• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রোহানের আর কেউ রইলো না


নিজস্ব প্রতিবেদক  ডিসেম্বর ৪, ২০২২, ০৯:৫৩ এএম
রোহানের আর কেউ রইলো না

ঢাকা: রুবিনা আক্তার রুবির লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি যখন রাজধানীর হাজারীবাগে মায়ের বাসায় নেওয়া হয়, তখন তার একমাত্র সন্তান আরাফাত রহমান রোহান অঝোরে কাঁদছিল। স্বজনরা তাকে শেষবারের মতো মায়ের মুখখানি দেখাতে চাইলেও সে রাজি হচ্ছিল না। সড়কে ক্ষতবিক্ষত হওয়া মুখটি না দেখে মায়ের সেই সুন্দর মমতামাখা মুখখানিই রাখতে চাইল সে সুখস্মৃতিতে। স্বজনরাও পরে তাতে সায় দিলেন। রোহান তেজকুনীপাড়ার একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। 

শুক্রবার তাকে সেখানে নিজেদের বাসায় রেখেই মা রুবিনা আক্তার রুবি দেবরের মোটরসাইকেলে হাজারীবাগে যাচ্ছিলেন। পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের চারুকলা অনুষদের উল্টোপাশে প্রাইভেটকার ধাক্কা দেয়। এতে রুবিনা ছিটকে পড়লে সেই গাড়ির বাম্পারে আটকে তাকে টেনে নেওয়া হয় অন্তত দেড় কিলোমিটার পথ। শেষ পর্যন্ত পথচারী ও শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত মোড়ে ‘মুক্তি ও গণতন্ত্র’ তোরণের সামনে গাড়িটি আটকে রুবিনাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠালে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রোহান রুবিনার একমাত্র সন্তান। তার বাবা মাহবুবুর রহমান ডলার এক বছর আগে মারা যান। মায়ের মৃত্যুর সংবাদ শোনার পর থেকে নিশ্চুপ হয়ে পড়েছে সে। কারও সঙ্গে কথা বলছে না। নীরবেই গড়িয়ে পড়ে চোখের জল। এখন এই কিশোরের আর কেউই রইল না।

কাঁদতে কাঁদতে রোহানের মামা জাকির হোসেন মিলন বলেন, শুক্রবার ঘটনা জানার পর থেকেই রোহান অঝোরে কাঁদছিল। গতকাল মায়ের লাশ দেখানোর চেষ্টা করা হলেও সে দেখতে চায়নি, শুধু অ্যাম্বুলেন্সের দিকে করুণভাবে তাকিয়ে ছিল।

মিলন বলেন, ছেলেটার আর কেউ রইল না। সে কীভাবে কার কাছে বড় হবে, তাও বুঝতে পারছি না। তবে আপাতত রোহানকে নিজের কাছেই রাখবেন বলে জানান তিনি।

এদিকে, ওই দুর্ঘটনায় শাহবাগ থানায় দায়ের মামলায় গাড়িটির চালক মোহাম্মদ আজহার জাফর শাহকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। তবে ঘটনার পর তিনি গণপিটুনির শিকার হয়ে এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জাফর শাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চাকরিচ্যুত সহযোগী অধ্যাপক। ২০১৮ সালে নৈতিক স্খলনের অভিযোগে চাকরি যায় তার।

গতকাল শনিবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে রুবিনার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে হাজারীবাগে জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তার মায়ের পাশে দাফন করা হয়।

শাহবাগ থানার ওসি নূর মোহাম্মদ বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে শুক্রবার রাতে রুবিনা আক্তারের ভাই জাকির হোসেন মিলন সড়ক পরিবহন আইনে মামলা করেছেন। এতে চালক আজহার জাফর শাহকে আসামি করা হয়েছে। তিনি এখন পুলিশ পাহারায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসক তার শারীরিক অগ্রগতির কথা জানালে আমরা তার সঙ্গে কথা বলব।

সোনালীনিউজ/এম

Wordbridge School
Link copied!