• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য


ফিচার ডেস্ক নভেম্বর ২৩, ২০২০, ১২:৪৬ পিএম
মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য

ঢাকা : আল্লাহতায়ালা নিজ অনুগ্রহে মানুষ সৃষ্টি করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। দুনিয়াতে মানুষের আগমন ও জীবনের লক্ষ্য হলো আল্লাহতায়ালার বিধি-বিধানের বাস্তবায়ন তথা তাঁর ইবাদত-বন্দেগি করা। আল্লাহতায়ালা  কোরআনে মানুষ সৃষ্টির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সুষ্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরেছেন,‘আমি জিন ও মানবজাতিকে শুধুমাত্র আমার ইবাদত ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি।’ অর্থাৎ ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি। (সুরা যারিয়াত, আয়াত-৫৬)

সুরা যারিয়াতের এ আয়াতে উঠে এসেছে মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী? আর ইবাদতই বা কী?

মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য হলো আল্লাহতায়ালার ইবাদত-বন্দেগি করা। আর ইবাদত হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশিত পথে ও মতে জীবন পরিচালনা করা। আল্লাহ নির্দেশিত পথে জীবন পরিচালনাই হলো মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য। আর নির্দেশ পালনের আমল হলো ইবাদত। মানুষ যখন  কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশ পালন করে ইবাদত করতে ব্যর্থ হয়; বুঝতে হবে আল্লাহর বান্দা হিসেবে দুনিয়াতে প্রতিটি মানুষের সৃষ্টির উদ্দেশ্যই তখন ব্যর্থ। ‘ইবাদত’ শব্দটি ‘আবদ’ শব্দ হতে এসেছে। আর ‘আব‌দ’ অর্থ হলো দাস বা গোলাম। সুতরাং ‘লিয়াবুদুন তথা ইবাদত’ মানে হলো-আল্লাহর গোলামি বা বন্দেগি করা। আর দুনিয়াতে যে ব্যক্তি আল্লাহর গোলামি করবে, ওই ব্যক্তিই সফলকাম।

ইবাদত সম্পর্কে মানুষ কিছু ভুল ধারণা পোষণ করে থাকে। মানুষ মনে করে কোরআনের নির্দেশ পালনে নামাজ আদায় করা, রোজা ও হজ্ব পালন করা, জাকাত দেওয়া, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আজকার, কোরআন তেলাওয়াত করার নামই ইবাদত। না, শুধু এগুলো করলেই ইবাদত হবে না। মিথ্যা কথা বলে, সুদ-ঘুষে জড়িত থেকে, লোক দেখানো ইবাদত করে, বেহায়ানাপনা, চোগলখোরি, হিংসা-বিদ্বেষ ও মুনাফেকির সঙ্গে লিপ্ত থেকে শুধুমাত্র নামাজ-রোজার মতো অন্যান্য আমল করার নাম ইবাদত নয়।

 কোরআন-সুন্নাহর নিষেধগুলো পরিত্যাগ করে আদেশ পালন হলো ইবাদত তথা বন্দেগি। কারণ ইবাদত হলো আল্লাহতায়ালা হুকুম-আহকাম যথাযথ পালন করা। এ কারণেই আল্লাহতায়ালা  কোরআনপাকে নির্দেশ প্রদান করেছেন-‘রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদেরকে যা দেন (নিয়ে এসেছেন), তা গ্রহণ করো এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাকো এবং আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।’ (সুরা হাশর, আয়াত-৭)। কোরআনের অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল-ফাহেশা তথা খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।’

মনে রাখতে হবে, যে ব্যক্তি নামাজ পড়ে এবং মিথ্যা কথা বলে; জাকাত দেয় আবার সুদ গ্রহণ করে; হজ্ব করে আবার বেহায়াপনায় লিপ্ত হয়, রোজা পালন করে আবার ঘুষ খায়-তাহলে এ ব্যক্তির নামাজ, রোজা, হজ্ব ও জাকাতসহ ইত্যাদি ইবাদত গ্রহণযোগ্য নয়। আর এ ইবাদতের জন্য তাকে সৃষ্টিও করা হয়নি। মানুষ আল্লাহর হুকুম-আহকাম পালনের মাধ্যমে ইবাদত করবে তথা সৃষ্টির শুকরিয়া জ্ঞাপন করার কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে আগমনের কারণে যে প্রক্রিয়ায় ইবাদত তথা সৃষ্টির উদ্দেশ্য সফল হবে তা হলো- আল্লাহতায়ালাকে রব হিসেবে মেনে নেওয়া এবং তাঁর দাসত্ব স্বীকার করা। আল্লাহতায়ালার নির্দেশ মেনে তাঁর পরিপূর্ণ আনুগত্য স্বীকার করা। সব বিষয়ে আল্লাহতায়ালার সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষা করা অর্থাৎ আল্লাহতায়ালাকে প্রভু বলে স্বীকার করা; অন্য কাউকে নয়। আল্লাহর হুকুম-আহকাম তথা হালালকে

হালাল আর হারামকে হারাম বলে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মেনে নেওয়া। শুধুমাত্র আল্লাহর সম্মান ও সম্ভ্রমের

প্রতি লক্ষ রেখে একমাত্র তাঁর সামনে মাথা নত করা বা সিজদা করা।

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সব কাজ-কর্মে আল্লাহর হুকুম-আহকাম মেনে চলাই হলো মানুষ সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য। আর তাঁর হুকুম-আহকাম পালনের আমলই হলো ইবাদত। কোরআনপাকের ঘোষণাও এ রকমই। আল্লাহর দরবারে আমাদের ফরিয়াদ, ‘হে আল্লাহ! আপনাকে রব বা প্রভু বলে স্বীকার করে, আপনার হুকুম-আহকাম যথাযথ মেনে শুধুমাত্র আপনার সম্মানে সিজদায় মাথা নত করার তাওফিক দান করুন। ইসলামের বিধান পরিপূর্ণ পালনে মুসলিম উম্মাহকে কবুল করুন।

সর্বোপরি দুনিয়ার সব মানুষকে কোরআন-সুন্নাহ মোতাবেক আপনার দাসত্ব বা গোলামি করার জন্য কবুল করুন। আমিন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

 

Wordbridge School
Link copied!