• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দুনিয়া এক ধূসর মরীচিকা


সাদ হোসাইন মার্চ ২, ২০২১, ১২:৫৭ পিএম
দুনিয়া এক ধূসর মরীচিকা

ঢাকা : মানুষ মাত্রই আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব। আল্লাহর মনোনীত খলিফা বা প্রতিনিধি। মানুষের সেবার জন্য গোটা বিশ্ব সৃষ্টি করা হয়েছে। মানুষ মায়ের পেট থেকে পৃথিবীর বুকে এসে চোখ মেলে তাকায়। হাঁটি-হাঁটি পা-পা করে বেড়ে ওঠে। শৈশব কৈশোরের সিঁড়ি পেরিয়ে যৌবনে পা রাখে। ঘর বাঁধে সংসারপাতে। পরিবার-পরিজন নিয়ে শান্তি সুখের স্বপ্ন দেখে। মানুষ পৃথিবীর রাজা। তার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে গোটা পৃথিবী ও সৃষ্টিজগৎ। তাকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর রূপ, রস, গন্ধ, প্রাচুর্য; এক কথায় বিচিত্র বিপুল আয়োজন। মানুষ কাঠ-খড় পুড়িয়ে অনেক অসম্ভব সাধন করে মাটির পৃথিবীকে মনের মতো করে সাজিয়েছে। মানুষ বোধ-বুদ্ধি, মেধা-জ্ঞান দিয়ে জয় করেছে পৃথিবীটাকে। পৃথিবী আজ তার হাতের মুঠোয়। সে নীলাকাশের নিচে পাখির মতো ডানা মেলে উড়ছে। অতলান্ত সাগরের নিচে মাছের মতো সাঁতার কাটছে। পৃথিবী বিজয় করে সে পাড়ি দিয়েছে মহাকাশের বুকে। চাঁদকে জয় করে সে পা রেখেছে মঙ্গলগ্রহে। তার জয়ের পতাকা চারদিকে পতপত করে উড়ছে।

বাস্তবতা হলো, পৃথিবী এক পান্থশালা-পুতুল, কাঁচের রঙ্গমঞ্চ। এখানে কেউ স্থায়ী নয়। দুদিনের প্রবাসে এখানে কেউ আসে, আবার চলে যায়। এ মায়াবী পৃথিবী মানুষের যত হাসি-গান, যত যশ-খ্যাতি, জয়, প্রাচুর্য, আবিষ্কার, ত্যাগ-তিতিক্ষা ইত্যাদি সব গ্রহণ করে। কেবল মানুষকে গ্র্রহণ করে না। মারা যাওয়ার সাথে সাথে সে হয়ে যায় পচা লাশ। সে লাশের কানাকড়িও মূল্য থাকে না। তার ঠিকানা হয় গোরস্থানে, না হয় শ্মশানে।

কবর হয় ঠিকানা, মাটি হয় বিছানা। গাড়ি-বাড়ি, টাকাকড়ি, ক্ষমতা-যশ, প্রাচুর্য, আপনজন ইত্যাদি তার সঙ্গী হয় না। সব ফেলে তাকে খালি হাতে কবরে যেতে হয়। তখন সে বড় একা, বড় অসহায়। একাকী অজানা দেশে পাড়ি দেয়| পৃথিবীর বড় মহলের জলসাঘরে মানুষের আসার একটা সিরিয়াল আছে। কিন্তু যাওয়ার কোন সিরিয়াল নেই। এখানে আসার অমোঘ বিধান হলো, দাদার পর বাবা, বাবার পর নাতি আসবে। কিন্তু এখান থেকে যাওয়ার কোনো সিরিয়াল নেই। অতঃপর বৃদ্ধ দাদার আগে দুঘণ্টার মধ্যে নাতি চলে যায়। আবার বাবার আগে চলে যায় ছেলে।

মানুষ ছলনা করে। কিন্তু পৃথিবীর ছলনা উপলব্ধি করতে পারে না। সে আলিয়াকে ভাবে আলো, মরীচিকাকে ভাবে পানি। ছলনার পাশা খেলায় সে নাচের পুতুল সেজে নাচে। বালুচরে ঘর বাঁধে। একদিন আসল সত্য দেখা দেয়। মৃত্যু এসে তার সাজানো সংসারের প্রেম-ভালোবাসা, যশ-খ্যাতি, ধন-জন, ক্ষমতা কেড়ে নেয়। তখন সে বুঝতে পারে দুনিয়ার ধোঁকায় পড়ে বোকা সেজেছে। তার কাছে তখন সত্য হয়ে ধরা পড়ে এ পৃথিবীর প্রেম-প্রীতি, ধন-দৌলত, ক্ষমতা ইত্যাদি সব মিছে।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন; ‘এ পার্থিব জীবন পুতুল খেলার মতোই ক্ষণিকের। আসল জীবন তো পরকালের। হায়! যদি ওরা বিচার বুদ্ধির প্রয়োগ করতো।’

পবিত্র কোরআন মানুষকে জানিয়ে দিয়েছে এ দুনিয়ার খেলাঘর ভেঙে যাবে কদিন পর। এ দুনিয়া পান্থশালা।  এটি তার আসল ঠিকানা নয়। পরকাল হলো আসল সত্য স্থায়ী ঠিকানা। তবুও মানুষ পৃথিবীর ছলনার জালে আটকে পড়ে। রঙ তামাশার নীল দরিয়ায় সাঁতার কাটে। ভোগবাদী মানুষ ভোগের নেশায় কুকুরের চেয়ে লোভী, বাঘের চেয়েও হিংস্র হয়। তারা মানুষের মুখের খাবার কেঁড়ে নেয়, পরণের কাপড় ছিনিয়ে নেয়, পেটে লাথি মারে। বুকের তাজা রক্ত শোষণ করে নিজেদের ভাগ্য গড়ে। কালো টাকার পাহাড় গড়ে। পাজরের হাড় দিয়ে রংমহল বানায়। লাশের ওপর ক্ষমতার মসনদ গড়ে। চারদিকে তার যশ-খ্যাতির ডুগডুগি বাজে। হঠাৎ একদিন ধেয়ে আসে মৃত্যু নামক বাজপাখি। সে তার দেহ নামক সোনার খাঁচা থেকে আত্মানামক অচিন পাখি ছিনিয়ে নেয়। তার ধন-জন, যশ-খ্যাতি, ক্ষমতা ইত্যাদি  তাকে আটকে রাখতে পারে না। সে খালি হাতে না ফেরার দেশে চলে যায়। তার পেছনে পড়ে থাকে তার প্রাচুর্য, আপনজন, গাড়ি-বাড়ি, টাকাকড়ি। একাকি তাকে পাড়ি দিতে হয় অনন্তের পথে। কেউ হয়না তার সঙ্গের সাথী। তাই বলি, হে দুনিয়ার পথিক! এবার ফিরে আসো পূর্ণাঙ্গ ইসলামের ছায়াতলে। এ দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী।  দুনিয়া এক ধূসর মরীচিকা।

লেখক : শিক্ষার্থী, আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া হামিউচ্ছুন্নাহ মেখল, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম

 

Wordbridge School
Link copied!