• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

যে রোজায় মেলে সারা বছর রোজার সওয়াব


উসমান বিন আ.আলিম মে ২০, ২০২১, ১১:৫২ পিএম
যে রোজায় মেলে সারা বছর রোজার সওয়াব

ঢাকা : রহমত, মাগফিরাত, নাজাতের মাস রমজান পেরিয়ে আরেক মাসের আগমন। আরবি চান্দ্রমাসের হিসেবে এটা দশম মাস। এই মাসের নাম শাওয়াল। বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ মাস রমজানের পর  শাওয়াল মাস অন্যতম। এই মাসের সাথে সম্পৃক্ত আছে ঈদুল ফিতরের, ফিতরা আদায় করার, ছয় রোজা রাখার, আছে হজ্বের সাথে সম্পৃক্তও। এই মাসের অন্যান্য আমলের মধ্যে ছয় রোজা রাখারও কথা রয়েছে। শাওয়ালের এই ছয় রোজার ফজিলত অন্যতম। রমজানের রোজা রাখার পর এই ছয় রোজা রাখার কারণে আল্লাহতায়ালা বান্দাকে প্রতিদান হিসেবে সারা বছর রোজা রাখার সাওয়াব দেন। হজরত আবু আইউব আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোজা রাখল এবং এ রোজার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখল সে যেন সারা বছর রোজা রাখল’। (মুসলিম, হাদিস : ১১৬৪)

হজরত সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, রমজানের রোজা দশ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ৬ রোজা দু’মাসের রোজার সমান।’ (নাসায়ি : ২/১৬২) এক বছরের রোজার সওয়াব এভাবে হয় যে, আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনুল কারীমের সুরা আনআমের ১৬০ নাম্বার আয়াতে এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি একটি নেক কাজ করবে সে দশগুণ বেশি সওয়াব পাবে।’ সে হিসেবে রমজানুল মোবারকের ত্রিশ রোজা তিনশ রোজার সমান হলো। আর শাওয়ালের ৬টি রোজা ষাট রোজার সমান। এভাবে ৩৬টি রোজা বছরের মোট তিনশ ষাটটি রোজার সমান হয়ে গেল।

হজরত উবাইদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন রাসুল সাল্লাল্লাহু  জিজ্ঞাস করলাম, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ আমি কি সারা বছর রোজা রাখতে পারব? তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমার ওপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে, কাজেই তুমি সারা বছর রোজা না রেখে রমজানের রোজা রাখ এবং রমজানের পরবর্তী মাস শাওয়ালের ৬ রোজা রাখ, তাহলেই তুমি সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে’। (তিরমিজি : ১/১৫৩৪

রোজা রাখার উপকারিতার তো শেষ নেই। আমরা অনেক উপকারের কথাই তো জানি। কিন্তু এই নফল রোজার ফজিলতও অন্যতম। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন মানুষের আমলের মধ্যে সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, আমাদের রব ফেরেশতাদেরকে বলেন অথচ তিনি সবকিছু জানেন, তোমরা আমার বান্দার নামাজ দেখ; সেকি নামাজ পূর্ণভাবে আদায় করেছে- নাকি নামাজে ঘাটতি করেছে। যদি পূর্ণভাবে আদায় করে থাকে তাহলে পূর্ণ নামাজ লেখা হয়। আর যদি কিছু ঘাটতি থাকে তখন বলেন, দেখ আমার বান্দার কোনো নফল নামাজ আছে কিনা। যদি নফল নামাজ থাকে তখন বলেন, নফল নামাজ দিয়ে বান্দার ফরজের ঘাটতি পূর্ণ কর। এরপর অন্য আমলের হিসাব নেওয়া হবে।’

হজরত সুফিয়ান ছাওরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মক্কায় তিন বছর ছিলাম। মক্কাবাসীর মধ্য থেকে জনৈক ব্যক্তি প্রত্যহ জোহরের সময় মসজিদে হারামে এসে বাইতুল্লাহ তওয়াফ করার পর নামাজ পড়ে আমাকে সালাম দিয়ে চলে যায়। ফলে তার ও আমার মাঝে হূদ্যতা ও সমপ্রীতির সৃষ্টি হয়। হঠাৎ সে অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাকে ডাকল এবং বলল, আমি মারা গেলে তুমি আমাকে নিজ হাতে গোসল দেবে, নামাজ পড়বে এবং দাফন দেবে। ওই রাতে তুমি আমাকে কবরে একাকী রেখে চলে আসবে না। তুমি আমার কবরের কাছে রাতযাপন করবে এবং মুনকার-নকিরের সওয়ালের সময় আমাকে সহায়তা করবে। সুতরাং আমি তাকে নিশ্চয়তা দিই। আমি তার আদেশ মোতাবেক তার কবরের কাছে রাতযাপন করি। আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলাম। হঠাৎ ঘোষকের ঘোষণা শুনলাম, ‘হে সুফিয়ান, তোমার রক্ষণাবেক্ষণ ও তালকিনের প্রয়োজন নেই। আমি বললাম, কীসের জন্য? তিনি বললেন, রমজানের রোজা এবং রমজান-পরবর্তী শাওয়ালের ৬টি রোজার কারণে। আমি ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে কাউকে দেখতে পেলাম না। অজু করে নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে পরলাম। অতঃপর আমি আবার একই স্বপ্ন দেখলাম। সুতরাং আমি উপলব্ধি করলাম যে, এটা আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে, শয়তানের পক্ষ থেকে নয়। সুতরাং আমি চলে গেলাম এবং বলতে লাগলাম, হে আল্লাহ! আপনি আমাকে রমজানের রোজা এবং শাওয়ালের ৬টি রোজা রাখার তৌফিক দান করুন।

শাওয়ালের রোজা রাখার নিয়মের মধ্যে উত্তম সময় হলো ঈদের পরের ৬ দিন। কারণ, তাতেই রয়েছে নেক আমলের প্রতি দ্রুত ধাবিত হওয়ার প্রমাণ। রোজাগুলো শাওয়ালের ২ তারিখ হতেই আরম্ভ করতে হবে এমনটা জরুরি নয়। ধারাবাহিকভাবে রাখতে হবে এটাও জরুরি নয়। মাসের যে কোনো সময় এই রোজা আদায় করলেই হবে। ২/১টি রেখে মাঝখানে বিরতিও দেওয়া যাবে। তবে ২ তারিখ থেকে শুরু করাই ভালো। এতে একজন মোমেনের জন্য আমলের প্রতি উদ্গ্রীব হওয়ার আলামত। আল্লামা ইবনে রজব (রহ.) বলেন, শাওয়াল মাসে রোজা রাখার তাৎপর্য অনেক। রমজানের পর রাখা রমজানের রোজা কবুল হওয়ার আলামত স্বরূপ। কেননা আল্লাহতায়ালা কোনো বান্দার আমল কবুল করলে, তাকে পরেও অনুরূপ আমল করার তৌফিক দিয়ে থাকেন। নেক আমল কবুলের আলামত ও প্রতিদান বিভিন্নরূপ। তার মধ্যে একটি হলো পুনরায় নেক আমল করার সৌভাগ্য অর্জন করা। তাই নামাজ, রোজা ও অন্যান্য ইবাদত বাকি এগার মাসেও চালু রাখা চাই। কেননা, যিনি রমজানের রব, বাকি এগার মাসের রব তিনিই আল্লাহ।

লেখক : পরিচালক, বাংলাদেশ কওমী তরুণ লেখক ফোরাম
[email protected]

 

Wordbridge School
Link copied!