতের বেশিরভাগ সংযোগই অবৈধ। তবে কিছু কিছু বৈধ সংযোগও আছে। অবৈধ সংযোগের জন্য ঢাকার কয়েকটি এলাকায় দালাল নিয়োগ করা আছে। তারাই নিজ এলাকার ফুটপাতের বৈদ্যুতিক সংযোগ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এজন্য তাদের কয়েক গুণ বেশি টাকা দিতে হয়।

ডিপিডিসি সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ আইন ২০১৮-এর ৩৮(খ) ধারা অনুযায়ী লিখিত অনুমতি ব্যতীত মিটার থেকে কোনো ব্যক্তিকে পার্শ্ব সংযোগ দিলে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে। আবাসিক, বাণিজ্যিক, দাতব্য প্রতিষ্ঠান, স্ট্রিট লাইটের জন্য ৫শ’ টাকা, সেচ সংযোগ-৫ হাজার টাকা, শিল্পকারখানা (৪৫ কেভিএ পর্যন্ত)-৭ হাজার ৫শ’ টাকা, শিল্পকারখানা (৪৫ কেভিএ থেকে ৭৫ কেভিএ পর্যন্ত) শিল্প কারখানা (৭৫ কেভিএ-এর ঊর্ধ্বে) ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু ফুটপাতের ক্ষেত্রে এসব বিধান শুধু কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান বলেন, এগুলো বন্ধে আমরা তৎপর আছি। তবে কিছু কিছু অসাধু লোক আছে, তারা এসব করছে। তাদের পেছনে আমরা আছি। শুধু রাজধানীতেই নয়, বেশির ভাগ জেলা শহরের একই চিত্র।

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!