• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নবীজির প্রতি ভালোবাসা


মুশফিক হাবীব অক্টোবর ২৮, ২০২০, ০২:২০ পিএম
নবীজির প্রতি ভালোবাসা

ঢাকা : পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে আল্লাহতায়ালা অগণিত নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। তারা উম্মতকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করেছেন। উম্মতের সামনে তাওহিদ, রিসালাত ও আখেরাতের কথা তুলে ধরেছেন। চিরকালীন মুক্তি ও শান্তির পথ দেখিয়েছেন। সর্বোপরি সৃষ্টি ও স্রষ্টার মাঝে সুনিবিড় মেলবন্ধন স্থাপন করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন।
নবী-রাসূলদের বরকতময় এধারার সর্বশেষ সদস্য ছিলেন আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আল্লাহতায়ালা তাকে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল হিসেবে এ ধরায় পাঠিয়েছেন। দায়িত্ব পেয়ে তিনি কালিমার দাওয়াত পৌঁছে দিতে নিমগ্ন হন। হকের বাণী ছড়িয়ে দিতে লাগলেন সর্বত্র। পরিবেশ ছিল সম্পূর্ণ বৈরী, প্রতিকূল । মূর্তিপূজায় বুদ হয়ে থাকা আরবসমাজ তার বিরুদ্ধে ক্ষেপে ওঠলো। কাফেররা তার ওপর চালাতে শুরু করলো নির্মম অত্যাচারের স্টিমরোলার।

অবর্ণনীয় জুলুম-নিপীড়ন, অকথ্য গালাগাল আর ব্যঙ্গ-বিদ্রূপে জর্জরিত করতে থাকল প্রিয়নবীর পুতঃপবিত্র সত্তা। কিন্তু তিনি ছিলেন স্বীয় মিশনে অটল-অবিচল। সব কষ্ট-যাতনা অম্লানবদনে সয়ে নিরন্তর ছুটে চলেছেন অভীষ্ট লক্ষ্যে। ফলে ২৩ বছরের মেহনতে নির্যাতনকারী আরবসমাজ থেকেই তুলে আনতে পেরেছিলেন প্রাণোৎসর্গকারী লক্ষাধিক সাহাবার এক সুবিশাল কাফেলা ।

এই কাফেলার সবাই ছিলেন মুর্খতার যুগের সব কলুষতা ও কদর্যতা থেকে মুক্ত এবং তাবৎ উত্তম মানবীয় গুণে সুসজ্জিত। আল্লাহর হুকুমের সামনে নতশির। রাসূলের একনিষ্ঠ অনুসারী ।

অভূতপূর্ব এই বৈপ্লবিক সফলতা মানবসভ্যতার প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক সীমাহীন অনুগ্রহ । মানব ইতিহাসের মহানায়ক এই নবীর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করা প্রত্যেক মুমিনের ঈমানি দায়িত্ব। অবশ্যপালনীয় বিধান। কুরআন-হাদিসে এর আবশ্যিকতা ও অপরিহার্যতা বিবৃত হয়েছে ।

আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন-আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও আল্লাহর পথে জিহাদ করা অপেক্ষা তোমাদের নিকট যদি অধিক প্রিয় হয় তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের আত্মীয়-স্বজন,  তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যা তোমরা মন্দাপড়ার আশঙ্কা করো ও তোমাদের বাসস্থান যা তোমরা ভালোবাসো-তবে অপেক্ষা করো আল্লাহর নির্দেশ আসা পর্যন্ত। আল্লাহ পাপিষ্ঠ সমপ্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না। (সূরা তাওবা-২৪)।

রাসূলকে ভালোবাসা ফরজ হওয়া এই আয়াত থেকে স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠেছে। কেননা, আয়াতে পার্থিব জীবনের প্রিয় বস্তুসমূহের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা টেনে বলা হয়েছে এসব জিনিসের কোনো একটি যদি তোমাদের কাছে আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার চেয়ে প্রিয় হয়ে যায় তাহলে তোমরা শাস্তির অপেক্ষা করতে থাকো ।

কঠিন এই ধমকিবার্তা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, একজন মুমিনের সর্বাধিক প্রিয় বস্তু হতে হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ভালোবাসা । অন্য এক আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, হে নবী আপনি বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও তবে আমাকে অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সূরা আল ইমরান-৩১)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসার গুরুত্ব হাদিসে আরো স্পষ্ট ভাষায় বর্ণিত হয়েছে। হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ আমি তার কাছে তার পিতা, সন্তান ও সমগ্র মানুষের তুলনায় অধিক প্রিয় না হবো। (সহীহ বুখারী-১৫)। হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর সাথে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা থেকে বিষয়টি আমাদের সামনে দিবালোকের মতো পরিষ্কার হয়ে যায়।

আবদুল্লাহ ইবনে হিশাম রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমরা একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গেই ছিলাম। তিনি হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর হাত ধরে রেখেছিলেন। এসময় ওমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমার কাছে আমার প্রাণ ব্যতীত সবকিছু থেকে অধিক প্রিয়।
উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ করে বলছি-তুমি পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না আমি তোমার কাছে তোমার প্রাণের চেয়েও  অধিক প্রিয় হবো। এরপর ওমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, আল্লাহর কসম এখন আপনি আমার কাছে আমার প্রাণের চেয়েও অধিক প্রিয়। একথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এবার হয়েছে হে ওমর।  (সহীহ বুখারী- ৬৬৩২)

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি নির্মল ও নিখাঁদ ভালোবাসায় আল্লাহ আমাদের হূদয়সমূহ ভরে দিন। আমিন!

লেখক : উস্তাদ, মারকাযুল কুরআন, মাস্টারপাড়া, উত্তরখান, উত্তরা, ঢাকা।

Wordbridge School
Link copied!