• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সময় অমূল্য রতন


মিশকাত বিন আমির হোসেন মার্চ ১, ২০২১, ০৩:৩২ পিএম
সময় অমূল্য রতন

ঢাকা : কোন সেই জিনিস, যা খুব সংকীর্ণ, আবার খুব প্রশস্ত এবং দীর্ঘও? কোন সেই জিনিস, যা দ্রুতগামী, আবার মৃদুগামীও? কোন সেই জিনিস, যা আমরা নষ্ট করে ফেলি, অতঃপর তার ওপর আফসোস করি? কোন সেই জিনিস, যা ব্যতিরেকে কোনো কিছু সম্পন্ন হওয়া বা ঘটা সম্ভব নয়? কোন সেই জিনিস, যা প্রত্যেক ক্ষুদ্রকে গিলে খায় এবং প্রত্যেক বৃহৎকে সুবুদ্ধি দান করে? কোন সেই জিনিস, যার কসম খেয়েছেন মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালা? কোন সেই জিনিস, যাকে তুমি আয়ত্তে না আনতে পারলে, সে তোমাকে ধ্বংস করে ফেলবে? তা হলো সময়। যার প্রতি আমরা অনেকে অবহেলা প্রদর্শন করি এবং তার প্রতি গুরুত্ব দিই না। যা অনেকের কাছে এতো পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত থাকে যে, তা কাটতে চায় না, কাটাতে হয়। আবার অনেকের কাছে তা না থাকার ফলে কিনতে চায়, কিন্তু তা কিনতে পাওয়া যায় না।

শিক্ষার্থীদের উচিত, সময়ের যথোচিত কদর করা। সময়ের যথার্থ মূল্যায়ন করা। কারণ, সময়ই হলো জীবন। অতএব যে ব্যক্তি নিজের জীবনকে ভালোবাসে, তার উচিত, সময়ের অপচয় না করা। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘কিয়ামতের দিন কোনো বান্দার পদযুগল ততক্ষণ পর্যন্ত সরবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাকে ৫টি জিনিস প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হবে। তার আয়ু প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হবে, সে তা কিসে ক্ষয় করেছে? তার যৌবন  প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হবে, সে টা কিসে নষ্ট করেছে? তার ধনসম্পদ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হবে, সেটা কী উপায়ে উপার্জন করেছে এবং কোন পথে ব্যয় করেছে? এবং যে ইলম সে শিখেছিল, সে অনুযায়ী কি আমল করেছে? (তিরমিযি : ১৪৬) অন্য এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি গভীর রাত্রিকে ভয় করে, সে যেন সন্ধ্যা রাত্রেই সফর শুরু করে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যা রাত্রে চলতে শুরু করে, সে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যায়। সাবধান আল্লাহর পণ্য বড় আক্রা। শোনো! আল্লাহর পণ্য হলো জান্নাত। (সহিহ তিরমিযি: ১৯৯৩)। অন্যত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘দুটি নেয়ামত  এমন আছে, যার ব্যাপারে বহু মানুষ ধোঁকার মধ্যে রয়েছে। আর সে দুটি নেয়ামত হলো সুস্থতা ও অবসর।’ (বুখারি : ৬৪১২) প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন, ‘পাঁচটি জিনিসের পূর্বে পাঁচটি জিনিসের যথার্থ সদ্ব্যবহার করো; তোমার মরণের পূর্বে তোমার জীবনকে, তোমার অসুস্থতার পূর্বে তোমার সুস্থতাকে, তোমার ব্যস্ততার পূর্বে তোমার অবসর সময়কে, বার্ধক্যের পূর্বে তোমার যৌবনকালকে এবং দরিদ্রতার পূর্বে তোমার সম্পদকে।’ (বায়হাকি : ১০৭৭)

বাস্তব কথা হলো, ইসলামী অভিধানে ‘অবসর’ বা ‘অবকাশ’ বলে কোনো শব্দ নেই। কারণ, মুসলিমের জীবন হলো কাজে পরিপূর্ণ। দুনিয়াবি বা সংসারের ব্যস্ততা না থাকলেও দীনের কাজ, পরকালের চিন্তা, লেখাপড়া বা ইলম অনুসন্ধানের কাজে সেসব সময় ব্যস্ত থাকে। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অতএব যখন তুমি অবসর পাও তখন পরিশ্রম করো এবং তোমার প্রতিপালকের প্রতি মনোনিবেশ করো।’ (সুরা ইনশিরাহ, আয়াত-৭, ৮) যারা সময়ের কদর করেছেন তাদের অন্যতম একজন আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.)। তিনি বলেন, ‘যেদিন সূর্যাস্ত গেল, সেদিন আমার জীবনের একটি দিন কম হয়ে গেল। অথচ আমল বৃদ্ধি পেল না। এর ফলে আমি এতো অনুতপ্ত হলাম যে, এর মতো অনুতপ্ত আমি অন্য কিছুতে হয়নি।’ হাসান বাসরী (রা.) বলেন, ‘প্রত্যহ ফজর উদয়ের সময় আল্লাহর তরফ থেকে এক আহ্বানকারী আহ্বান জানিয়ে বলেন, হে আদম সন্তান! আমি এক নতুন সৃষ্টি। আমি তোমার আমলের সাক্ষী। সুতরাং আমার নিকট থেকে নেক আমল পাথেয় সংগ্রহ করে নাও। যেহেতু কেয়ামত পর্যন্ত আমি ফিরে আসব না।

জ্ঞানী ব্যক্তি কখনো সময় নষ্ট হতে দিতে পারে না। কারণ, সময় নষ্ট হওয়া কর্ম নষ্ট হওয়ারই নামান্তর। আর তা নষ্ট হয়ে গেলে পুনরায় ফিরিয়ে আনার কোনো ব্যবস্থা নেই। সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সময় হলো তরবারির মতো। তুমি তাকে কাটতে না পারলে, সে তোমাকে কেটে ফেলবে। সময় অত্যন্ত মূল্যবান। কিন্তু এ মূল্য থেকে টাকা-পয়সার মূল্যের পার্থক্য আছে। টাকা-পয়সা সঞ্চয় করা যায়। ধার দেওয়া যায়। প্রয়োজনে ধার নেওয়া যায়। কিন্তু সময় ধার দেওয়াও যায় না এবং ধার নেওয়াও যায় না। সময় আর অর্থের ব্যাপারে একটি মৌলিক মিল হলো দুটোই আমাদের খুব বেশি প্রয়োজন। এত বেশি প্রয়োজন যে, সে চাহিদা সহজে পূরণ হবার নয়। যারা মহান, যাদের আছে মহান উদ্দেশ্য, তাদের হাতের সময় মোটেই থাকে না। পক্ষান্তরে যারা কর্মবিমুখ, যাদের জীবনের কোনো উদ্দেশ্য নেই তাদের সময় কাটতেই চায় না। আর তাদেরকে ‘অবসর বিনোদন’ করতে হয়। আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই রয়েছে প্রত্যেক ২৪ ঘণ্টা। কিন্তু কেউ তা কাজে লাগায় এবং কেউ তা নষ্ট করে ফেলে। কারো সময়ে বরকত থাকে, কারো থাকে না। অধিকাংশ মানুষই সময়কে কাজে না লাগিয়ে কালের গভীর অন্ধকারে তলিয়ে হারিয়ে গেছে। পক্ষান্তরে একশ্রেণির মানুষ সময়কে কাজে লাগিয়ে মরেও অমর হয়ে আছেন। ইতিহাস তাদেরকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে।

লেখক : শিক্ষার্থী, হাটহাজারী মাদরাসা চট্টগ্রাম

 

Wordbridge School
Link copied!