• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাতৃভাষায় দক্ষতা সময়ের দাবি


মাওলানা মুফতি নাঈম ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২১, ১২:৫২ পিএম
মাতৃভাষায় দক্ষতা সময়ের দাবি

ঢাকা : মনের ভাব প্রকাশের সবচেয়ে সুন্দর ও সহজ একটি মাধ্যম হচ্ছে ভাষা। যে নিয়ামত মানুষকে দেওয়া হয়েছে, তা অন্য প্রাণীকে দেওয়া হয়নি। ইরশাদ হয়েছে, ‘দয়াময় আল্লাহ। তিনি  কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন। মানুষ সৃষ্টি করে তাকে ভাষা শিখিয়েছেন।’ (সুরা আর-রহমান, আয়াত-১, ৪) ২০১৯-এর গবেষণা অনুযায়ী জানা যায় পৃথিবীতে ৭১১১ টির মতো ভাষা রয়েছে। একই ভাষায় অনেক বৈচিত্র্যও  রয়েছে। উদাহরণত বাংলাদেশের নোয়াখালী, চট্টগ্রাম বা সিলেটের আঞ্চলিক ভাষা অন্য জেলার মানুষেরা বুঝতে পারে না। এসবই আল্লাহতায়ালার পরিচয়ের একেকটি নিদর্শন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তাঁর নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে আসমান, জমিনের সৃষ্টি ও তোমাদের ভাষা ও গায়ের রংয়ের বৈচিত্র্যময় হওয়া। নিশ্চয় এগুলোতে জ্ঞানীদের জন্য শিক্ষা নেওয়ার উপকারণ রয়েছে।’ (সুরা রুম, আয়াত-২২)

প্রত্যেকের মায়ের ভাষাই তার মাতৃভাষা। আমরা বাঙালি। আমরা বাংলা মায়ের কোলে জন্ম নিয়েছি তো আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। অন্য জাতির চেয়ে বাঙালিদের জন্য মাতৃভাষা জিনিসটা অন্যরকম। কারণ পৃথিবীতে মাত্র এই একটা জাতি মাতৃভাষা রক্ষার জন্য রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে। এ ভাষার প্রতি আমাদের  ভালোবাসা থাকা ঈমানের দাবি। এ ভাষায় দক্ষ হওয়া জরুরি। অন্যথায় মাতৃভাষা দাবি করাটা মানায় না আমাদের জন্য। হাস্যকর হয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ মাতৃভাষাকে ভালোবাসতেন এবং তিনি সে ভাষায় সর্বোচ্চ শুদ্ধভাষী ও  পারদর্শী ছিলেন। বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি আরবের সবচেয়ে বিশুদ্ধ ভাষী। (তালখিসুল হাবীর-৪/১২৯৮) অন্যদেরকেও ভাষার শুদ্ধতা অর্জনে উৎসাহ দিয়েছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ব্যক্তির সৌন্দর্য হলো তার ভাষার শুদ্ধতা।’ (শুআবুল ঈমান, হাদসি নং-৪৬১০)

যে কোনো বিষয় মানুষের সামনে স্পষ্টাকারে তুলে ধরার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে বক্তৃতা। এখানেও বিশুদ্ধতা জরুরি। ভাষার বিশুদ্ধতা না থাকলে শিক্ষিতশ্রেণি কথা শুনতে চায় না। মানতে চায় না। হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে যখন ফিরআউনের কাছে দাওয়াত নিয়ে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হল তখন তিনি আল্লাহ তায়ালার কাছে হজরত হারুন (আ.) কে সহযোগী হিসেবে চেয়েছিলেন, যেন তিনি ফিরআউনের কাছে সুন্দরভাবে দাওয়াত উপস্থাপন করতে পারেন। কেননা হারুন (আ.) ছিলেন মুসা (আ.)-এর তুলনায় বিশুদ্ধভাষী। ইরশাদ হয়েছে, ‘(মুসা আ. বললেন) আর আমার ভাই হারুন যে আমার চেয়ে বিশুদ্ধ ভাষী তাকে আমার সহযোগী হিসেবে পাঠান, সে আমাকে সত্যায়ন করবে‌। আমি আশংকা করছি, তারা আমাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করবে।’ (সুরা কাসাস, আয়াত-৩৪) বিশুদ্ধ সাজানো গোছানো বক্তৃতা এক প্রকার যাদুর মতো। এটা মানুষের মধ্যে আশ্চর্যরকম প্রভাব ফেলে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নিশ্চয় কিছু বয়ান জাদুকরী।’ (আবু দাউদ হাদিস র্স-৫০০৭) এ জন্যই তো আল্লাহতাআলা প্রত্যেক নবীকে মাতৃভাষায় পারদর্শী করে পাঠিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, আমি প্রত্যেক নবীকে তাঁর মাতৃভাষা দিয়ে প্রেরণ করেছি যেন উম্মতের কাছে হুকুম-আহকাম সুন্দরভাবে বর্ণনা করতে পারেন। অতঃপর আল্লাহ যাকে চান তাকে হেদায়েত দেন আর যাকে চান তাকে পথভ্রষ্ট করেন। (সুরা ইব্রাহীম, আয়াত-৪)

একটা সমাজ বা সভ্যতায় বিপ্লব ঘটাতে হলে লেখনীর প্রভাব স্বীকৃত। বক্তৃতার তুলনায় লেখনীর প্রভাব আরো ব্যাপক। কারণ বক্তৃতা হয় কয়েক ঘণ্টার আর লেখনী স্থায়ী থেকে যায়। এর থেকে যুগ যুগ ধরে মানুষ উপকার নিতে পারে। জ্ঞানবিজ্ঞানের হাজারো বই আমাদের সামনে রয়েছে। যেগুলো থেকে আমরা প্রতিনিয়ত উপকৃত হচ্ছি। এগুলো আমাদের বহু আগের লেখকগণ লিখে গিয়েছেন। লেখনী না থাকলে জ্ঞানের অনেক দ্বার আমাদের সামনে উন্মোচন হতো না। প্রবাদ আছে, ‘জানার মানে আয়ত্তে আনা আর লেখনীর মানে সেটাকে আবদ্ধ করা। অর্থাৎ জানা জিনিসটা লিখে রাখলে সেটা হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তবে লেখা গ্রহণযোগ্য  হতে হলে অবশ্যই তা বিশুদ্ধ বানান ও সাহিত্যে উত্তীর্ণ হতে হবে। নতুবা মানুষ সেটা গ্রহণ করবে না। সুতরাং আসুন আমরা শুদ্ধ ভাষায় বলি, শুদ্ধ বানানে লিখি। শুদ্ধ  মাতৃভাষা ও সাহিত্য চর্চা করি।

লেখক : আলেম, প্রাবন্ধিক

 

Wordbridge School
Link copied!